আইপিএলের বাস্তবতাই কি ক্রিকেটের ভবিষ্যত?
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্রভাব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কতটা? গত ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার আনকোরা এক টেস্ট দল। নেপথ্যে ছিল প্রোটিয়াদের এসএ টোয়েন্টি। এবার সেই নিউজিল্যান্ডও পাকিস্তানে যাচ্ছে প্রমিনেন্ট নয় ক্রিকেটারকে ছাড়া। যাদের মধ্যে আটজন ব্যস্ত আছেন আইপিএলে।
পাকিস্তান সফরের জন্য নিউজিল্যান্ডের ঘোষিত ১৫ সদস্যের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে নেই রাচিন রবীন্দ্র, কেইন উইলিয়ামসন, মিচেল স্যান্টনার, ড্যারিল মিচেল, ট্রেন্ট বোল্টরা। ডেভন কনওয়ে আপাতত ইনজুরিতে আছেন। তবে ফিট থাকলে শুরু থেকেই আইপিএলে চেন্নাইয়ের জার্সিতে দেখা যেত তাকে। কাউন্টি দল নটিংহামের সাথে চুক্তি থাকায় দলে রাখা হয়নি উইল ইয়াংকে।
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্যই আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে কিউইরা। এই সিরিজে অধিনায়কত্ব করবেন এক বছর পর দলে ফেরা মাইকেল ব্রেসওয়েল। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০২৩ সালের মার্চে। অবশ্য স্কোয়াডের ডেপথ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না সেভাবে। নিউজিল্যান্ড এর আগেও ২০২১ সালে আইপিএল ও টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছিল পাকিস্তান ও বাংলাদেশে।
আইপিএলের ব্যাপ্তি বা প্রভাব; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকখানি। বছরের শুরুর দিকের সময়, অর্থাৎ মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত বেশ লম্বা স্লটে চলে আইপিএলে। এই সময়ে রাখা হয় না বড় দলগুলোর আন্তর্জাতিক সূচি। আর পূর্ব নির্ধারিত সূচি থাকলেও নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলো ভরসা রাখে দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটারদের ওপর। মূল ক্রিকেটারদের এনওসি দিয়ে রাখা হয় আইপিএলের জন্য। যেমনটা এবার পেয়েছেন রাচিন-মিচেলরা।
অবশ্য এই নিউজিল্যান্ডেরই অনেক ক্রিকেটার আছেন, যারা টানা খেলার ধকল এড়াতে বা সুবিধামতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নাম লেখান না। জিমি নিশাম, ট্রেন্ট বোল্টদের মতো ক্রিকেটাররা দলের প্রয়োজনে ছুটে এলে, কেউই তারা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই। ব্যক্তিগত কারণ তো আছেই এর পেছনে। আছে আইপিএলের মতো বড় টুর্নামেন্টের প্রভাবও। নিউজিল্যান্ড বোর্ডও তাদের ক্রিকেটারদের এই স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে।
২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা-নরকিয়া-এনগিদি-মার্কো ইয়ানসেনরা বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে খেলেছিলেন আইপিএলে। প্রশ্ন উঠেছিল, জাতীয় দলকে বাদ দিয়ে কেন আইপিএলে যাচ্ছেন তারা? উত্তরটাও বেশ সহজ, পর্যাপ্ত টাকা। ২০২২ সালের প্রোটিয়াদের পারিশ্রমিক কাঠামো অনুযায়ী কেন্দ্রীয় চুক্তির শীর্ষে থাকা একজন ক্রিকেটার সর্বোচ্চ আয় করতেন, ৩ লাখ মার্কিন ডলার।
কিন্তু আইপিএলের এক মৌসুম খেলে সেবার কাগিসো রাবাদা যে টাকা পেয়েছিলেন, সেটা জাত্যীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে পেতে, সময় লাগত কমপক্ষে ছয় বছর। ২০২২ আইপিএলে রাবাদা ছিলেন সবচেয়ে দামী দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার। ৯ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে টাকা দলে নিয়েছিল পাঞ্জাব। যে কারণে আইপিএলের এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে অনেক বোর্ডই। এবং সেভাবেই কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে শুরু করে যাবতীয় সব চালিয়ে নিচ্ছে।
এই দক্ষিণ আফ্রিকাই নিউজল্যান্ডে টেস্ট অধিনায়ক করে পাঠিয়েছেইল নিল ব্র্যান্ডকে। যার তখনো আন্তর্জাতিক অভিষেকই হয়নি। সাথে ছিল আরও ৭-জন ক্রিকেটার যারাও এর আগে খেলেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। টেস্টের মতো বনেদী ফরম্যাটে প্রোটিয়াদের এমন অনভিজ্ঞ দল পাঠানোর কারণ ছিল টেস্ট সিরিজের সাথে মাল্টি মিলিয়ন টুর্নামেন্ট এসএ টোয়েন্টির সাংঘর্ষিক সূচি। তাই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দলের বড় তারকাদের ধরে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার।
টেস্টের মতো পুরনো ফরম্যাটেও আইপিএল-এসএ টোয়েন্টির আর্থিক কাঠামোর প্রভাবটা স্পষ্ঠ। সাদা বলের ক্রিকেটেও তাই।আগামী দিনগুলোতে খুব সম্ভবত এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই দল আর পরিকল্পনা সাজাবে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো।