বার্সা-রিয়ালকে কাঁপিয়ে দেওয়া সেভিয়া কেন রেলিগেশনের লড়াইয়ে?
খুব বেশি দিন আগের কথাও নয়।
এই তো সেদিনই, ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর নাম নিতে গেলে সেভিয়ার নাম নিতেই হতো। শুধু মাঠের পারফরম্যান্সই নয়, সেভিয়া ক্লাবটা পরিচালিত হতো দারুণভাবে। কমদামে অখ্যাত খেলোয়াড় কিনে তাদের সেরাটা বের করে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে সিদ্ধহস্ত ছিল ক্লাবটি। আর শুধু বেচাকেনাই নয়, সেভিয়া খেলোয়াড় বের করে আনতো নিজেদের একাডেমি থেকেও। গত দুই দশক ধরে এভাবেই চলছিলো ক্লাবটি।
মাঠের পারফরম্যান্সও আসছিলো মোটামুটি ভালোই। একের পর এক ইউরোপা লিগ জয়, লা লিগার সেরা চারে থাকা, বড় দলগুলোকে নিয়মিত চ্যালেঞ্জ করা, সব মিলিয়ে সেভিয়াকে মাঝারি থেকে বড় দলের কাতারেই রাখতে হতো। কিন্তু আসল সমস্যাটা হলো এর পরে। দুই মেয়াদে স্পোর্টিং ডিরেক্টরের পদে থাকা মঞ্চির সাথে বিচ্ছেদ ঘটে সেভিয়ার। মঞ্চি চলে যান অ্যাস্টন ভিলায়। কিন্তু যাওয়ার সময়ে সেভিয়ার জন্য কোন তরুণ সম্ভাবনাময় দল রেখে যেতে পারেননি তিনি। এর পরিবর্তে, সেভিয়ার স্কোয়াড ছিল তুলনামূলক বয়স্ক এবং কম পারফরমিং খেলোয়াড়ে ভর্তি, যাদের বেতনও ছিল একটু বেশি। এর ফলাফলটা দৃশ্যমান হচ্ছে আঠারো মাস পরে। দুই-তিন মৌসুম আগেও যাদের টপ ফোর ছিল নিশ্চিত, সেই দলটাই এখন লড়ছে রেলিগেশন এড়ানোর জন্য।
[আলাভেসের কাছে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছে সেভিয়া; ছবি: গেটি ইমেজেস]
আলাভেসের কাছে ঘরের মাঠে ৩-২ ব্যবধানে পরাজয়ের মাধ্যমে সেভিয়া শেষ করেছিল তাদের লা লিগার ২০তম ম্যাচডে। রেলিগেশন জোন, অর্থাৎ পয়েন্ট টেবিলের শেষ তিনটা জায়গা থেকে তাদের ব্যবধান ছিল মাত্র ১ পয়েন্টের। ২৩তম ম্যাচডে শেষেও অবস্থার খুব পরিবর্তন হয়নি, ঝুলিতে বিশ পয়েন্ট নিয়ে রেলিগেশন জোন থেকে সেভিয়া রয়েছে মাত্র ৩ পয়েন্টের দূরত্বে। লা লিগার চলতি মৌসুমে সেভিয়ার জয় সংখ্যা (৪) তাদের কোচের সংখ্যার (৩) চেয়ে মাত্র ১ বেশি, আর পরাজয় সংখ্যায় তাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শুধুই গ্রানাডা এবং আলমেরিয়া।
সবশেষ দুটো ম্যাচের মধ্যে একটা জয় ও একটা ড্র পেয়ে যাওয়ায় পয়েন্ট টেবিলে সেভিয়ার অবস্থানটা একটু ভদ্রস্থ দেখাচ্ছে বটে, কিন্তু মাত্র তিন সপ্তাহ আগেও ইতিহাস ছিল সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে। প্রথম বিশ ম্যাচে সেভিয়ার পয়েন্ট ছিল ১৬। সর্বশেষ ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে, লা লিগার প্রথম বিশ ম্যাচ থেকে ১৬ এর চেয়ে কম পয়েন্ট (১৩) অর্জন করেছিল সেভিয়া। ওই মৌসুমে অবনমিত হয় দলটি।
২০১২-১৩ মৌসুম থেকে আজ অবধি লা লিগার মাত্র ৮টা দল প্রথম ২০ ম্যাচ শেষে ঠিক ১৬ পয়েন্ট অর্জন করেছে, এবং বলা বাহুল্য, এর মধ্যে পাঁচটা দলই মৌসুম শেষে নেমে গেছে নিচের স্তরে।
[ছবি: অপ্টা অ্যানালিস্ট]
তবে সেভিয়া নিজেদেরকে একটু হলেও সৌভাগ্যবান ভাবতে পারে। অন্তত চলতি মৌসুমে, গ্রানাডা (১২ পয়েন্ট) এবং আলমেরিয়ার (৬ পয়েন্ট) অবনমন নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে বাকি একটা স্থান থেকে বাঁচার জন্য লড়তে হবে সেভিয়াকে। কে জানে, হয়তো কোন না কোনভাবে শেষ পর্যন্ত অবনমনের খাঁড়ায় পড়তে হবে না তাদের, কিন্তু প্রশ্নটা হলো, সেভিয়ার এই অবস্থার কারণ কী?
সমস্যাটা মূলত শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে সেভিয়ায় মঞ্চির প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে। রোমাতে মঞ্চির সময়টা ভালো কাটেনি, সফলতাও আসেনি সেভাবে। তবে সেভিয়াতে ফেরার পরে মঞ্চি চেয়েছিলেন দলটাকে শিরোপার আরো কাছাকাছি নিয়ে যেতে। অভিজ্ঞ এবং নিজের সেরা সময়ের কাছাকাছি রয়েছেন, এমন খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল তার।
এই লক্ষ্যেই, দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদী চুক্তির দিকে নজর দেওয়া হয়। ফার্নান্দো, লুক ডি ইয়ং, ইভান রাকিতিচ, পাপু গোমেজ, মার্কোস আকুনা, লুক ডি ইয়ং, হেসুস কোরোনা, অ্যান্থনি মার্শিয়াল, অ্যালেক্স টেলেস, ইসকো, এরিক লামেলার মতো খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানো হয় ২০১৯ থেকে ২০২২ এর মধ্যে। এর মধ্যে অল্প কয়েকজন ভালো করেছিলেন, কয়েকজনকে পুনরায় বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছিল সেভিয়া, তবে বেশিরভাগই ছিলেন হতাশার প্রতিশব্দ হয়ে।
তবুও সেভিয়া সাফল্য পেয়েছিল। সাফল্য বলতে ‘৫০ এর দশকের পরে প্রথমবারের মতো টানা তিন মৌসুম লা লিগার সেরা চারে থাকা। আর এর পেছনে মূল কৃতিত্বটা ম্যানেজার হুলেন লোপেতেগি এবং দলের দুর্দান্ত রক্ষণভাগের। ২০২০-২১ মৌসুমটা তারা শেষ করে তৃতীয় স্থানে থাকা বার্সেলোনার চেয়ে মাত্র দুই পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে। ২০২১-২২ এর প্রথমভাগে শিরোপার দৌড়ে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে শুধু সেভিয়াই ছিল।
[জুলস ক্যুন্দে ও দিয়েগো কার্লোস; ছবি: গেটি ইমেজেস]
সেন্টারব্যাক হিসেবে জুলস ক্যুন্দে এবং দিয়েগো কার্লোসকে পেয়েছিল সেভিয়া, আর সাথে পোস্টের নিচে ইয়াসিন বোনোকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল ইউরোপের অন্যতম নির্ভরযোগ্য রক্ষণ। পেছন থেকে খেলা শুরু করার বিদ্যাটা ভালোভাবেই রপ্ত করেছিল লস পালাঙ্গানাস, একই সাথে গোল হজমেও দেখাতে শুরু করে কৃপণতা। ২০১৯ এর আগস্ট থেকে ২০২২ এর জুন মাস পর্যন্ত সময়কালে, ইউরোপের শীর্ষ [আঁচ লিগের ৩২টা দল সেভিয়ার (১৬০টি, প্রতি মৌসুমে ৫৩.৩টি) চেয়ে বেশি গোল করেছিল। কিন্তু এই একই সময়কালে, রিয়াল মাদ্রিদ (৮৪), প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন (৮৮), ম্যানচেস্টার সিটি (৯৩) এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (৯৫) ছাড়া প্রতিটি দলই সেভিয়ার (৯৭) চেয়ে বেশি গোল হজম করেছিল। পাশাপাশি, ম্যানচেস্টার সিটি (৫৭) এবং রিয়াল মাদ্রিদ (৫২) ব্যতীত কোন দলই হুলেন লোপেতেগির দলের (৫১) চেয়ে বেশি ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হয়নি।
[ছবি: অপ্টা অ্যানালিস্ট]
তবে জুলস ক্যুন্দে আর দিয়েগো কার্লোসের মতো দুজন দারুণ সেন্টারব্যাককে বড় দলগুলোর নজর থেকে বেশিদিন ‘বাঁচিয়ে’ রাখা যে সম্ভব নয়, সেভিয়াও সেটা জানতো। সেভিয়ার তাই প্রয়োজন ছিল সমমানের দুজন সেন্টারব্যাকের। কিন্তু কম দামে এমন ভালো সেন্টারব্যাক পাওয়াটা দুরূহ, তাই ২০২২ এর প্রাক-মৌসুমে দুজনেই যখন ক্লাব ছাড়লেন, সেভিয়ার দুর্দিন শুরু হলো। যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল দলটি, ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকলো সেটা।
২০২১-২২ মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগে, যখন সেভিয়ার লিগ শিরোপার স্বপ্নটা দ্রুত বিলীন হয়ে যেতে থাকলো, তখন তারা দলের আক্রমণের শক্তি বাড়ানোর দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে শুরু করে। রক্ষণের শক্তিকে এক প্রকার ‘বিসর্জন’ দিয়েই ফরোয়ার্ডদের ওপর বিনিয়োগ করতে শুরু করে দলটি, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি একেবারেই। ধারে দলে আসেন ক্যাসপার ডোলবার্গ, তবে ঐ বছরের ডিসেম্বরেই তার সাথে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় দলটি। কারণ, ততদিনেও গোলের খাতায় টালি বসাতে পারেননি তিনি। ইসকোর চুক্তিও বাতিল করা হয় বড়দিনের আগে আগে, ২০২৩ এর জানুয়ারিতে ইস্তাম্বুল বাসাকশেহিরে ধারে পাঠানোর আগে আদনান ইয়ানুজাই লা লিগার মাত্র একটা ম্যাচের শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন।
[ছবি: অপ্টা অ্যানালিস্ট]
সেভিয়ার দুরবস্থা বোঝা যায় প্রত্যাশিত গোলের হিসেব থেকেই। পক্ষের চেয়ে বিপক্ষেই এক্সপেক্টেড গোল বেশি হতে থাকে দলটির। স্পষ্ট হয়, সমস্যাটা আক্রমণ-রক্ষণ দুই ক্ষেত্রেই।
২০২২-২৩ মৌসুমের শুরু থেকেই একটা হেরে যাওয়া যুদ্ধে লড়তে থাকেন সেভিয়ার ম্যানেজার হুলেন লোপেতেগি। ক্যুন্দে-কার্লোসের পরিবর্তে দলে আসা সেন্টারব্যাকরা পায়ের নিচের মাটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ফরাসি সেন্টারব্যাক টাঙ্গাই নিয়ানজু নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন, এবং এই মৌসুমেও তিনি খেলেছেন লা লিগার মাত্র তিনটা ম্যাচ। একের পর এক চোটের সাথে লড়তে থাকা মারকাও এখন পর্যন্ত মাত্র আট ম্যাচ খেলেছেন লিগে।
প্রথম দশ ম্যাচে মাত্র একটা জয়, দলের এই দুরবস্থার মাঝে স্বাভাবিকভাবেই চাকরি খোয়াতে হয় কোচ হুলেন লোপেতেগিকে। তার পরিবর্তে কোচের আসনে বসেন হোর্হে সাম্পাওলি। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং কোচের ট্যাকটিকাল নির্দেশনাগুলো খেলোয়াড়দের কাছে উপস্থাপিত হচ্ছিল বেশ জটিল রূপে। খেলোয়াড়দের মধ্যে অসন্তোষের গুঞ্জন শুরু হয়, ফলাফল হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চে বরখাস্ত হন কোচ সাম্পাওলি। সেভিয়া তখন রেলিগেশন জোন থেকে মাত্র দুই পয়েন্ট ওপরে।
সাম্পাওলির বিদায়ের পরে সেভিয়ার কোচের আসনে বসেন হোসে লুইস মেন্দিলিবার। শুরুটা বেশ ভালো হয়েছিল তার, সেভিয়াকে রেলিগেশন জোন থেকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যান তিনি, জেতান সপ্তম ইউরোপা লিগ।
কিন্তু হ্যাঁ, মেন্দিলিবারের সুদিনও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মেন্দিলিবার এসেছিলেন মঞ্চির পছন্দে। কিন্তু তার খেলানোর ধরণ পছন্দ হয়নি নতুন ক্রীড়া পরিচালক ভিক্টর ওর্টার। বাতাসে ভাসতে শুরু করে কোচকে বরখাস্ত করার গুঞ্জন। কিন্তু সব জল্পনাকল্পনার পরও, মেন্দিলিবার টিকে যান। হয়তো না টিকলেই ভালো হতো। সেভিয়া কোচ হিসেবে পেতে পারতো মার্সেলো গ্যালার্দোকে, মেন্দিলিবারও নিজের গন্তব্য ঠিক করার সময় পেয়ে যেতেন।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রথম এগারো ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটো জয়ের পর মেন্দিলিবারকে ছাঁটাই করে সেভিয়া। কিন্তু মার্সেলো গ্যালার্দো ততদিনে চলে গেছেন সৌদি আরবে। ওর্টা তাই নিয়ে আসেন দিয়েগো আলোনসোকে। এর আগে, ইন্টার মায়ামির হয়ে আলোনসোর পরিসংখ্যান তেমন ভালো ছিল না, উরুগুয়েকে নিয়ে পেরোতে পারেননি ২০২২ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের বাধা। ততদিনে ওর্টার সাথে সেভিয়ার সভাপতি পেপে ক্যাস্ত্রো এবং সহ-সভাপতি হোসে মারিয়া দেল নিদো কারাস্কোর সম্পর্কের অবনতির কথাও চাউর হয়ে যায় গণমাধ্যমে।
একের পর এক ক্রস করে যাওয়া, এবং যেকোন একটি ক্রস থেকে গোলের জন্য আশা করতে থাকা, সেভিয়ার খেলার এই ধরণে খুশি ছিলেন না কেউই। যদিও এর কারণও ছিল, মাঠের মাঝ অংশে যথেষ্ট সৃজনশীল আক্রমণ করতে পারছিলো না সেভিয়া, বরং আক্রমণের সিংহভাগই আসছিলো দুই উইং থেকে। চলতি মৌসুমে লা লিগার একমাত্র ক্লাব হিসেবে মাঠের মাঝ অংশ দিয়ে বিশ শতাংশের কম আক্রমণ চালনা করেছে তারা (১৯.৫ শতাংশ)। এবং অবশ্যই, এই কৌশলটা কোন ভালো ফলাফল বয়ে আনেনি।
[ছবি: অপ্টা অ্যানালিস্ট]
সেভিয়ার ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় লা লিগার একটা ম্যাচও জিততে পারেননি দিয়েগো আলোনসো। ক্লাবের ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় কোচ হিসেবে লিগের প্রথম আট ম্যাচে জয়শূন্য থাকলেন তিনি। লা লিগার ইতিহাসের দ্বিতীয় কোচ হিসেবে নিজের প্রথম চার ম্যাচে ড্র করার নজিরও স্থাপন করেন আলোনসো। চাকরিটা তাই খোয়াতে হয় তাকেও, নতুন ম্যানেজার হিসেবে আসেন কিকে সানচেজ ফ্লোরেস। খুব ভালো বিকল্প হয়তো তিনি ছিলেন না, তবে স্পেনে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা একটু হলেও এগিয়ে রেখেছিল তাকে।
সেভিয়ার পতনের আঘাতটা ঠিক কতটা গুরুতর, সেটা আরো একটা প্যারামিটারে দেখা যাক। ২০২২-২৩ মৌসুমের শুরু থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি অবধি লা লিগাতে শুধু আলমেরিয়া (৪৭), কাদিজ (৫৭), সেল্টা ভিগোই (৬০) সেভিয়ার (৬৫) চেয়ে কম পয়েন্ট অর্জন করেছে। অপ্টা পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়েও ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে দলটার। ২০২২ সালের জুলাইতে যেখানে তাদের অবস্থান ছিল ১৪তম, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সেটা পরিণত হয় ৭৪তম-তে।
[ছবি: অপ্টা অ্যানালিস্ট]
এর একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হতো। আর সেই প্রতিক্রিয়া দেখানোর উপায় হিসেবে ওর্টা বেছে নিয়েছেন দলে তরুণ রক্তসঞ্চালনকে। সেভিয়ার দ্বিতীয় দল সেভিয়া অ্যাটলেটিকোর প্রতিভাবান স্ট্রাইকার ইসাক রোমেরো রয়েছেন মূল দলে ঢোকার খুব কাছাকাছি। ব্যাপারটা আরো আগেই ঘটতে পারতো, হয়তো ২০২১-২২ মৌসুমেই, যদি না বড় চোটে পড়তেন রোমেরো। তবে চোট কাটিয়ে উঠেও রোমেরো ধরে রেখেছেন তার গোলের ক্ষুধাটা। গত বছরই সেভিয়া অ্যাটলেটিকোর হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেছেন তিনি। সমর্থকরাও এই তেইশ বছর বয়সী স্ট্রাইকারকে দলে চাইছিলেন। তবে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল লা লিগার খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশনের নীতিমালা। মূল দলের কেউ একজন বিদায় নিলেই কেবল রেজিস্ট্রেশন করা যাবে রোমেরোর। ৩৬ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফার্নান্দোকে তাই বিদায় জানাতে হলো স্প্যানিশ ক্লাবটির। কোপা দেল রের শেষ ষোলোতে গেতাফের বিপক্ষে রোমেরোর জোড়া গোলেই ৩-১ ব্যবধানে জয় পায় সেভিয়া, হয়তো রাফা মিরের বিদায়ঘণ্টাও বেজে গেল তাতে।
সাম্প্রতিক সময়ে যে খেলোয়াড়দের স্বাক্ষর করিয়েছেন ওর্টা, তাদের প্রত্যেকেই ইসাক রোমেরোর চেয়ে বয়সে ছোট। লুসিয়েঁ আগুমে (২১ বছর বয়সী, ক্রয় করার সুযোগসহ ধারে এসেছেন), মাতেও মেইজা (২০), স্তানিস ইদুম্বো মুজাম্বো (১৮) এবং হানিবাল মেজব্রি (২০, ক্রয় করার সুযোগসহ ধারে এসেছেন)। দলের মধ্যে এই নতুন রক্ত সঞ্চালন হওয়াটা সেভিয়ার জন্যও খুব দরকার ছিল। গত কিছুদিন ধরেই সেভিয়ার দলটা বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছিলো। নভেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসভির বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে পরাজয়ের ম্যাচের শুরুর একাদশে সেভিয়ার খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ৩২ বছর ১৯ দিন, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসেই যা সবচেয়ে বয়স্ক একাদশ। লা লিগাতেও একই রেকর্ড গড়েছিল দলটি, চলতি মৌসুমে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে (৩১ বছর ১২৭ দিন)।
[ছবি: অপ্টা অ্যানালিস্ট]
তবে তরুণদের দিকে ঝুঁকে পড়াটা ওর্টার জন্য আসলেই প্রয়োজন ছিল। বয়স্ক খেলোয়াড়দের শুধু পারফরম্যান্স যে ভালো হচ্ছিল না, তা নয়, পাশাপাশি তাদের বেতনও ছিল অনেকটা বেশি। এই উচ্চ বেতন গ্রহণ আর লা লিগার স্যালারি লিমিটের কারণে তরুণদের রেজিস্টার করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল সেভিয়াকে। আর হোয়ান জর্দান, এরিক লামেলা, অলিভার তোরেস, আদনান ইয়ানুজাই, মারিয়ানো দিয়াজ, রাফা মিরদের মতো খেলোয়াড়দের স্কোয়াড থেকে সরাতে না পারলে দলে নতুন আনা অনূর্ধ্ব তেইশের খেলোয়াড়দেরকে বি টিমে রেজিস্টার করা ছাড়া কোন পথও খোলা ছিল না তাদের জন্য। তাতে অবশ্য ম্যাচ খেলাতে সমস্যা হচ্ছে না, তবে এই পরিস্থিতিকে আর যাই হোক, আদর্শ বলা যায় না। একাডেমির গোলরক্ষক আলফোনসো পাস্তোরের সাথে চুক্তি বাতিল করতে হয়েছে সেভিয়া অ্যাটলেটিকোর হানিবালের বেতন দেওয়ার জন্য।
তবে তরুণ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের দলে টানা, তাদের ঘিরে দল সাজানোর এই প্রক্রিয়া কিছুদিন আগে শুরু করলে হয়তো তাদের একাডেমির গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় কার্লোস আলভারেজকে বিনামূল্যে লেভান্তের কাছে ছেড়ে দিতে হতো না।
সব মিলিয়ে, সেভিয়ার সামনের পথটা খুব একটা সহজ নয়। সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা কিছু বয়স্ক খেলোয়াড়ের সাথে সদ্য যৌবনে পা রাখা কিছু অনভিজ্ঞ তরুণ, সেভিয়ার সুসময়টা আপাতত বহুদূরের পথ বলেই মনে হচ্ছে। শিরোপার প্রত্যাশা তো দূরের কথা, আপাতত নিজেদেরকে টেবিলের মাঝামাঝি অংশে নিতে পারলেই হয়তো খুশি থাকবে লস পালাঙ্গানারা।