কেসি, আলেয়ার বীরত্বে আফ্রিকার রাজা আইভরি কোস্ট
ফুলটাইম স্কোর: নাইজেরিয়া ১-২ আইভরি কোস্ট
ফাইনালে ওঠার রাস্তাটা তাদের জন্য ছিল বড়ই দুর্গম। ঘরের মাঠে গ্রুপ রাউন্ডে মাত্র এক ম্যাচ জিতে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কা জেগেছিল; গ্রুপে তৃতীয় সেরার চার ঘরের শেষ জায়গা দখল করে নকআউটের প্রতি ম্যাচেই কঠোর পরীক্ষা দিতে হয়েছে, সেমি-ফাইনালের আগের দুই ম্যাচেই ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে অতিরিক্ত সময়ের পর। সেই আইভরি কোস্ট ফাইনালেও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখল, স্বাগতিকরা তাই তৃতীয়বারের মত পরল আফ্রিকা সেরার মুকুট। প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকেও ফ্রাঙ্ক কেসি ও সেবাস্তিয়ান আলেয়ারের গোলে তৃতীয়বারের মত আফ্রিকার রাজা আইভরি কোস্ট।
তিন ডিফেন্ডার নিয়ে সাজানো নাইজেরিয়ার রক্ষণভাগকে ম্যাচের শুরু থেকেই চেপে ধরেছিল আইভরি কোস্ট। একের পর এক ফ্রি-কিক আদায় করে নাইজেরিয়ার ওপর মনস্তাত্ত্বিক একটা চাপ ধরে রেখেছিল স্বাগতিকরা। গুছিয়ে নিতে নিজেদের মিনিট বিশখানেক সময় নিলেও এরপর ম্যাচে সাম্যাবস্থা ফেরায় নাইজেরিয়া। সেখান থেকেই ৩৮ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় সুপার ঈগলরা। কর্নার থেকে মাথা ছুঁইয়ে আসরে নিজের পঞ্চম গোল পেয়ে যান নাইজেরিয়া ডিফেন্ডার উইলিয়াম ট্রুস্ট-একোং। প্রথমার্ধে স্বাগতিকরা এরপর আর কোনও সুযোগ তৈরি করতে না পারলে এগিয়ে থেকেই শেষ করে নাইজেরিয়া।
স্রোতের বিপরীতেই যে পিছিয়ে পড়েছে সেটা মাথায় রেখেই নিজেদের সর্বস্ব দিয়েই যেন দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শুরু করে আইভরি কোস্ট। ৫০ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে প্রায় গোল পেয়েও যাচ্ছিল তারা। বক্সে ওসিমহেন ঠিকভাবে কর্নার দূরে ঠেলে দিতে না পারলে আদিংরা আবারও বক্সে ক্রস বাড়ায়; সেখান থেকে নোয়াবালির ক্লিয়ারেন্স কেসিকে খুঁজে পেলেও সেবার তার প্রচেষ্টা গোল লাইন থেকে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। তবে কেসিকে বেশিক্ষণ আর দমিয়ে রাখা যায়নি। ৬১ মিনিটের মাথায় নোয়াবালি দারুণ এক সেভ করলেও পরের মিনিটেই গোলের দেখা পেয়ে যান কেসি। আবারও সেই কর্নার থেকেই সুযোগ পেলে এবার সরাসরি হেডে বল জালে জড়ান তিনি। দুটো পরিবর্তন করে আক্রমণের ধারা বজায় রেখে আইভরি কোস্ট যেন ক্ষণেক্ষণেই দিয়ে যাচ্ছিল আরও একটি গোলের বার্তা।
৭৪ মিনিটের মাথায় ডান প্রান্ত থেকে কেসির বাড়ানো ক্রসে দারুণ এক ওভারহেড কিকে বল জালে জড়ানোর চেষ্টা করলে আলেয়ারের প্রচেষ্টা কয়েক ইঞ্চির জন্য মিস করে যায় জাল। তবে কেসির মত তাকেও দমিয়ে রাখা যায়নি। ক্যান্সার জয় করে জীবনযুদ্ধেই যিনি ফিরে এসেছেন, খেলার মাঠে তার ফেরাটা আর আটকাতে পারেনি নাইজেরিয়া। লাইন থেকে বল ভেতরে রেখে আদিংরার বাড়ানো ক্রসে পা বাড়িয়ে গোলের দেখা পেয়ে যান আলেয়ার। টুর্নামেন্টে বারবার ফিরে আসা স্বাগতিকরা ফাইনালেও ফেরার গল্প লিখলে নাইজেরিয়াও চেষ্টা করেছিল শেষ একটা কিছু করে দেখানোর। বদলি নামা ইহিয়ানাচো যোগ করা সময়ে গোলমুখে প্রচেষ্টা চালালেও এনদিকা পা বাড়িয়ে তাকে প্রতিহত করেন। শেষমেশ আর ম্যাচে ফেরা হয়নি তাদের। ঘরের মাঠে তাই রূপকথা রচনা করে আফ্রিকার রাজা আইভরি কোস্ট।