অধিনায়ক না হয়েও শান্ত যেভাবে সিলেটের অধিনায়ক
সিলেটের খেলা চলছে বরিশালের বিপক্ষে। অধিনায়ক মাশরাফিকে একটা সময় মাঠের বাইরে চলে যেতে দেখা গেল। ক্যাপ্টেন্সির ক্যাপটা তখন পরে নিলেন নাজমুল হাসান শান্ত। ফিল্ডিং সাজিয়ে নিচ্ছেন, বোলারদের সঙ্গে কথা বলছেন।
সেই পঞ্চম ম্যাচের পর সিলেটের ষষ্ট ম্যাচে অধিনায়ক মাশরাফির জায়গা নিলেন মোহাম্মদ মিথুন। এবারের বিপিএলে প্রায় সময়ই শান্তকে দেখা গেছে মিডঅফ কিংবা মিডঅনে দাঁড়াতে, বোলারদের সঙ্গে পরামর্শ করতে। এদিনও দেখা গেল তাই। অধিনায়কের নাম না জেনে খেলা দেখতে আসা যেকোন দর্শক ভেবে বসতে পারেন, ৯৯ জার্সি পরনে থাকা ওই শান্তই বুঝি অধিনায়ক!
সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি মাঠের বাইরের কার্যক্রমে ইতোমধ্যেই বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুক্রবারের ম্যাচেই যেমন তারা নামল বাংলায় নাম ও নাম্বার লেখা জার্সি পরে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রবেশের কারণেই এমন উদ্যোগ। বিপিএলে অগোছালো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ভিড়ে কুমিল্লা ও রংপুরের মতো সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজিও দিচ্ছে ভালো কিছুর সুবাস। সেই সিলেটই কিনা সোজাসাপ্টা সিদ্ধান্ত না নিয়েই চমকে দিয়েছিল টুর্নামেন্টের শুরুতেই। যখন তারা সহ-অধিনায়কের নামটা লিখেছিল মোহাম্মদ মিথুন।
আনফিট না হলে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে যিনি এই ভার সামলাবেন, তিনি শান্তই হওয়া উচিত নয় কী! জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করে এলেন এই বিপিএলের আগেই। যেখানে নিউজিল্যান্ড সিরিজের সময় নিজেই তিনি বলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্বের জন্য প্রস্তুত। অধিনায়কত্ব নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করতে একটুও দ্বিধাবোধ করেননি সংবাদমাধ্যমে।
তাকে কেন করা হয়নি সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক, প্রশ্নটার উত্তর দিয়েছিলেন সেদিন এক সাক্ষাৎকারে দলটির প্রধান কোচ রাজিন সালেহ। সেই উত্তরে নিজে থেকেই একটা সময় বলে দিলেন, এখানে আসলে নেগেটিভ কিছু ভাবার কোনও কারণ নেই। শান্তকে অধিনায়ক করাটা এতটাই সোজাসাপ্টা সিদ্ধান্ত, তিনি নিজেও জানেন কেন তা করা হয়নি, এ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তার জন্ম হওয়াই স্বাভাবিক। আসল কারণটা বলতে গিয়ে রাজিন বলেছিলেন, ‘এটা আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাদের ওনারদেরকে। আসলে দেখেন ওনাররা চান শান্ত রান করুক, চাপ ছাড়া ক্রিকেট খেলুক। এজন্যই তাদের এই সিদ্ধান্ত শান্ত যেন ক্যাপ্টেন্সি না করে। ও যেন ওর মতো খেলতে পারে। ও যেন পারফর্ম করে দিতে পারে আমাদের। ডিসিশনটা এ কারণেই, এছাড়া নেগেটিভ কোনও কিছু চিন্তা করার নেই।’
যিনি জাতীয় দলের হয়ে তিন ফরম্যাটেই অধিনায়কত্ব করতে আগ্রহী। যিনি নেতৃত্ব দেওয়া উপভোগ করেন। যিনি জাতীয় দলের নেতা হওয়ার ভার সামলাতে পারেন, তাকে অধিনায়কত্বের চাপ কাবু করে ফেলবে? প্রশ্ন তবু থেকেই যায়। অবশ্য রাজিন যে কারণটা বললেন, তাতেও সফলতার মুখ এখনও দেখতে পায়নি সিলেট। ৬ ম্যাচে শান্তর ব্যাট থেকে যে সিলেট পায়নি ৭২ রানের বেশি। সেটিও বাঁহাতি এই ব্যাটার এনেছেন একশর কম স্ট্রাইক রেটে।
শান্তকে অধিনায়ক না বানানোর সিদ্ধান্তটা খালেদ মাহমুদ সুজনকেও অবাক করেছিল। বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টেরের বিপিএলের মঞ্চে এখনকার পরিচয় অবশ্য দুর্দান্ত ঢাকার প্রধান কোচ। সেই ভূমিকায়ই কথা বলতে এসে শান্তর ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘আমিও একটু অবাক হয়েছি। শান্ত যেহেতু জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক, সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফর করে আসল, সেখানে শান্তর অধিনায়কত্ব করাই মনে হয় ভালো হতো। আমি যদি হতাম, তাহলে সেটাই চিন্তা করতাম। আমি জানি না কারণটা কী কারণ মাশরাফিকে নেতৃত্ব দিতে হলো। মাশরাফি লিডার হিসেবে খেলতে পারবে না এমন তো কোন কথা নেই। কিন্তু শান্ত বর্তমান জাতীয় দলের অধিনায়ক, আমি হলে কারেন্ট ক্যাপ্টেনকেই চিন্তা করতাম।’
সুজনের দল দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে শান্তকে সরব দেখা গেছে মিথুনের অধীন সিলেট দলেও। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে মিথুনই জানিয়েছেন, শান্তকে তিনি বলেছেন মাঝেমধ্যে অধিনায়কত্বের ক্যাপটা পরে নিতে। মিথুন বলেন, ‘আমি শান্তকে বলেছিলাম ও যেন মাঠে চার্জটা নেয়। বোলারদের সঙ্গে কথা বলা, ফিল্ড প্লেসমেন্ট- এটা সবসময় আমার একার পক্ষে সম্ভব না। আমি ওকে বলেছিলাম ফিল্ডিংয়ের সময় ও যেন ক্যাপ্টেন্সির রোলটা প্লে করে। অবশ্যই আমরা ডিসকাস করেই ডিসিশন নিব, কিন্তু ও যদি কোনও কিছু ফিল করে সেটা যেন এসে আমাকে বলে। এবং আমি ওর উপরে পুরোপুরি ট্রাস্ট করি।
ফিল্ডিংয়ে দল চালনায় শান্তকে অংশ বানানোতে লাভই দেখেন মিথুন, ‘আমরা সবাই জানি শান্তর আন্তর্জাতিক ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে। তো ওর মতো একজনকে অবশ্যই আমার ব্যবহার করতে হবে মাঠের মধ্যে। উইকেটকিপারের জায়গা থেকে সবসময় আমার বোলারের সঙ্গে কথা বলাও কঠিন। ওর ভালো ক্রিকেটীয় নলেজ আছে। আমি চেষ্টা করেছি ওর কাছ থেকে যতটুকু ফিডব্যাকটা নেওয়া যায়।’
শান্ত আপাতত অধিনায়ক না হয়েও সিলেটের লিডারশিপ গ্রুপের অংশ। তবে আপাতত অধিনায়কত্বের চেয়ে নিজের রান না পাওয়াটাই তার কাছে বড় চিন্তার কারণ হবে।