শামি-হার্দিকের অভাব কীভাবে ঘোঁচাবে গুজরাট?
এলেন কারা, গেলেন কারা
আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রেডে পুরোনো ঠিকানা মুম্বাইয়ে চলে গেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ওডিন স্মিথকেও ছেড়ে দিয়ে নিলামে আফগান অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে কিনেছে গুজরাট। দেশি পাওয়ার হিটার শাহরুখ খানকেও দলে ভিড়িয়েছে। আলজারি জোসেফ ও দাসুন শানাকাকে ছেড়ে দিয়ে অজি পেসার স্পেন্সার জনসনকে কিনেছে তারা। দেশি তিন পেসারকেই বিদায় বলে দিয়েছে টাইটান্স- শিভাম মাভি, ইয়াশ দায়াল, প্রদীপ সাংওয়ানের বিয়োজনে গুজরাট দলে যুক্ত হয়েছেন উমেশ যাদব, কার্তিক ত্যাগী ও সুশান্ত মিশ্র। আরেক সংযোজন আনক্যাপড বাঁহাতি স্পিনার মানাভ সুতার। দুই উইকেটকিপার শ্রীকর ভারত ও উরভিল প্যাটেলকে রিটেইন না করে কিনেছে আনকোরা রবিন মিঞ্জকে, তিনি ইনজুরিতে ছিটকে পড়ায় বদলি এসেছেন রাভি শারাথ। আর মোহাম্মদ শামির বদলি সান্দীপ ওয়ারিয়ের।
সম্ভাব্য ১২
স্পিনে দারুণ বিকল্প বাঁহাতি স্পিনার সাই কিশোর ও অফ স্পিনার জয়ন্ত যাদব।
১। গিল
২। সাহা
৩। সুদর্শন
৪। বিজয়/ মনোহার
৫। মিলার
৬। শাহরুখ
৭। তেওয়াতিয়া
৮। রশিদ
৯। নূর
১০। স্পেন্সার/ লিটল
১১। উমেশ
১২। মোহিত
ব্যাটিং- গিলের কাঁধে হার্দিক-সম ভার
যে দল নিজের হাতেই গড়া বলা চলে, সেই গুজরাট ছেড়ে যাবেন হার্দিক- সহজেই বিশ্বাস করার মতো না। কিন্তু যেখানে গেলেন, সেই মুম্বাইয়ের আপন তো তিনি আগে থেকেই। বুঝিয়ে তাকে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, মুম্বাই বলেই গুজরাটের হেডকোচ আশিষ নেহরা বেশি বোঝাতে যাননি। হার্দিকের মতো অবশ্য গুজরাটের সাফল্যের বড়সড় অংশের ভাগিদার শুবমান গিলও। সেই গিলের হাতেই গুজরাট তুলে দিয়েছে অধিনায়কের দায়িত্ব।
প্রথমবারের মতো আইপিএলের মতো বড়মঞ্চে অধিনায়কত্ব করবেন, যেখানে এর আগে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে মাত্র দুই ম্যাচেই আছে তার অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা। বাড়তি চোখ যেমন থাকবে তার নেতৃত্বে, নেতৃত্বের চাপ গায়ে লাগতে না দিয়ে ফর্ম ধরে রাখতে পারেন কিনা, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
গুজরাটের ব্যাটিং লাইনআপে প্রত্যেক পজিশনেই যে টুর্নামেন্টের সেরা তিন ব্যাটাররা আছেন, এমন বলার সুযোগ নেই। কিন্তু তাদের সাফল্যটা লেখা হয়েছে আদতে, সকলেই কাজের সময় প্রভাব রাখতে পেরেছেন বলে। এ কারণেই গেলবার গুজরাটই প্রতি উইকেটে রান এনেছে সবচেয়ে বেশি। মিডল ওভারে যেমন গড় সবচেয়ে ভালো ছিল, ডেথে তো প্রতি ছয় বলে ব্যাট থেকে রান এনেছে সর্বোচ্চ ১১.৩২। এমন সাফল্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পারা গুরুত্বপূর্ণ হবে তাদের জন্য।
হার্দিকের জায়গা পূরণ হবে কীভাবে? গত দুই মৌসুমে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে এসে নতুন ভূমিকায় হার্দিক চারের দায়িত্ব কী দারুণভাবেই পালন করেছিলেন! লেট-মিডল অর্ডারে মিলার-তেওয়াতিয়ার সাথে গুজরাট এবার যুক্ত করেছে শাহরুখ খানকেও। পাঞ্জাবে একেবারেই নিরাশ করা শাহরুখ নতুন দলে ভিন্ন রুপ দেখাতে চাইবেন নিশ্চয়ই। টপ অর্ডারে দুই তরুণে স্বস্তি গুজরাটের, গিল ও সাই সুদর্শনের ফাঁকে ওপেনিংয়ে ঋদ্ধিমান সাহা কেমন করবেন, তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিবে গুজরাটের ঘরে। গেল আসরে ২৩ গড় ও ১২৯ স্ট্রাইক রেটে সাহা করেছিলেন ৩৭১ রান। টপ আর মিডল অর্ডারের মাঝের সেতু হয়েই যেন কাজ করছিলেন হার্দিক। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলে গেছেন নিয়মিতই।
ব্যাটিংয়ে উইলিয়ামসনের সংযুক্তি ভালোই প্রভাব ফেলতে পারতো, কিন্তু তাকে খেলাতে গেলে কম্বিনেশনের নানান মারপ্যাচে পড়বে গুজরাট। রশিদ-মিলারের সাথে আরেক বিদেশি পেসার নিশ্চয়ই রাখতে চাইবে শামির অনুপস্থিতিতে, তাহলে বাকি থাকা জায়গায় নূর কিংবা উইলিয়ামসন। গুজরাটের আক্রমণের বড় অংশ বনে যাওয়া নূরকে ছাড়াই নামবে গুজরাট? হার্দিক ভালোই চিন্তায় ফেলে দিবেন তো তাহলে। অপশন আছে অবশ্য। বিজয় শঙ্কর, আভিনাব মনোহাররা ‘হার্দিক-সম ফাঁকা’ জায়গা কতটুকু পূরণ করতে পারবেন, তা নিয়ে তবু সংশয় থাকেই। আরেকটা বিকল্প হতে পারেন ওমরজাই। আফগান এই অলরাউন্ডার চারে-পাঁচে খেলার সামর্থ্য দেখালেও প্রশ্ন তার অভিজ্ঞতা নিয়ে। মিলারও হতে পারেন চারে ভালো পছন্দ। গুজরাটের ব্যাটিংয়ে নির্ভরতাও সেই মিলারের সাথে গিলই।
বোলিং- শামিকে মনে পড়বে বারবার?
বোলিং জেতায় টুর্নামেন্ট। গুজরাটকে টুর্নামেন্ট গেলবার না জেতালেও ফাইনাল পর্যন্ত নেওয়ায় বড় অবদান এই বোলিংয়েরই। আর টানা দুইবার ফাইনালে যাওয়ার পেছনে তো বড় কারিগর মোহাম্মদ শামি। ২০২৩ আইপিএলে ২৮ উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপ পাওয়া শামিকে ইনজুরিতে পাচ্ছে না এবার গুজরাট। ‘বিশাল বড় মিস’ তিনি নিঃসন্দেহেই, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ের বেলায়ই।
গতবার শামির চেয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই তো আর কেউ পাওয়ারপ্লেতে বেশি উইকেট এনে দিতে পারেননি। গুজরাটকে নিয়মিতই শুরুর ছয় ওভারে উইকেট তুলে এগিয়ে দেওয়া এই বোলার পাওয়ারপ্লেতে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। গুজরাট দলে ব্যাট-স্পিনে বিকল্পের যোগান যথেষ্টই, কিন্তু শামিকে হারানো তাদের পেস আক্রমণকেই কিছুটা ভঙ্গুর করে দিয়েছে।
পাওয়ারপ্লের মতো গুজরাট গেলবার মিডল ওভার ও ডেথে দুর্দান্তই ছিল। এমনকি মিডল ওভারে প্রতি উইকেটে তারাই সবচেয়ে কম রান খরচ করেছে। রশিদ ও নূর মাঝের ওভারে নিয়মিতই উইকেট তুলে দিয়েছেন, দুই আফগানের মিলিত শিকার ৪৩ উইকেট। ডেথেও গুজরাটের চেয়ে ভালো করেনি আর কোন দলই, শেষ চার ওভারে তাদের ইকোনমি ও গড় দুটিই ছিল সবার সেরা। মোহিত শর্মা স্লোয়ার-কাটারের অসাধারণ ব্যবহার দেখিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন পাওয়ারপ্লের পরে। মাত্র ১৩.৩৭ গড়ে রশিদের সমান ২৭ উইকেট পেয়েছিলেন মোহিত। মোহিত ও শামি, রশিদ ও নূর, সঙ্গে জশুয়া লিটল কিংবা আলজারি জোসেফকে নিয়ে গুজরাটের বোলিং আক্রমণ অসাধারণই ছিল। এবার সেখান থেকে এক শামির মিসিংই বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশি পেসে যে আস্থা রাখার মতো কেবল মোহিতই। নতুন সংযোজন উমেশ যাদব গতবার কলকাতায় ৮ ম্যাচে ১ উইকেট নিয়ে দুঃস্বপ্নের মৌসুমই কাটিয়েছেন। কার্তিক ত্যাগী হায়দরাবাদে দুই ম্যাচের বেশি পাননি গেল দুই আসর মিলে। আরেক দেশি আনক্যাপড বাঁহাতি পেসার সুশান্ত মিশ্রর সঙ্গে আগে থেকেই থাকা মিডিয়াম পেসার ধর্শন নালকান্ডে আছেন। নতুন বলে শামির মতো মুন্সিয়ানা জানা লোকের তো বিশ্বক্রিকেটেই অভাব। শামির জায়গা সর্বোচ্চ কতটুকু পূরণ করা যায়, সেটিই মূল বিষয়, কিন্তু কে হবেন সেই দেশি পেসার?
বিদেশি পেসে জশুয়া লিটলের সঙ্গে রোমাঞ্চকর অপশন স্পেন্সার জনসন। লিটল এতদিন ঠিকঠাক করলেও বড় কিছু করার সক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকে। আর সম্ভাবনাময় স্পেন্সারের তো প্রথম আইপিএল। অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই নতুন বলে ভালোই সুইং করাতে পারেন, কিন্তু এই বোলারের নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি থাকায় খরুচে হন প্রায় সময়ই। মোহিতের সঙ্গে দুই বিদেশি পেসার নিয়ে খেলার সাহস করবে তাহলে গুজরাট? রশিদ ও মিলারের সাথে দুজন বিদেশি পেসার রাখতে গেলে আবার নূরকে বাদ দিতে হয়। যেকোন ধরনের পিচেই ম্যাচউইনার স্পিন জুটি রশিদ-নূর ছাড়া নেহরা নামবেন কিনা, তা নিয়ে তাকে ভাবতে হবে অজস্রবার। ঘুরেফিরে তাই দায়িত্ব চলেই আসে দেশি পেসে, যেখানে গুজরাটের সমর্থকদের হয়তো শামিকেই মনে পড়বে বারবার!
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
সাই সুদর্শন ইতোমধ্যেই তার সামর্থ্যের জানান দিয়ে ফেলেছেন দারুণভাবে। গেলবার ৫১ গড়ে ৩৬২ রান করা সুদর্শন খেলতে পারেননি যদিও ৮ ম্যাচের বেশি। বড় কিছু করা হয়নি তাই। অসমাপ্ত কাজই যেন থেকে গেছে, যা এবার নিশ্চয়ই করে ফেলতে চাইবেন এই দৃষ্টিনন্দন ব্যাটার।
গেলবারের অবস্থান
১৪ ম্যাচে ১০ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে থেকেই প্লেঅফে গিয়েছিল। কোয়ালিফায়ারের প্রথমটি হারার পর দ্বিতীয়টি জিতে তারা জায়গা করে নিয়েছিল ফাইনালে, কিন্তু চেন্নাইয়ের কাছে হেরে খোয়াতে হয়েছে শিরোপা।