জয়সওয়াল-বাটলারদের রাজস্থানের মাথাব্যথা ডেথ বোলিং?
এলেন কারা, গেলেন কারা
নয়জনকে ছেড়ে দিয়ে মাত্র পাঁচজনকেই কিনেছে রাজস্থান। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ১৪.৫ কোটি পুঁজি নিয়ে নিলামে নেমে দুর্দান্ত সংযোজন ঘটিয়েছে তারা। নান্দ্রে বার্গারকে যেমন ভিড়িয়েছে দলে, ব্যাটিংয়ে এনেছে রভমান পাওয়েল ও টম কোহলার ক্যাডমোর। জেসন হোল্ডার, জো রুট ও ওবেদ ম্যাককয়ের সঙ্গে আরও ছয়জন দেশিকে ছাটাই করেছে। মুরুগান অশ্বিন, মোহাম্মদ আসিফ ও কুলদিপ যাদবদের বিদায় করে দেশি দুজনকে কিনেছে রাজস্থান- আনকোরা ব্যাটার শুভাম দুবে ও অলরাউন্ডার আবিদ মুশতাক। নিলামের বাইরে ট্রেডেই আসল কাজ করেছে তারা, দেবদূত পাড়িক্কালকে লখনৌয়ে পাঠিয়ে এনেছে আভেশ খানকে।
সম্ভাব্য ১২
বোল্টের দুর্দান্ত ব্যাকআপ বার্গার। ব্যাটিংয়ে বিকল্প ডোনাভান ফেরেইরা ও ক্যাডমোর। দেশি পেসারের এক জায়গায় অপশন নাবদিপ সাইনি, সান্দীপ শর্মা, কুলদীপ সেন। অ্যাডাম জ্যাম্পা পুরো আসর থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ব্যক্তিগত কারণে।
১। জয়সওয়াল
২। বাটলার
৩। স্যামসন
৪। জুরেল
৫। হেটমায়ার
৬। পাওয়েল/ ফেরেইরা
৭। পরাগ
৮। অশ্বিন
৯। চাহাল
১০। বোল্ট
১১। আভেশ
১২। সান্দীপ
ব্যাটিং- বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে স্থিরতার প্রয়োজন?
জস বাটলার গেল আসরে ফিফটি করেছেন চারটা, আর ডাক মেরেছেন পাঁচটা। ৩৯২ রানে বাটলার-সুলভ পারফরম্যান্স পায়নি রাজস্থান। তবু পাওয়ারপ্লেতে গড়ে রাজস্থানের রান এসেছে ৪১.৫০। গড়ের মতো স্ট্রাইক রেটও ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪৭.৯২। কারণ ১৬৩ স্ট্রাইক রেটে ৬২৫ রান করা জয়সওয়াল। সময়ের সাথে আরও পরিণত হয়ে উঠা ক্রিকেটবিশ্বের নতুন এই তারকার সাথে বাটলারের জুটি ‘জিভে জল এনে দেওয়ার’ মতোই।
স্যাঞ্জু স্যামসন বিশাল কিছুর সুগন্ধি ছড়িয়ে আটকা পড়ে যাচ্ছেন ওই মাঝারি মানেই। গতবারও করতে পারেননি ৩৬২ রানের বেশি। প্রত্যাশামতো স্যামসন জ্বলে উঠলে রাজস্থানের টপ অর্ডার যেকোন দলের চিন্তার কারণ হবে। এই তিনজনের যেদিন যার দিন হবে, সেদিন প্রতিপক্ষের কপালে মন্দই লেখা বলতে হয়। শেষেও পাওয়ারের অভাব নেই রাজস্থানের ব্যাটিংয়ে। গেলবারও শেষ চার ওভারে স্যামসনের দল ব্যাট থেকে রান এনেছিল ওভারপ্রতি ১১.০৯ করে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২৭১ বল খেলে তাতে ছক্কা-চার মেরেছিল ৭৪টিতেই।
শেষের ঝড়ের জন্য এবার যুক্ত করেছে পাওয়েলকেও। দেশিদের মধ্যে পাওয়ার হিটিংয়ের সক্ষমতা দেখানো পরাগ ও জুরেলও আছেন। দীর্ঘদিন ধরে পরাগে ভরসা রেখে আসছে রাজস্থান, কিন্তু এবার যদি না হওয়ার পরও রাজস্থানের তা থাকে, তাহলে তাদের ধৈর্য্যের যথেষ্টই প্রশংসা করতে হবে। ২০২৪ আইপিএলে অবশ্য এসেছেন ফর্মকে সঙ্গী করেই, ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান স্কোরার বনেছিলেন ১৮২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেই।
রাজস্থানের ব্যাটিংয়ে আসলে গেলবার বিপত্তি বেধেছিল মাঝের ওভারে। যেখানে তারা প্রতি উইকেটে রান এনেছে মাত্র ২৪.৭৪। ১৩১.৩৫ স্ট্রাইক রেটেই খেলেছিল সপ্তম ওভার থেকে ১৬তম ওভার পর্যন্ত। দুটি বিবেচনায়ই তাদের থেকে ভালো যখন করে আরও সাতটি দল, তখন রাজস্থান পিছিয়ে গিয়েছিল যথেষ্টই।
টপ অর্ডারের কেউ লম্বা খেললে তো কথাই নেই, কিন্তু যখন ‘মাথা’ কাটা যাবে, তখন? গেলবার দেবদূত পাড়িক্কালকে চারে খেলিয়েছিল রাজস্থান, কিন্তু পাড়িক্কাল রানের সাথে রানের গতিটা মানানসই রাখতে পারেননি। ১১ ম্যাচে ২৬১ রান করেছিলেন ১৩০ স্ট্রাইক রেটে। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় আক্রমণ ও সতর্কতার ভারসাম্য রেখে খেলতে পারেন এমন ব্যাটারের প্রয়োজন রাজস্থানের। এই ভূমিকায় জুরেলকে কি ভাববেন স্যামসন-সাঙ্গাকারা? হেটমায়ার, পাওয়েল, পরাগ- একমুখী এই তিন ব্যাটার আক্রমণেই মানানসই। বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপ টি-টোয়েন্টির আদর্শ দলের কাছাকাছিই, কিন্তু শুধু কি সেখানে একটু ‘স্থিরতা’র প্রয়োজন আছে কিনা, সেটিই নিয়েই হয়তো ভাবতে হবে রাজস্থানকে।
তাদের টপ সাতের পাঁচজনই আবার ডানহাতি। ডানহাতির এই আধিক্যের সুবিধা নিতে পারে প্রতিপক্ষ, যেখানে প্রত্যেক দলেরই বাঁহাতি স্পিনার কিংবা লেগস্পিনার আছে। পাওয়েল-হেটমায়ারের হাই-কোয়ালিটি স্পিনের জালে আটকা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। এখানেও আবার জুরেলের প্রমোশনের ভাবনা চলে আসে তাই। তবে এই চ্যালেঞ্জ উতরাতে পারলে, ম্যাচ উইনারে ভরপুর রাজস্থান লাইনআপ জানিয়ে রাখছে, সাবধান!
বোলিং- প্রসিধের অভাব বোধ করবে এবারও?
প্রসিধ কৃষ্ণা রাজস্থানের পরিকল্পনায় কত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, তা ২০২২ সালের নিলামে দশ কোটি রুপি দিয়ে তাকে কেনাই বুঝিয়ে দেয়। গেলবার ভরসার এই বোলারের অভাব ভালোই টের পেয়েছিল রাজস্থান। দেশি পেসার যাদেরকেই খেলিয়েছিল, সান্দীপ বাদে কেউই সুবিধা করে উঠতে পারেননি। আসিফ ও কুলদিপ যাদবকে তো এবার ছেড়েই দিয়েছে, তাদের সঙ্গে সাইনি ও কুলদীপ সেন কার্যকর হতে পারেননি মোটেও।
সাইনি ও কুলদীপ দুজনেই হাই-পেসে বোলিং করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি যথেষ্ট। ট্রেডে আনা আভেশ এবার প্রথম পছন্দই থাকবেন। রাজস্থান সমর্থকেরা আফসোস করতে পারেন, প্রসিধ থাকলে কী হতো তা নিয়েই। আভেশ-প্রসিধে ভরসা করার মতো দেশি পেস আক্রমণ যে পেত রাজস্থান। সুইংয়ে সিদ্ধহস্ত সান্দীপের শক্তির জায়গা পাওয়ারপ্লেতেই। সেখানে বোল্টের সঙ্গে মিলে গেলবার দারুণ বোলিংই করেছিলেন, অশ্বিনও নতুন বলে দক্ষ। গতবার সবচেয়ে কম ইকোনমিতে পাওয়ারপ্লেতে বোলিং করা রাজস্থান এবারও সেখানে নিশ্চিন্ত থাকবে।
খামতি যা ডেথে। সাইনি কিংবা কুলদীপ তো এমনিতেই খরুচে। সাইনির ডেথের ইকোনমি আভেশের মতো দশের কাছাকাছিই। বোল্ট ও সান্দীপের আবার ডেথে ইকোনমি সাড়ে দশের উপরে। ডেথের পরীক্ষা কুলিয়ে উঠতে পারলে অবশ্য রাজস্থানের দলটা ‘রাজত্ব’ করার ইঙ্গিতই দিচ্ছে। বোল্টের ব্যাকআপ হিসেবে এনেছে দুর্দান্ত উঠতি গতিশীল পেসার নান্দ্রে বার্গারকে। গত বছরই সব ফরম্যাটে অভিষিক্ত এই প্রোটিয়া পেসার দারুণ কিছুর সম্ভাবনা দেখিয়েছেন।
অসাধারণ স্পিন জুটি তো আছেই। গেলবারও রাজস্থানের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর প্রথম দুজন ছিলেন অশ্বিন ও চাহালই। কিন্তু মূল বোলারদের কারো দিন খারাপ গেলে? কোনও পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার নেই ঠিক, পরাগের পার্ট-টাইম অফ স্পিন আছে। এমনিতে ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী অলরাউন্ডার খুঁজে পাওয়াও মুশকিলই বটে!
একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল রাজস্থান ২০২২ আইপিএলে। যেখানে পাঁচ বোলার ও ছয় ব্যাটারকে নিয়েই খেলেছিল তারা, অশ্বিন ব্যাট করছিলেন সাতে। এরপর গেলবার জেসন হোল্ডারকে যুক্ত করেছিল দলে, যিনি মূলত খেলেছেন বোলার হয়েই। পাঁচ বোলার নিয়ে এবারও খেলার কথা রাজস্থানের, ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ থাকার সুবাদে অবশ্য ব্যাটিং অর্ডারে গভীরতা থাকবে আরেকটু। সেই ২০২২ সালে কিন্তু ফাইনালেই গিয়েছিল রাজস্থান, এবার আরও পরিপূর্ণ এক টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে প্লেঅফের জন্য অন্তত প্রস্তুত দলটা। তবে ফিনিশিং লাইনটাই নিশ্চয়ই ক্রস করতে চাইবেন স্যামসনেরা।
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
আইপিএলের অভিষেকে ১৫ বলে ৩২ রানের ইনিংসে বার্তাই দিয়ে রেখেছিলেন ধ্রুব জুরেল- ভারতের ক্রিকেটে আরও এক প্রতিভা। গেলবার ১১ ইনিংসে প্রায় ২১ গড়ে রান করেছিলেন ১৫৩, কিন্তু শেষের দিকে নামা এই ডানহাতি খেলেছিলেন ১৭২ স্ট্রাইক রেটে। যদিও প্রথম ম্যাচের মতো সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি আর। এবারের আইপিএলে আসছেন সাফল্যের স্পর্শ নিয়েই। গেল মাসে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। রঙিন পোশাকে এখন জলমলে পারফরম্যান্সের সময়।
গেলবারের অবস্থান
প্রথম ৮ ম্যাচে ৫ জয়ে প্লেঅফের পথেই ছিল স্যামসনের দল, কিন্তু শেষ ছয় ম্যাচে চারটিতেই হেরে যায় তারা, চতুর্থ দলের থেকে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে তাই তারা থেকেছে পঞ্চম স্থানেই।