রান বন্যার দিনে জ্যাকস-তাণ্ডবের পর সাকিব, মাহেদী, সোহানরা জানালেন - তারাও পারেন
বিপিএল ২০২৪
১ম ম্যাচ (টস - খুলনা/ব্যাটিং)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস - ২৩৯/৩, ২০ ওভার (জ্যাকস ১০৮, লিটন ৬০, মঈন ৫৩*, শহিদুল ২/৪৯, সৈকত ১/২৩)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স - ১৬৬, ১৬.৩ ওভার (তামিম ৪১, সৈকত ৩৬, ব্রাউন ৩৬, রিশাদ ৪/২২, মঈন ৪/২৩, মোস্তাফিজ ২/৪৬)
ফলাফল - কুমিল্লা ৭৩ রানে জয়ী
২য় ম্যাচ (টস - রংপুর/ব্যাটিং)
রংপুর রাইডার্স - ২১৯/৫, ২০ ওভার (সাকিব ৬৯, মাহেদী ৬০, সোহান ৩২, উড ৩/১৯, রানা ১/৩৩, নাসুম ১/৫৫)
খুলনা টাইগার্স - ১৪১, ১৮.২ ওভার (হেইলস ৬০, উড ২০, নাসুম ১৭, তাহির ৫/২৬, সাকিব ২/৩০, নিশাম ১/৫)
ফলাফল - রংপুর ৭৮ রানে জয়ী
ঘনিয়ে আসছে প্লে-অফ, জেগে উঠছে কুমিল্লা
বিপিএল মানেই কুমিল্লার দাপট, গত কয়েক আসর ধরেই তাই হয়ে আসছে। প্রথম ম্যাচ হেরেও তাই তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারে, তারা ফিরবে। প্লে-অফ যত ঘনিয়ে আসছে কুমিল্লার সেই রুদ্রমূর্তির দেখা মিলছে। যেই লিটনের ব্যাটে রান-খরা ছিল, সেই লিটন আজ যেন ফিরে পেলেন নিজেকে। আর লিটনের দেখানো পথে হেঁটে দুই ইংলিশ উইল জ্যাকস আর মঈন আলী তো রীতিমত তাণ্ডব চালালেন। আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে জ্যাকস আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন কুমিল্লার হয়ে বিদেশিরা হতাশ করেন না। ৫৩ বলে ১০৮* রানের অসামান্য এক ইনিংসে চট্টগ্রামকে প্রথমার্ধেই আসলে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন জ্যাকস।
২৪০ রানের লক্ষ্য যে ছোঁয়ার বাইরে থাকবে তা অনুমেয়, তবে চট্টগ্রাম যে লড়াইও করতে পারবে না সেটা আসলে বোঝা যায় না। অথচ জশ ব্রাউন, তানজিদ হাসান তামিম ৮০ রানের দারুণ এক ওপেনিং জুটি গড়ে ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় তাই বিশাল লক্ষের আশেপাশেও চট্টগ্রামের যাওয়া হয়নি। বলা ভালো, দুই স্পিনার রিশাদ, মঈনের ঘূর্ণিজালে আটকে পালানোর রাস্তা আর খুঁজে পায়নি ঘরের মাঠে এবার প্রথম খেলতে নামা ফ্র্যাঞ্চাইজিটা।
রাইডারদের রাজসিক জয়ে খুলনার শনি
অথচ টানা চার ম্যাচ জিতেই আসর শুরু করেছিল খুলনা। আল-আমিনের ওপর আজ কুমিল্লা যেভাবে স্টিমরোলার চালাল, তা যেন খুলনার হতাশাজনক এই দ্বিতীয় অধ্যায়ের সমার্থক। শীর্ষে থেকে উড়তে থাকা দলটাই এখন টানা চার হারে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে, ফরচুন বরিশালের নিচে নেমে এখন যে তাদের প্লে-অফ খেলা শঙ্কায়। খুলনার বেগতিক দশা এমনিতেই, বিপরীতে উড়ন্ত রংপুর। ফলাফলটা হল অনুমিতই।
আগের ম্যাচে সাকিব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ফর্মে। আর আজ রাজা ফিরলেন রাজার বেশেই। ২০ বলে আসরের দ্রুততম ফিফটিতে নিজেকে মেলে ধরলেন আপন আঙ্গিকে। নাসুমকে টেনে মেরে কাউ কর্নার দিয়ে যেই ছক্কাগুলো হাঁকালেন, তাতে যেন ক্যারিবিয়ান ছোঁয়ার দেখাও মিলল। সাকিবের দেখানো পথে হেঁটে শেখ মাহেদী, নুরুল হাসানরাও বললেন - জ্যাকস মহাশয়, আমরাও কম যাই না!
তবে দ্বিতীয়ার্ধে যা হল, সেটা নিয়ে রংপুরের শিবিরে আলাদা এক হাসির রেশ থেকে যাওয়ার কথা। বহুদিন ধরেই টি-টোয়েন্টির আঙিনায় রাজত্ব করা ইমরান তাহির বল হাতে আবারও বললেন, বুড়ো হাড়ের ভেল্কি আছে বৈকি! পাঁচ উইকেটের দারুণ স্পেলে সেই সাথে টি-টোয়েন্টিতে ৫০০ উইকেটের মাইলফলকটাও ছুঁয়ে ফেলেছেন।
রান প্রসবা চট্টগ্রামে টি-টোয়েন্টির জাগরণ
দুই ম্যাচেই আজ দেখা গেল রানের বন্যা। দিনের প্রথম ম্যাচটায় তো বিপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডই হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও তার ব্যত্যয় ঘটল না। বহুদিন ধরেই দর্শকরা এমন খেলাই হয়ত চাচ্ছিলেন। সেই সাথে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্যাটারদের এমন উইকেটে ব্যাট করে নিজের শাণিত করাটাও ভীষণ জরুরি। মনমত উইকেট পেয়ে দেশি ব্যাটাররা আজ হতাশ করেননি। রানের জন্য আকুপাকু করতে থাকা লিটন শুধু যে আজ আসরের প্রথম ফিফটি পেয়েছেন তাই নয়, সেই পুরনো স্ট্রোকপ্লের ফুলঝুরি ছুটিয়েই তা করেছেন। ম্যাচ হারলেও নতুন বলে তানজিদ তামিমও হতাশ করেননি।
তবে পরে সাকিব, নুরুল, মাহেদীরা যা করলেন তাতে আশাবাদী হতেই হয়। বিশেষ করে সাকিবের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। চোখের সমস্যা, অবসাদ - এমন অনেক কথাই তাকে নিয়ে বহু দিন ধরে হচ্ছে। নিজের ব্যাটিংয়ের সমস্যাটা কোথায় সেটা নিয়ে তিনি ভাবছেন, সেটাও খোলাসা করে জানিয়েছেন। আজ বোধহয় পণ করে নেমেছিলেন কিছু নিয়েই মাথা ঘামাবেন না। বল দেখলেন, সপাটে ব্যাট চালালেন, আর জানালেন - সাকিব আল হাসানের পেশির জোরটা নিঃশেষ হয়নি। মাহেদী, সোহানরাও বল টেনে মারায় দেখিয়েছেন সমান পারদর্শিতা। চট্টগ্রামের উইকেটে এরকম কয়েকটা দিন কাটাতে পারলে বাংলাদেশি ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাসটাও তুঙ্গে উঠতে হয়ত সময় লাগবে না।