কামিন্সে খুলবে হায়দরাবাদের কপাল?
এলেন কারা, গেলেন কারা
নিলামের আগে ছয়জনকে ছেড়ে দেয় হায়দরাবাদ। তার মধ্যে চড়া মূল্যের হ্যারি ব্রুক (১৩ কোটি ২৫ লাখ) ও কার্তিক ত্যাগীরা (৪ কোটি) থাকায় নিলামে বসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ কোটির পুঁজি নিয়ে। প্যাট কামিন্সকে ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে এরপর কিনলে প্রথমবারের মতো নিলামে কোন ক্রিকেটারের দাম বিশ কোটি ছুঁয়ে ফেলে। আকিল হোসেনকে বিদায় দিয়ে ট্রাভিস হেডের পেছনেও খরচ করেছে ৫ কোটির বেশি। ব্রুকের সাথে আরেক ইংলিশ আদিল রশিদকে ধরে রাখেনি। রশিদের জায়গায় এনেছে লেগি ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। ঝাথাভেদ সুব্রামানিয়ান নামের আরেক লেগিরও অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে হায়দরাবাদে। ত্যাগী, ভিভ্রান্ত শর্মা, সামার্থ ভিয়াস- দেশি এই তিনজনকে বাদ দিয়ে দুই বাঁহাতি পেসার জায়দেব উনাদকেট ও আকাশ সিংকে যুক্ত করেছে। আর ট্রেডে মায়াঙ্ক দাগারকে বেঙ্গালুরুতে দিয়েছে তারা, এনেছে শাহবাজ আহমেদকে।
সম্ভাব্য ১২
কামিন্স, ক্লাসেন, হেডকে প্রথম পছন্দ ধরে নিলে বাকি থাকে একটি জায়গা। সেখানে ব্যাটিংয়ে অপশন মার্করাম ও ফিলিপস, আর বোলিংয়ে মার্কো ইয়ানসেন ও ফজলহক ফারুকী। লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার হাসারাঙ্গাকে থাকতে হবে বেঞ্চে। দেশিদের মধ্যে ওপেনিংয়ে বিকল্প আনমোলপ্রিত সিং।
১। হেড
২। আগারওয়াল
৩। ত্রিপাঠী
৪। ক্লাসেন
৫। অভিষেক
৬। সুন্দর
৭। শাহবাজ / সামাদ
৮। কামিন্স
৯। ইয়ানসেন/ হাসারাঙ্গা
১০। ভুবনেশ্বর
১১। মার্কান্ডে/ উমরান
১২। নাটারজান
ব্যাটিং- বড় নাম নির্ভর হয়ে ব্যর্থতার পুরোনো ছবি?
বারবার পরিবর্তন, একটা দলের বাজে অবস্থার নির্দেশক হয়ে যায় অনেক সময়। আবার উল্টোভাবে বারবার পরিবর্তনকেও দায় দেওয়া যায়। হায়দরাবাদের ক্ষেত্রে যেটিই ঘটুক, উপেন্দ্র যাদব ও সামার্থ ভিয়াস নিজেদের উপেক্ষিত ভাবতেই পারেন। স্কোয়াডে থাকা পঁচিশজনের মধ্যে তারা দুইজনই যে শুধু বাদ গেছেন, আর সবাইকেই হায়দরাবাদ মাঠে নামিয়েছে গেলবার।
ব্যাটিংয়ে দুর্দশা দূর করতে ব্যাটার পরিবর্তন তো করা হয়েছেই, ব্যাটিং অর্ডারেও এসেছে পরিবর্তন। যেমন অভিষেক শর্মা প্রথমে মিডল অর্ডারে, পরে ওপেনিংয়ে। ব্রুকের ক্ষেত্রে উল্টো। হায়দরাবাদ এক আসরেই ওপেনার খেলিয়েছে ছয়জনকে। এত বদলেও টুর্নামেন্ট জুড়েই তারা ভুগেছে ইনিংসের শুরুতে। পাওয়ারপ্লেতে ব্যাট থেকে প্রতি ছয় বলে এনেছে মাত্র ৭.৪৭ রান, লখনৌ বাদে যা সর্বনিম্ন।
ওপেনিংয়ের ব্যর্থতা মিডল অর্ডার ঢাকবে কী, সবখানেই তো ব্যর্থতার ছায়া পড়েছিল। এক ক্লাসেন বাদে একজনও ৩০০ রান করতে পারেননি। ক্লাসেনের বাইরে পুরো টুর্নামেন্টে বাকি সবাই মিলে মাত্র সাতটি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন। মার্করাম, ত্রিপাঠি, ব্রুক, আগারওয়াল- মূল চার ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট ও গড় ছিল ১৩০ ও ২৮ এর কম।
অনেকটা আগের মতোই চেহারা থাকা ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার এমন রুপ এবার না দেখারই আশা করবে তারা। ওপেনিংয়ে নতুন সংযোজন হেড স্বস্তির নিঃশ্বাস রুপেই দেখা দিবেন। তবে আগারওয়াল-ত্রিপাঠী ফর্ম খুঁজে না পেলে দুশ্চিন্তা হাজির হয়ে যেতে পারে। অভিষেক, শাহবাজ, সুন্দর, সামাদ- সকলেই সম্ভাবনাময় যারা সম্ভাবনার ঝিলিক দেখিয়েছেনই কেবল। বড় দায়িত্বে এখনও প্রমাণিত নন। লেট অর্ডারে পাওয়ারের বেলায়ও পিছিয়ে কিছুটা। তারা যদি বিশাল কিছু করে দেখাতে না পারেন, তাহলে বিদেশি বড় নাম নির্ভরই হয়ে পড়বে হায়দরাবাদ।
মার্করামকে একাদশে রাখলে অবশ্য ব্যাটিংয়ের শক্তি বেড়ে যাবে অনেকটুকুই। কিংবা ফিলিপসের মতো পাওয়ার হিটারের প্রয়োজনও আছে এই লাইনআপে, যেখানে ডেথে তারা গেলবার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান এনেছিল প্রতি ছয় বলে। কিন্তু কামিন্স, ক্লাসেন, হেডের পর জায়গা থাকে একটাই। কামিন্সের সঙ্গে দেশি আক্রমণে ভরসা করে সেখানে ব্যাটার নাকি বিদেশি বোলারই, হায়দরাবাদ ম্যানেজমেন্টকে এই প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি ভাবাবে। সম্মিলিত ব্যর্থতার সেই পুরোনো ছবি আবার না দেখার আকাঙ্ক্ষাও থাকবে সেই ভাবনার সঙ্গে।
বোলিং- ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ উতরে কামিন্সে খুলবে কপাল?
শেষ চার আইপিএলে হায়দরাবাদের হেড কোচ ও অধিনায়ক ছিলেন চারজন করে। ২০২১ সালে ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ট্রেভর বেইলিস। ২০২২ সালে জুটি বেধেছিলেন কেন উইলিয়ামসন ও টম মুডি। গেলবার এইডেন মার্করামের সাথে ব্রায়ান লারার পর এবার নতুন মাথা। ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে মিলে দল চালাবেন প্যাট কামিন্স।
গত বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পথে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর জিতেছেন বিশ্বকাপ। তার দাম ২০ কোটি ৫০ লাখে পৌঁছানোর পেছনে অধিনায়কত্বের যোগ্যপ্রার্থী হওয়ারও প্রভাব থাকবে। এর সাথে এই প্রাইস ট্যাগের চাপ সামলানোর একটু হলেও চ্যালেঞ্জও তো থাকেই। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি কেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি, ঘরোয়া- কোন ধরনের টি-টোয়েন্টিতেই কামিন্সের অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নেই। তাই আইপিএলের মঞ্চেই প্রথমবারের মতো দ্রুতগতির এই খেলায় নেতৃত্বে বড়সড় চ্যালেঞ্জই থাকবে। তারও আগে অধিনায়কের বোলিংটাও ভাবনার বিষয়। কোয়ালিটি বোলার হলেও আইপিএলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বড় কিছু করে দেখাতে পারেননি।
হায়দরাবাদ গেল আসরে বোলিংয়ে ভুগেছিল মিডল ওভারে। যেখানে তারা সব দলের থেকে কম উইকেট তো নিয়েছিলই, প্রতি উইকেট নিতে আবার তাদের খরচও করতে হয়েছিল সবার থেকে বেশি।
এবার কামিন্সের জোরের উপর বোলিং ও কাটারের মিশ্রণ কাজে আসতে পারে। গেল আসরে অফ-ফর্মে থাকা উমরান মালিক জ্বলে উঠলে সে সমস্যা দূর হতে পারে। মায়াঙ্ক মার্কান্ডেকেও বড় ভূমিকা রাখতে হবে মিডল ওভারে। স্পিনে উইকেটশিকারী বলতে গেলে এই লেগিই। তিনি খারাপ করলে বিদেশি হাসারাঙ্গাকে খেলাতে গিয়ে চিন্তা বেড়ে যাবে হায়দরাবাদের। স্পিন অলরাউন্ডার বাকি যারা খেলবেন- সুন্দর, শাহবাজ, অভিষেক কেউই কোন মৌসুমে আটটির বেশি উইকেট নিতে পারেননি। পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ে অভ্যস্ত সুন্দর শুরুর ছয় ওভারে অবদান রাখতে পারেন ভুবনেশ্বরের সঙ্গে। ভুবনেশ্বর, নাটরাজনদের সেরা রুপে থাকাটা হবে গুরুত্বপূর্ণ।
ডেথে গেলবার হায়দরাবাদের ইকোনমি ছিল দ্বিতীয় সেরা, সেখানে ধারাবাহিকতার আশা থাকবে তাদের। লম্বা টুর্নামেন্টে যেকোন সময়েই ইনজুরি বিপদ বাড়িয়ে দিতে পারে। বেঞ্চে বসে থাকা বিদেশিরাও সমানভাবে যোগ্য বলে হায়দরাবাদ এক্ষেত্রে প্রস্তুতই বলা চলে। বোলিংয়ে পাওয়ারপ্লেতে দুর্দান্ত ইয়ানসেনের সাথে যেমন আছেন ফারুকী। বাঁহাতি পেসে দেশি অপশন হিসেবেও থাকবেন অভিজ্ঞ জায়দেব উনাকদেটের সাথে তরুণ আকাশ সিং।
শেষ তিন মৌসুমে দুইবার সবার শেষে ও একবার অষ্টম হয়েছে কমলা শিবির। এবার কামিন্সে কপাল খুলতে গেলে দিনশেষে অধিনায়কত্বের চেয়েও সেরা ফর্মের বোলার কামিন্সকেই পড়বে দরকার।
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
সেই ২০১৮ আইপিএলে মুম্বাইয়ের জার্সিতে আবির্ভাব হয়েছিল মায়াঙ্ক মার্কান্ডের। সেবার ১৪ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৮.৩৬ ইকোনমিতে। এরপর দলও বদলাতে হয়েছে, তবে তিন মৌসুম মিলে খেলতে পেরেছেন মোটে ৬ ম্যাচ। গেল আসরে গিয়ে শেষমেশ খেলতে পারেন টানা ম্যাচ। হায়দরাবাদের হয়ে এবারও তার লম্বা সময় সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। গেলবার ১০ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন ৭.৮৯ ইকোনমিতে। উইকেটের সংখ্যা বাড়িয়ে এবার তার আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সময়।
গেলবারের অবস্থান
মাত্র ৪ জয়ে ছিল পয়েন্ট টেবিলে সবার শেষে।