সম্ভাবনাময় পেস পুষিয়ে দেবে পাঞ্জাবের মিডল অর্ডারের ঘাটতি?
এলেন কারা, গেলেন কারা
পাঞ্জাব যেসব দেশিদের ছেড়েছে, তার মধ্যে পরিচিত নাম শাহরুখ খান। তিন মৌসুম পর নয় কোটির শাহরুখের সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে ১১ কোটি ৭৫ লাখে কিনেছে হার্শাল প্যাটেলকে। সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা ভানুকা রাজপাকসেকে ছেড়ে দিয়ে রাইলি রুশোকে যুক্ত করেছে পাঞ্জাব। টপ অর্ডারে প্রয়োজন দেখছে না বলে ম্যাথু শর্টকেও আর রাখেনি। তার জায়গায় পাওয়ারপ্লে সমস্যার সমাধানে অস্ত্র বাড়াতে কিনেছে ক্রিস ওকসকে। দেশি লেগি মোহিত রাঠেকে ছেড়ে এনেছে একই ভূমিকার প্রিন্স চৌধুরীকে। দেশি আরও তিনজনকে বাদ দিয়ে পাঞ্জাব কিনেছে আনকোরা চার অলরাউন্ডারকে। যার মধ্যে শাশাঙ্ক সিংয়েরই শুধু আইপিএল অভিজ্ঞতা আছে।
সম্ভাব্য ১২
স্পিন অলরাউন্ডারের ভূমিকায় বিকল্প আছেন সিকান্দার রাজা। পেসে ব্যাকআপ এলিস ও তিন বছর পর আইপিএলে ফেরা ওকস। মিডল অর্ডারের বিদেশি অপশন রুশো।
১। বেইরস্টো
২। ধাওয়ান
৩। প্রাবসিমরান
৪। লিভিংস্টোন
৫। তাইড়ে/ হারপ্রিত
৬। জিতেশ
৭। কারান
৮। হার্শাল
৯। রাবাদা
১০। আর্শদীপ
১১। রাহুল চাহার
১২। ব্রার/ শাশাঙ্ক সিং
ব্যাটিং- দেশি মিডল অর্ডার ব্যাটারের অভাব, প্রয়োজন পড়বে অ্যাঙ্করের?
ইনজুরিতে গত আসর মিস করা জনি বেইরস্টো ফিরেছেন এবার। শিখর ধাওয়ানও মাঝপথে ইনজুরিতে পড়ে খেলতে পারেননি তিন ম্যাচ। গেলবার পাওয়ারপ্লেতে পাঞ্জাবের চেয়ে বেশি উইকেট আর একটি দলই হারিয়েছিল। কলকাতার ২৯ উইকেটের পেছনেই পাঞ্জাব ছিল ২৮ উইকেট নিয়ে। বেইরস্টো-ধাওয়ান জুটিতে আগামী আসরে পাওয়ারপ্লের দুর্গতি ফুরোনোর আশা করবে পাঞ্জাব। ২০২৩ আইপিএলে ওপেনিংয়ে সফল হওয়া সত্ত্বেও প্রাবসিমরান হয়তো নিজেকে খুঁজে পাবেন ওয়ান ডাউনে।
মিডল অর্ডারে লিভিংস্টোন, জিতেশের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আছে। অতি-আক্রমণাত্মক ক্রিকেটেই তো মনোযোগ ছিল পাঞ্জাবের। ডট বেশি হলেও চলবে, বাউন্ডারি চাই- এই মন্ত্রেই যেন খেলেছে পাঞ্জাব। যত বল খেলেছে, তার মধ্যে ৩৮.৯৯ ভাগই দিয়েছে ডট। সর্বোচ্চ ডট পার্সেন্টেজ থেকে যা মাত্র ০.৪৬ কম। বাউন্ডারি মারায় পাঞ্জাব ছিল আবার তৃতীয় স্থানে। ২০.৪৮ শতাংশ বলেই ছক্কা-চার মেরেছেন পাঞ্জাবের ব্যাটাররা। অর্থাৎ, ডটের হার যেমন তাদের ছিল সাত দলের থেকে বেশি, বাউন্ডারি মারার হারও ছিল সাত দলের থেকে বেশি।
অবশ্য সিঙ্গেল নিয়ে ইনিংসটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও তো গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জাব ১০০ বল খেললে তাতে ৩৩.৩৩ সিঙ্গেল বের করতে পেরেছে। এত কম সিঙ্গেল নেওয়ার হার ছিল না আর কোন দলেরই। এখানে পিছিয়ে থাকা পাঞ্জাব কী তাহলে অ্যাঙ্কর রোলে কাউকে খেলানোর কথা ভাববে, যিনি ইনিংসটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন একপাশ আগলে রেখে।
এমন ব্যাটারেরই তো বড্ড অভাব। এভাবে মাঝেমধ্যে ব্যাট করতে দেখা গিয়েছিল গেলবার কারানকে। ১৩ ম্যাচের ১০টিতেই বোলিং অলরাউন্ডার কারান ব্যাট হাতে নেমেছিলেন পাঁচ কিংবা ছয় নাম্বারে। ১৩৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৭৬ রান। নিশ্চিত বেইরস্টো-লিভিংস্টোনের সাথে বিদেশি এক পেসার ধরে নিলে কারানের জায়গায়ই খেলাতে হবে অন্য কোন বিদেশি ব্যাটারকে।
বোলিংয়ে শক্তি না কমাতে কম্বিনেশনের কারণে আগ্রাসী রুশোকে শুরু থেকেই হয়তো খেলাবে না। সিকান্দার রাজাকে লিভিংস্টোনের বদলি হিসেবেই ভাবার কথা। তাহলে দেশিতেই ভরসা। কিন্তু দেশি কারা? মিডল অর্ডার ব্যাটারের জায়গাটা যে খাঁ খাঁ করছে। পরীক্ষিত কেউই নেই। গেলবার কয়েক ম্যাচ খেলা হারপ্রিত ভাটিয়া ও আথার্ভ তাইড়ে সুযোগ পেতে পারেন। এবার তাদের বড় দায়িত্ব সামলানোর পালা। পাঞ্জাব ম্যানেজমেন্ট হয়তো নতুন ক্রয়কৃত ব্যাটারদের কারো আবির্ভাবের আশায় থাকবে। নতুনদের মধ্যে আশুতোষ শর্মার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট ১৯৭। তবে শেষমেশ ধাওয়ানের লম্বা সময় ধরে খেলাটাই হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ।
বোলিং- নতুনের আগমনে আরও শক্তিশালী
হার্শাল ও ওকস, নতুন দুই সংযোজনে পাঞ্জাবের আক্রমণ সামর্থ্যের বিচারে আরও শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু সামর্থ্যের প্রতিফলন পারফরম্যান্সে হয়নি বলেই তো গেলবার তাদের বোলিংয়ে দুর্দশা ছিল প্রত্যেক পর্যায়েই। পাওয়ারপ্লেতে যে দুই দলের বোলিং গড় ছিল পঞ্চাশের উপরে, তার একটি পাঞ্জাব। এ কারণেই নতুন বলের সুইং কারিগর ওকসকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। কারান, রাবাদা, ও আর্শদীপের আক্রমণে শুরুতে জায়গা হওয়ার কথা না তার, তবে পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ে ওকসের মতো বিকল্প থাকা নিঃসন্দেহে স্বস্তির।
শেষ চার ওভারে পাঞ্জাবের ইকোনমি থাকেনি ১১.২৪ এর নিচে। যদিও এর থেকেও খারাপ করেছিল আরও চারটি দল। আদতে যেখানে সবচেয়ে পিছিয়ে গিয়েছিল পাঞ্জাব, সেটি মাঝের ওভারের বোলিং। ওই সময়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন উইকেট নিয়েছে ধাওয়ানের দল। সেই এক হায়দরাবাদ বাদে গড়টাও তাদেরই ছিল সবচেয়ে বেশি।
মিডল ওভারে এই দৈন্যদশার পেছনে অন্যতম কারণ রাহুল চাহার। উইকেটশিকারীর ভূমিকায় দেখা হয় যাকে, তিনি ১৪ ম্যাচ খেলে প্রায় ৪৮ গড়ে বোলিং করে মাত্র ৮ উইকেটই নিয়েছিলেন। হারপ্রিত ব্রার ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছেন ঠিক, কিন্তু চাহারের অফফর্মের সাথে বাঁহাতি স্পিনে তিনিও ৯ উইকেটের বেশি পাননি বলে ভুগেছে পাঞ্জাব। এবারও স্পিনে ভরসা এই দুজন বলে তাদের পারফরম্যান্সেরই বড্ড দরকার হবে পাঞ্জাবের।
মিডল ওভারের ছবি বদলাতে হার্শালের অন্তর্ভুক্তি ভালো দিক। ডেথ ওভারে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খারাপ পারফরম্যান্সে পাঞ্জাব কয়েক ম্যাচ হেরেছিল গতবার। ডেথে হার্শাল তার হরেক রকম স্লোয়ারের ভ্যারিয়েশন কাজে লাগিয়ে সফল হবেন, সেই আশায় থাকবেন পাঞ্জাব সমর্থকেরা। তার চেয়েও বড় চিন্তা ও প্রত্যাশা থাকবে রাবাদা-কারান-আর্শদীপ পেসত্রয়ীকে ঘিরে। গেল আসরে তিনজনই যে রান বিলিয়েছেন ওভারপ্রতি নয়ের বেশি করে।
এর আগের তিন মৌসুমেই নয়ের কম ইকোনমিতে বোলিং করা আর্শদীপ ১৭ উইকেট নিলেও কিছুটা খরুচে ছিলেন গেলবার। কারানের গড় ছিল ৪৮, রাবাদার ৩৩। দুজনেরই ইকোনমি ছিল দশের উপরে। তবে তিনজনই ম্যাচ উইনার বলে তাদের নিয়ে চিন্তাটা আড়াল হয়ে যাবে প্রত্যাশায়। ব্যাকআপ হিসেবে থাকা এলিসও নিঃসন্দেহে ভরসা রাখার মতো। পাঞ্জাবের জন্য সুখবর এনে দিতে পারেন তারা, কিন্তু পেসের এই সামর্থ্য মাঠেও ফুটে উঠলেই কেবল।
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
২০১৯ সালে আইপিএলের মঞ্চে প্রথমবারের মতো পা পড়েছিল প্রাবসিমরান সিংয়ের। এরপর প্রত্যেক মৌসুমে অন্তত একবার হলেও মাঠে নামা হয়েছে তার, কিন্তু কোনবারই দুই ম্যাচের বেশি খেলা হয়নি। ২০২৩ আইপিএলে এরপর এমন সুযোগ পেলেন, খেললেন সব ম্যাচেই। ১৪ ম্যাচে ৩৫৮ রান করলেন, সেটিও আবার ১৫০ স্ট্রাইক রেটে। সেবার সেঞ্চুরি হাঁকানো ডানহাতি এই ব্যাটারের দিকে এবার আশাভরা চোখেই তাকিয়ে থাকবে পাঞ্জাব।
গেলবারের অবস্থান
প্রথুম সাত ম্যাচে চার জয়, পরের সাতটিতে মাত্র দুই জয়। আরেকটি হতাশার আসরে তাই ১৪ ম্যাচে কলকাতার সমান ১২ পয়েন্টই ছিল পাঞ্জাবের। নেট রানরেটে পিছিয়ে হয়েছে অষ্টম।