পাওয়ারপ্লে সমস্যাই লখনৌর পথে বড় বাধা?
এলেন কারা, গেলেন কারা
নিলামের আগেই স্কোয়াডে একটা বড়সড় পরিবর্তন এনেছিল লখনৌ। রাজস্থানে আভেশ খানকে পাঠিয়ে ট্রেডে দেবদূত পাড়িক্কালকে আনে। নিলামে সবচেয়ে কম ১৩.১৫ কোটি রুপি নিয়ে বসেও ভালোই কেনাকাটা চালিয়েছে তারা। দেশি তিন ব্যাটারের সঙ্গে ছেড়ে দিয়েছিল পেসার জায়দেব উনাদকেটকে। পরে দেশি দুই পেসার শিভাম মাভি ও আরশাদ খানের সাথে কিনেছে ডেভিড উইলিকেও। ড্যানিয়েল স্যামসের বিয়োজনে আরেক অজি অ্যাস্টন টার্নারকে দলে ভিড়িয়েছে লখনৌ। সবশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলা পেস অলরাউন্ডার আরশিন কুলকার্নি বড় প্রাপ্তি প্রমাণিত হতে পারেন। নতুন সংযোজনের আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার মানিমারান সিদ্ধার্থের পেছনে অবশ্য খরচ হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ রুপি। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় মার্ক উড খেলবেন না, তার জায়গায় বদলি এনেছে গ্যাবার নায়ক শামার জোসেফকে। আরেক ক্যারিবিয়ান রোমারিও শেপার্ডকে তারা আগেই ট্রেডে পাঠিয়ে দিয়েছিল মুম্বাইয়ে।
সম্ভাব্য ১২
ডেভিড উইলি প্রথম কয়েক ম্যাচে খেলবেন না ব্যক্তিগত কারণে। স্পিনে অপশন কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ও অমিত মিশ্র।
১। মায়ার্স/ কক
২। পাড়িক্কাল
৩। হোডা
৪। রাহুল
৫। পুরান
৬। স্টয়নিস
৭। বাদোনি
৮। ক্রুনাল
৯। মাভি/ ইয়াশ
১০। শামার/ নাভিন
১১। বিশ্নই
১২। মহসিন
ব্যাটিং- বিদেশি বনাম দেশি, এবার কোন রুপ?
লখনৌয়ের ব্যাটারদের নামগুলো নিশ্চয়ই একবার পড়া হয়েছে। এবার যদি বলি এই দলটাই গেল আসরে যে গতিতে রান করেছে, তার থেকে কম ছিল শুধু একটি দলের। সেটি নবম হওয়া দিল্লি। ব্যাটিংয়ের এই হালের পরও তাহলে কীভাবে লখনৌ পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে?
লখনৌর ঘরের মাঠ একানা স্টেডিয়ামের স্লো-টার্নিং উইকেটে ১৩ ইনিংসের খেলা হয়েছে, এর মধ্যে মাত্র তিনবারই ১৭০ রানের বড় স্কোর হয়েছে। এমন লো-স্কোরিং গ্রাউন্ডে খেলেছে বলেই তাদের ব্যাটিং পরিসংখ্যান তলানির দিকেই থেকেছে। তবু হোডা-ক্রুনালদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকে আড়াল করার সুযোগ নেই। হোডা ১২ ইনিংসে একশর কম স্ট্রাইক রেটে ৮৪ রান করে দুঃস্বপ্নের মৌসুম কাটিয়েছেন। উপরের দিকে ব্যাট করলেও ক্রুনাল ১৪ ইনিংসে ১৮৮ রানের বেশি করতে পারেননি, সেটিও মাত্র ১১৩ স্ট্রাইক রেটে। আরেক নিয়মিত দেশি ব্যাটার আয়ুশ বাদোনি ১৩৮ স্ট্রাইক রেটে ২৩৮ রান দিয়েছেন।
লোকেশ রাহুলকে নয় ম্যাচ পর ইনজুরিতে হারানোর পর বিপদেই পড়ে গিয়েছিল লখনৌ। ওপেনিংয়ে একের পর এক দেশিকে নামিয়ে সংখ্যাটা গিয়ে পাঁচে থেমেছে এরপর। দেশিদের এমন হালের পরও বিদেশিদের বলে এগিয়েছে লখনৌ। মায়ার্স, পুরান, স্টয়নিস- তিনজনই করেছেন সাড়ে তিনশ রানের বেশি, স্ট্রাইক রেট প্রত্যেকেরই ছিল ১৪০ এর উপরে। জাতীয় দলের খেলা থাকায় মায়ার্সের কাছে কুইন্টন ডি কক পজিশন হারিয়ে পরে ফিরেছিলেন, তিনিও চার ম্যাচেই করেছিলেন ১৪৩ রান। সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আবারও, ডি কক নাকি মায়ার্স? ফর্ম বিবেচনায় মায়ার্সকেই এগিয়ে রাখতে হয়।
দেশি ব্যাটে রানখরা দূরে অবদান রাখবে পাড়িক্কালের আগমন। বিশ্বকাপে উইকেটকিপারের জায়গায় দাবি জানাতে কিংবা দলের প্রয়োজনে- রাহুলের নিচে নেমে চারে খেলার খবর এসেছে। যদিও নতুন হেডকোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার কিছু জানাননি এ ব্যাপারে। তবে ওপেনিংয়েই মানানসই পাড়িক্কালের স্ট্রাইক রেটে উন্নতির ছাপ রাখাটা হবে প্রয়োজন। রাহুল ২০১৮ আইপিএলে মিডল ওভারে দুর্দান্ত করলেও এরপর ওপেনিংয়ে রানের ফোয়ারাই ছুটিয়েছেন। যদিও তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যেত মাঝেমধ্যে। এবার মিডল অর্ডারে কেমন করেন, সেটি হবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশিরাই ব্যাটিংয়ের নির্ভরতা হলেও, দেশি ব্যাটারদের থেকেও এবার ভালো প্রদর্শনী প্রয়োজন লখনৌর। মায়ার্স, পুরান দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ইনজুরিতে সাম্প্রতিক সময়ে ভোগা স্টয়নিস কিছুটা অফ-ফর্মে থাকলেও তার সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ নেই। বিকল্প হিসেবে অ্যাস্টন টার্নারও মন্দ নয়। গেলবার লখনৌ ঘরের মাঠে ব্যাটিংয়ে ভুগেছে।। ঘরের বাইরে পুরানকে থামানো যেখানে মুশকিল হয়ে পড়েছিল, তিনিও ঘরে হাঁসফাঁসই করেছেন। এবার অবশ্য পুরানদের জন্য সুখবর- একানা স্টেডিয়ামে গত আইপিএল পরে নতুন পিচ তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বিশ্বকাপে ভালো ব্যাটিং পিচ দেখা গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী কোচ ল্যাঙ্গার প্রথমবারের মতো আইপিএলের দল সামলাতে এসেছেন। তিনি তো পিচ দেখে বলে দিয়েছেন, খুব খুব ভালো। তার দল ভালো ব্যাটিং করলে প্রতিপক্ষের জন্য বিপদই আছে বলতে হয়!
বোলিং- পাওয়ারপ্লে সমস্যা দূর হবে কীভাবে?
গেলবার পাওয়ারপ্লেতেই অনেক ম্যাচে পিছিয়ে পড়েছিল লখনৌ। শুরুর ছয় ওভারে প্রতি উইকেট নিতে যখন খরচ হয়ে যায় পঞ্চাশের বেশি রান, তখন সেটিকে সমস্যা না বলে উপায় নেই। পাওয়ারপ্লেতে তো তারা মোট উইকেট নিতেই পেরেছে মাত্র ১৪টি (সবচেয়ে কম)। এর কারণ হিসেবে শুধুই অফ-ফর্মকে দেখানো যায় না, আদতে পাওয়ারপ্লের অস্ত্রের অভাবই ছিল লখনৌর।
এবারও হয়তো ভুগতে হতে পারে কিছুটা। নতুন সংযোজন ডেভিড উইলি সুইংয়ে পারদর্শী হলেও মিডিয়াম-পেসে একেবারে উঁচুমানের নয় তিনি। হাই-পেসে বল করা শামার জোসেফ কার্যকর হতে পারেন। কিন্তু এক বিদেশির জায়গায় নাভিন নাকি জোসেফ, ভাবতে হবে লখনৌকে। নাভিন উল হকের শক্তির জায়গা পাওয়ারপ্লের পরেই, আর কিছুটা স্লো উইকেটেই তিনি কার্যকর। মহসিন খানই তাই এবার পাওয়ারপ্লের মূল ভরসা ও গুরুত্বপূর্ণ হবেন লখনৌয়ের জন্য। বাঁহাতি এই পেসার ২০২২ আইপিএলে দারুণ বোলিং করেছিলেন। পাওয়ারপ্লেতে আরও দুটি অপশন থাকবে রাহুলের হাতে। কাইল মায়ার্স নতুন বলে বেশ সুইং করাতে পারেন, তাতে দক্ষ স্টয়নিসও।
নতুন সংযোজন শিভাম মাভি গেল আসরে গুজরাটে কোন ম্যাচ খেলতে পারেননি। দৃশ্যপটের কিছুটা বাইরে চলে যাওয়া এই বোলার কী করতে পারেন, সেটিও দেখতে চাইবে লখনৌ। আরেক নতুন সংযুক্তি আরশাদ খান নতুন বলে মুম্বাইয়ের হয়ে গেলবার বোলিং করেছিলেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে ভোগা এই বোলার লখনৌয়ে মহসিনের ব্যাকআপ হিসেবেই থাকবেন। বাকি যে দেশি পেসার আছেন, সেই ইয়াশ ঠাকুর স্লোয়ার-কাটারের মিশ্রণে পাওয়ারপ্লের পরেই মানানসই।
গেলবার লখনৌয়ের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হতে পারেননি কোন পেসার। তাদের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হওয়া বিষ্ণই যেকোন পিচেই কার্যকর বলে স্পিনে ভরসা। তবে স্পিন আক্রমণে উইকেট শিকারের সক্ষমতায় কিছুটা ঘাটতি আছে। ক্রুনাল পান্ডিয়া ইকোনমিক্যাল বোলিং করলেও ৯ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি গতবার। কৃষ্ণাপ্পা গৌতমকে স্পিন-সহায়ক উইকেটেই শুধু খেলানোর কথা, যিনিও উইকেট তুলে নেওয়ায় অত পারদর্শী নন। অমিত মিশ্রা ঠিকঠাক করেছিলেন, ক্যারিয়ার শেষের আলো দেখতে পাওয়া এই বোলার ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে কেমন করবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকেই। এক্ষেত্রে ক্রুনালের জ্বলে উঠা দরকার। তবে তার চেয়েও বেশি- মহসিন, মাভি, জোসেফদের!
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
প্রথমবারের মতো যে মৌসুমে আইপিএলের মতো বড় মঞ্চে পদার্পণ, সেখানেই ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিলেন যখন ছয়ের কম ইকোনমিতে, তখন তার সামর্থ্য সম্পর্কে আলাদা করে বলে দিতে হয় না। কিন্তু মহসিনের সাফল্যের গাড়িতে ব্রেক কষে দেয় ইনজুরি। গেলবার ইনজুরিতে পুরো আসর মিস করার শঙ্কা থাকলেও শেষমেশ ৫ ম্যাচ খেলেছিলেন। তাতে ৩ উইকেট নিতে রান দিয়েছিলেন ওভারপ্রতি দশের বেশি করে। এবার ফুল ফিট হয়ে আসা মহসিন সাফল্যের গাড়িটা আরও দূরে নিয়েই যেতে চাইবেন।
গেলবারের অবস্থান
১১ ম্যাচে শেষে ১১ পয়েন্ট নিয়ে অনিশ্চিয়তাই ছিল লখনৌর প্লেঅফে যাওয়া। এরপর টানা তিনটি ম্যাচ জিতে প্লেঅফে জায়গা করে নিলেও বিদায় নিতে হয়েছে এলিমিনেটরেই।