ম্যাচ উইনারের মেলায় এত নতুনে উড়বে মুম্বাইয়ের কেতন?
এলেন কারা, গেলেন কারা
যে এগারোজনকে ছেড়ে দিয়েছে মুম্বাই, তার মধ্যে ব্যাটসম্যান শুধু ট্রিস্টান স্টাবসই। বিদেশিদের মধ্যে জফরা আর্চার, ক্রিস জর্ডান, ঝাই রিচার্ডসন, রাইলি মেরেডিথ, ডুয়ান ইয়ানসেনকে ধরে রাখেনি। বিদেশি পেসের যোগান অবশ্য ভালোই করেছে মুম্বাই- দুই শ্রীলঙ্কান নুয়ান তুশারা ও দিলশান মাধুশাঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকান জেরাল্ড কোয়েটজে।
মাধুশাঙ্কা ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়ায় বদলি এনেছে কুয়েনা মাপাকাকে। দেশি তিন আনকোরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে কিনেছে মোহাম্মদ নাবীকেও। বড় সংযোজন তো আদতে তারা করেছে নিলামের বাইরে। ট্রেডে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে লখনৌয়ের কাছ থেকে এনেছে রোমারিও শেপার্ডকে। ট্রেডে আবার বেঙ্গালুরতে পাঠিয়ে দিয়েছে ক্যামেরন গ্রিনকে। দেশি যাদের ছেড়েছে, তাদের মধ্যে গেলবার ম্যাচ খেলা আছেন হৃতিক শৌকিন, আরশাদ খান, রামানদীপ সিং, রাগাভ গোয়াল। লেগ স্পিনার শ্রেয়াস গোপালকেও দলে ভিড়িয়েছে মুম্বাই৷ আর জেসন বেহরেনডরফ ইনজুরিতে পড়ায় তার বদলি এনেছে লুক উড।
সম্ভাব্য ১২
দেশি পেসে বিকল্প আকাশ মাধওয়াল ও অর্জুন টেন্ডুলকার। বাঁহাতি স্পিনে অপশন কুমার কার্তিকেয়া ও শামস মুলানি।
১। রোহিত
২। কিষান
৩। সুরিয়াকুমার
৪। তিলক
৫। হার্দিক
৬। ডেভিড
৭। শেপার্ড/ নবী
৮। ওয়াধেরা/ বিনোদ
৯। কোয়েটজে
১০। বুমরাহ
১১। পিয়ুশ
১২। উড
ব্যাটিং- ম্যাচ উইনারের মেলায় কোন রুপে রোহিত?
শেষবার যখন বড় নিলাম হয়েছিল, ২০২২ আইপিএলে তখন সর্বোচ্চ চারজনকে ধরে রাখার সুযোগ ছিল মুম্বাইয়ের। রিটেইন তালিকার ওই চারজনে থাকেনি হার্দিক পান্ডিয়ার নাম। রোহিত, বুমরাহ, সুরিয়াকুমারের সাথে ইশানকে রেখেছিল মুম্বাই। হার্দিক পরের দুই মৌসুমে নতুন পরিচয়ে সাফল্যের হাওয়ায় ভাসছিলেন যখন, মুম্বাই এক ধরনের দল গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই যাচ্ছিল। ২০২২ সালের ওই মৌসুমে তো সবার শেষে থেকেই টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল। গতবার চতুর্থ থেকে প্লেঅফে গিয়েছিল, তবে তাদের দল দেখে যেমন একটা ‘মুম্বাই’ বলে সমীহ আসত মনে, সেটি ছিল না গেলবারও। ব্যাটাররা অবশ্য আপত্তি জানাতে পারেন!
ব্যাটিংয়ে মুম্বাই গত আসরে যে গতিতে রান তুলেছে, তার থেকে বেশি পারেনি যে আর কোন দলই। ১৬ ম্যাচে ছয়বার করেছে দুইশ রানের স্কোর। গেল দুই মৌসুমের অন্যতম প্রাপ্তি তিলক ভর্মাও এখন পরীক্ষিত একজন। এবার সেখানে যোগ করুন, হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম পাঁচ ব্যাটারের পাঁচজনই ভারত জাতীয় দল পর্যায়ের ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়েই দেশি পাঁচ ম্যাচ উইনারে গড়া এমন দল আর পাবেন না একটিও।
প্রথম পাঁচের পরে আছে টিম ডেভিডের মতো বিধ্বংসী হিটার। তার সঙ্গে লেট-মিডল অর্ডারে এবার যোগ করেছে রোমারিও শেপার্ড ও মোহাম্মদ নাবিকে। দুজনের মধ্যে একজনেরই খেলার কথা, ক্যারিবিয়ান শেপার্ডের হিটিং পাওয়ার তো দারুণ। ছন্দে থাকলে নাবিও কম যান না ওই ভূমিকায়! দুই অলরাউন্ডার খেলিয়ে আট পর্যন্ত মুম্বাই রাখতে পারে পুরোদস্তুর ব্যাটার। সেখানে নেহাল ওয়াধেরা গেল দুই আসরে হিটিং সক্ষমতা দেখিয়েছেন ভালোই। বিশ্নু বিনোদও আছেন অপশন।
এমন ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে হার্দিকের চিন্তার খুব বেশি থাকবে না। চিন্তা-ভাবনা থেকে এবার মুক্ত তো থাকবেন তার ওপেনার রোহিত শর্মাও। এগারো বছর পর কোন মৌসুম রোহিত খেলতে নামবেন অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়া। রোহিতের মতো ব্যাটারের আইপিএল রেকর্ড তার নামের প্রতি বড্ড বেমানান। সবশেষ সাত আইপিএলে সর্বোচ্চ রান করেছেন ৪০৫। ছয় মৌসুমেই চারশের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। আর সবশেষ সাত মৌসুমেই তার গড় ত্রিশের নিচে যেমন ছিল, স্ট্রাইক রেটও কোন আসরে পাড়ি দেয়নি ১৩৫।
রোহিতের নেতৃত্বে মুম্বাইয়ের সাফল্যের যে গল্প লেখা হয়েছে, তাতে আরও অধ্যায় যোগ করার দায়িত্ব এখন হার্দিকের উপর। মুম্বাইয়ের জার্সিতে নতুন রুপেই শুরু হচ্ছে রোহিতের অধ্যায়। ব্যাট হাতেও হয়তো আইপিএলের রোহিতের নতুন গল্পের শুরু!
বোলিং- নতুনে উড়বে কেতন?
মুম্বাইয়ের মালিক আকাশ আম্বানির বড় আশা ছিল, তার দলের জার্সি গায়ে জফরা আর্চার ও জাসপ্রিত বুমরাহ একসাথে খেলবেন। কিন্তু ২০২২ আইপিএলে আর্চারকে যখন কিনলেন, সেবার ছিলেন না আর্চার। পরেরবার যখন আর্চার থাকলেন, বুমরাহ ছিলেন না। এবার বুমরাহ আছেন, কিন্তু আর্চার নেই মুম্বাইয়ের স্কোয়াডেই। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের জন্য ইসিবি তাকে এই আসর খেলতে মানা করেছে।
মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর গেল আসরে ভালোই ঝড় গেছে। প্রতিপক্ষ তাদের বিপক্ষে ছয়বার দুইশ রানের স্কোর গড়েছে। আইপিএলের ইতিহাসেই কোন এক মৌসুমে আর কোন দলের বিপক্ষে এতবার দুইশর স্কোর হয়নি। ডেথ ওভারে যেখানে ২০২৩ আইপিএলে আর কোন দলের ইকোনমি ১২ স্পর্শ করেনি, মুম্বাইয়ের ইকোনমি ছিল ১২.৪৪। এবার ফিরেছেন মুম্বাইয়ের বোলিংয়ের প্রাণ, সব পর্যায়েই স্পেশালিষ্ট জাসপ্রিত বুমরাহ। বোলিংয়ের ছবি বদলাতে বুমরাহ যদিও পাবেন অনেক নতুনের সঙ্গই।
পেসে কোয়েটজে দারুণ সংযোজন হতে পারেন, হাই-পেসে বোলিং করা আগ্রাসী ডানহাতি পেসার মাঝেমধ্যে খরুচে হলেও উইকেট তুলে প্রভাব রাখতে পারেন। লঙ্কান ‘পোডি মালিঙ্গা’ নুয়ান তুশারা আছেন। বাঁহাতি পেসার মুম্বাইয়ের একাদশে নিয়মিত চিত্র। এবার আছেন ইংলিশ লুক উড। তার সঙ্গে উনিশ না পেরুনো এক কিশোরকেও দেখতে পারেন মুম্বাইয়ের জার্সি গায়ে। গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় কুয়েনা মাপাকা সম্ভাবনায় ভরপুর। মুম্বাইয়ের স্কোয়াডে থাকা চার বিদেশি পেসারই এসেছেন প্রথমবারের মতো আইপিএলে। বড়মঞ্চে পদার্পণে তারা কেমন করেন, সেটিই দেখার বিষয়।
হার্দিক বোলিংয়ের জন্য ফিট আছেন, তিনি বোলিং করা মানেই বাড়তি পাওয়া। তার সাথে আরেক অলরাউন্ডারকেও খেলাতে পারে তারা। শেপার্ড মাঝেমধ্যে কার্যকর বোলিং করে দিতে পারেন। নাবির আগমনে স্পিন শক্তি বেড়েছে। পিয়ুশ চাওলা গত দুই মৌসুমেই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। ক্যারিয়ারের পড়ন্তবেলা বলে আবারও তার দিকে তেড়ে আসা প্রশ্ন আড়াল করে পারফর্ম করবেন, সে আশা মুম্বাইয়ের থাকলেও সেই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছেই।
দেশি স্পিনে উঁচুমানের বিকল্প নেই তাদের। বাঁহাতি কুমার কার্তিকেয়া ঠিকঠাক হলেও মূল স্পিনারের দায়িত্ব পালন করার জন্য এখনও প্রস্তুত নন। আর চাওলার ব্যাকআপ হিসেবে থাকা শ্রেয়াস গোপালও গত কয়েক আসর ধরে বেঞ্চেই নিয়মিত। মুম্বাইকে ভোগাতে পারে তাদের স্পিন আক্রমণ। তবে বুমরাহর সাথে সম্ভাবনায় পেস কতটুকু সঙ্গ দেয়, সেটিই হবে গুরুত্বপূর্ণ।
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
ব্যাটিংয়ে এত প্রসিদ্ধ নামের ভিড়ে কতটুকু সুযোগই পাবেন ব্যাটিং করার, তা নিয়ে থাকে সংশয়। নেহাল ওয়াধেরা এখনও সেভাবে তৈরি হননি, কিন্তু গত মৌসুমে ভালোই ঝলক দেখিয়েছেন তার ব্যাটিং সামর্থ্যের। দুইশর বেশি রান করেছেন ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে। রানের চেয়ে এবারও ইমপ্যাক্টফুল পারফর্ম্যান্সে অবদান রাখাটাই হবে তার থেকে মুম্বাইয়ের বড় পাওয়া।
গেলবারের অবস্থান
১৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে প্লেঅফে গিয়েছিল মুম্বাই, এলিমিনেটর জিতে পরে বিদায় নিয়েছে গুজরাটের কাছে হেরে কোয়ালিফায়ার থেকেই।