• আইপিএল ২০২৪
  • " />

     

    পান্টের ফেরায় চনমনে দিল্লির দ্বিধার নাম পেস?

    পান্টের ফেরায় চনমনে দিল্লির দ্বিধার নাম পেস?    

    এলেন কারা, গেলেন কারা

    এগারোজনকে ছেড়ে দিয়ে দিল্লি বসেছিল নিলামে, যেখানে ছিলেন রিশাব পান্টও। পান্টকে ঘিরেই মূলত তাদের নিলামের কার্যক্রম এগিয়েছে। ডিসেম্বরের ওই সময় পান্ট খেলতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই সংশয় ছিল। ফিল সল্ট, রাইলি রুশোর সাথে মোস্তাফিজুর রহমান ও রভমান পাওয়েলকে ছেড়ে দিয়ে যে চার বিদেশি কিনেছে দিল্লি, এর মধ্যে তাই দুজন উইকেটকিপার শাই হোপ ও ট্রিস্টান স্টাব। আগে থেকেই অভিষেক পোরেল থাকলেও দেশি আরও দুজন কিপারকেও দলে যুক্ত করেছে তারা। তার মধ্যে কুমার কুশাগরার উপর চেন্নাই ও গুজরাটেরও চোখ থাকায় ৭ কোটি ২০ লাখ রুপিই খরচ করতে হয়েছে। রিকি ভুইকেও কেনায় দিল্লি দলে উইকেটকিপারের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ছয়ে। হ্যারি ব্রুককে কেনাটা বড় প্রাপ্তিই ছিল, কিন্তু ব্রুক আইপিএলের দিনদশেক আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ব্যক্তিগত কারণে। তার জায়গায় বদলি এখনও না আনলেও লুঙ্গি এনগিডি ছিটকে গিয়েছিলেন, জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক তাই পেয়েছেন সুযোগ। আরেক অজি ঝাই রিচার্ডসনকেও দলে ভিড়িয়েছে দিল্লি। গতবারের স্কোয়াড থেকে চেতন সাকারিয়া ও কামলেশ নাগারকোটিকে বিদায় বলে এনেছে দেশি পেসার রাসিখ সালামকে। মানিশ পান্ডে, সরফরাজ খান, রিপাল পাটেল, প্রিয়াম গার্গ, আমান খানদেরও ধরে রাখেনি। কিনেছে আনকোরা দুজনকে- স্বস্তিক চিকারা ও সুমিত কুমার।

    সম্ভাব্য ১২

    ১। পৃথ্বী শ

    ২। ওয়ার্নার

    ৩। মার্শ

    ৪। পান্ট

    ৫। স্টাবস

    ৬। আক্সার

    ৭। লালিত

    ৮। কুশাগরা/ ধুল

    ৯। কুলদীপ

    ১০। মুকেশ 

    ১১। ইশান্ত/ খলিল

    ১২। নরকিয়া

    ব্যাটিং- ভয়ঙ্কর হতে পারবে মাঠেও?

    পৃথ্বী শ, ওয়ার্নার ও মার্শের কী ভয়ঙ্কর টপ অর্ডার! অথচ মাঠে তার ছিটেফোঁটাও দেখেনি দিল্লি গেলবার। ওয়ার্নার বাদে যিনি সর্বোচ্চ রান করেছেন, তিনি বোলিং অলরাউন্ডার আক্সার প্যাটেল। ওয়ার্নার ছাড়া আর কেউ তিনশ রান পর্যন্ত করতে পারেননি। ওয়ার্নার রান করেছেন পাঁচশের বেশি, কিন্তু প্রথম নয় ম্যাচে ২৬০ রান করেছিলেন ১১৮ স্ট্রাইক রেটে! ৪৮ বলে ৫৬, ৫৫ বলে ৬৫, ৪৭ বলে ৫১- সঙ্গ পাচ্ছিলেন না ঠিক, তবে এমন ইনিংসে তার ভোগান্তি ফুটে উঠেছিল স্পষ্টভাবে। সময়মতো আগ্রাসী না হতে পেরে নিজের উপরই তাকে বিরক্ত হতে দেখা গিয়েছিল বেশ কয়েকবার। 

    দেরিতে হলেও টুর্নামেন্টের শেষের দিকে ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন। তবু রান পেয়েছেন কিংবা উইকেটে থাকতে পেরেছেন। বাকিরা যে ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলেই ব্যস্ত। একাদশেও বারবার পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিল দলটা। ভরসা করার মতো কাউকেই যেন পাচ্ছিলেন না হেডকোচ রিকি পন্টিং। সরফরাজ খান, রভমান পাওয়েল, ইয়াশ ধুল, লালিত যাদব, মানিশ পান্ডে, আমান খান, প্রিয়াম গার্গ, রিপাল পাটেল- সকলেই ব্যর্থ ঠেকেছেন। 

    এমনই অবস্থা যে- মিডল ওভারে তাদের চেয়ে ধীরগতিতে ব্যাট করেনি যেমন আর কোনও দল, প্রতি উইকেটে তাদের চেয়ে কম রানও আনেনি। মিডল ওভারেই খেই হারিয়ে ফেলে পরে আর কী করবে! অন্য সব দল যেখানে ডেথে রান তুলেছে ওভারপ্রতি নয়ের বেশি করে, দিল্লি এনেছে ৭.৮৬ রান করে। 

    মিডল অর্ডারে পান্টের অভাব হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছিল দিল্লি। মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া দুর্ঘটনা থেকে এবার অধিনায়ক হয়ে ফিরে আসা পান্ট কেমন করেন, তা বড় নির্ধারক হয়ে দাঁড়াবে। দিল্লির টপ ফোর ক্লিক করে গেলে যেকোন দলের জন্যই হুমকিজনক। পৃথ্বী শয়ে তারা এখনও বিশ্বাস রাখছে সামর্থ্যের উচ্চসীমা বুঝতে পেরেই। এমনিতেই পিছিয়ে পড়া শয়ের জন্য এই মৌসুমটা 'করো না হয় মরো' পরিস্থিতিরই বলা চলে। মার্শও গতবার প্রত্যাশামতো কিছুই করতে পারেননি, ৯ ম্যাচে ১০৮ রান করা মার্শকে নিশ্চয়ই দেখতে চায় না দিল্লি। 

    ফর্মে থাকা স্টাবস ফিনিশিংয়ে ভালো অবদান রাখতে সক্ষম। লিস্ট-এ ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান (২৯ বলে) ফ্রেজার ম্যাকগার্ক রোমাঞ্চকর। ব্যাকআপ হিসেবে শাই হোপ আছেন। আক্সার প্যাটেল ব্যাট হাতে উন্নতির ছাপটা এবারও দেখাবেন, সেই আশা করবে দিল্লি। লালিত যাদব গত কয়েক মৌসুম ধরে শধু আশাই দেখিয়ে আসছেন। দেশি কেউ একজনকে লেট-মিডল অর্ডারে জ্বলে উঠতেই হবে। কুমার কুশাগরাই কি সেই একজন হতে পারবেন? গেলবারের ইয়াস ধুলের সঙ্গে আরও অপশন নতুন রিকি ভুই। 

    গত আসরের অর্ধেক ম্যাচে পুরো বিশ ওভার খেলেও ১৫০ রান করতে পারেনি দিল্লি। এবার পান্টের ফেরায় উজ্জীবিত দিল্লি নিশ্চয়ই গল্পটা বদলাতে চাইবে। সেজন্য দিল্লির মূল ভরসা যে টপ অর্ডার, সেটি খাতায় না হয়ে মাঠেও হতে হবে ভয়ঙ্কর। 

    বোলিং- দ্বিধাময় পেস আক্রমণ

    দিল্লির দুর্দশাময় মৌসুমে বোলারদের গায়ে অতটা দায় দেওয়ার সুযোগ ছিল না। বোলাররা যথেষ্ট পুঁজি পাননি অনেক ম্যাচেই। দিল্লি নবম হয়েছে ঠিক, তবু সবমিলিয়ে বোলারদের পরিসংখ্যানে তারা একেবারে তলানিতে কিন্তু নেই। মাঝামাঝিতেই আছে পাওয়ারপ্লে ও মিডল ওভারের বেলায়। মিডল ওভারের দায়িত্বের সিংহভাগ সামলেছেন অসাধারণ স্পিন জুটি। জীবনের সেরা ফর্মেই থাকা কুলদীপে বিশাল কিছুর স্বপ্নই এবার দেখতে পারেন দিল্লি সমর্থকেরা। 

    তবে গেল আসরে ডেথে গড় বিবেচনায় সবচেয়ে খারাপ করেছিল ওয়ার্নারের দল। ইকোনমিও ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১.২৬। নরকিয়া, মুকেশ, খলিল, ইশান্ত- সকলের ইকোনমি ছিল দশের উপরে। ডেথ সমস্যার সাথে এবার দিল্লির পেস আক্রমণের ঘরে ঘুরাফেরা করছে নানান দ্বিধাও। 

    খলিল এখনও গড়পড়তা পারফরম্যান্সের বাইরে বড় কিছু করতে পারেননি। আদতেই তার সক্ষমতা কতটুকু, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। মুকেশ কুমার তো গেলবারই এলেন আইপিএলে। দিল্লিকে এগিয়ে যেতে হলে এই দুজনকেই করে দেখাতে হবে এমন কিছু, যা এখনও পারেননি। বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া ইশান্ত শর্মা গেলবার শেষের দিকে সুযোগ পেয়ে বাজিমাতই করেছিলেন। ক্যারিয়ারের পড়ন্তবেলায় এসেও আরও একবার পারবেন জ্বলে উঠতে? দ্বিধা থাকেই। বাকি যে দেশি পেসার, গেল আসরে দল না পাওয়া রাসিখ সালামের আইপিএল অভিজ্ঞতা মাত্র তিন ম্যাচের। 

    দেশিদের বেলায় সামর্থ্য নিয়ে দ্বিধা থাকলেও বিদেশিদের বেলায় তা নেই। কিন্তু সেই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চোটে পড়া নরকিয়া এই মাসেই ফিরেছেন ক্রিকেট মাঠে। চোট কাটিয়ে কেমন করবেন, দ্বিধা তা নিয়েই কেবল। ঝাই রিচার্ডসন তো প্রথম কয়েক ম্যাচে খেলতেই পারবেন না। নরকিয়ার মতো তিনিও যথেষ্টই ইনজুরিপ্রবণ। 

    দ্বিধাময় পেস ঘিরে আরেক প্রশ্ন, পাওয়ারপ্লেতে উইকেট এনে দিবেন কে? নরকিয়ার বিশেষত্ব নতুন বলে নয়। স্পিনে আক্সার থাকছেন, ইশান্তের কাছ থেকে গেলবারের মতো পাওয়ারপ্লেতে দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখতে চাইবে দিল্লি। খলিল পাওয়ারপ্লেতে গেলবার ৯ ম্যাচে ৬৫ গড়ে মাত্র ২ উইকেট পেয়েছিলেন, আর মুকেশ ৯ ম্যাচে ১০৩ গড়ে এনেছিলেনে ১ উইকেট। এই দুজন সব দ্বিধা উড়িয়ে দিতে পারলে দুর্দান্ত স্পিনের বলে প্লেঅফ আবার অত বেশিও দূরে নয়।

    কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা

    ত্রিশ বছর বয়সী মুকেশ কুমার প্রথমবার আইপিএলে খেলেছেন গতবছরই। দশ ম্যাচে মাত্র সাত উইকেট নেওয়া ডানহাতি পেসারের ইকোনমিটাও ছিল দশের উপরে। তবে গেলবার তার দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন মাঝেমধ্যেই। ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটেই অভিষিক্ত এই বোলারের অভিজ্ঞতায় অবশ্য ঘাটতি নেই। লাল বলের পোক্ত বোলার টি-টোয়েন্টির চাপ জয় করতে পারলে ভালো কিছু পেতেই পারে দিল্লি।

    গেলবারের অবস্থান

    প্রথম জয় পেতে দিল্লিকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ছয় ম্যাচ। এমন শুরুর পর শেষমেশ ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে নবম স্থানে থেকেই টুর্নামেন্ট শেষ করেছে দিল্লি।