মোস্তাফিজের পার্পল ক্যাপ পুনরুদ্ধার
নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আসরের শুরু থেকেই যেন দেখা যাচ্ছে মোস্তাফিজ ২.০; অথবা বলা ভালো - সেই পুরনো 'কাটার মাস্টার'। চেন্নাইয়ের উইকেটকে দারুণভাবে ব্যবহার করে যেন আবারও দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছেন মোস্তাফিজ। মাঝে দেশে ফেরায় এক ম্যাচ খেলা হয়নি তার। তবে পার্পল ক্যাপটা যে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা যেন নিজের হক আদায় করে নেওয়ার মতই আজ দলে ফিরে বুঝে নিলেন, সেটাও দুর্দান্ত এক স্পেলে। ৯ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মোস্তাফিজের এখন পর্যন্ত আসরটা কেমন ছিল?
প্রতিপক্ষ, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (৪/২৯)
আসরে এবার প্রথম ম্যাচটাই ছিল ভিরাট কোহলিদের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা করে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন মোস্তাফিজ, সেটাও সেই ২০১৬ সালের অভিষেক মৌসুমের পর এই প্রথম। এবারের প্রথম উইকেটটা এসেছিল তার হাত ধরেই। নিজের প্রথম ওভারেই গুড লেংথের এক কাটারে ফাফ ডু প্লেসিকে বোকা বানিয়ে ডিপ পয়েন্টে তালুবন্দি করান ফিজ। ওই ওভারের শেষ বলে রজত পাটিদারকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান। ম্যাচের ১২-তম ওভারে বল হাতে নিয়ে আবারও এরপর হানেন জোড়া আঘাত। ওই ওভারে আগে পান কোহলির বহুল আরাধ্য উইকেট। ডিপ মিড উইকেটে রাহানে ও রবীন্দ্রর দারুণ বোঝাপাড়ায় কোহলিকে ফেরানোর পর আরও একটি কাটারে সেদিন ক্যামেরন গ্রিনের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন ফিজ।
প্রতিপক্ষ, গুজরাট টাইটানস (২/৩০)
গুজরাটের সামনে সেদিন ২০৭ রানের সুবিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল চেন্নাই। শুরু থেকেই গুজরাট চাপে পড়ে গেলেও মোস্তাফিজের শুরুটা সেদিন ঝলমলে হয়নি। তবে শেষদিকে ফিরে ফিজ আরও একবার সেদিন মেলে ধরেছিলেন নিজেকে। চীপকে কাটারের পসরা সাজিয়ে গুজরাট ব্যাটারদের সুযোগ দেননি কোনও। সেই সাথে ১৬-তম ও ১৮-তম ওভারে পেয়েছিলেন উইকেটও। কাটার পড়তে না পেরে রশিদ খান সজোরে ব্যাট হাকিয়ে একেবারেই সংযোগ করতে পারেননি। এরপর ব্যাটার থেকে বেশ দূরে ফুল লেংথে বল ফেলে বাউন্ডারির জালে আটকে ফেলেন তেওতিয়াকে। দুবারই সেদিন ক্যাচ নিয়েছিলেন রাচিন।
প্রতিপক্ষ, দিল্লি ক্যাপিটালস (১/৪৭)
চীপক থেকে বের হয়ে প্রথম ম্যাচটা সেদিন একেবারেই ভালো কাটেনি মোস্তাফিজের। দিল্লির ব্যাটাররা সেদিন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন, যার অনেকটাই গিয়েছিল মোস্তাফিজের ওপর দিয়ে। সাবেক সতীর্থ ডেভিড ওয়ার্নার যেন তাকে সেদিন বাস্তবতায় ফিরিয়ে এনেছিলেন। পরে ডেথ ওভারেও সুবিধা করতে পারেননি। ৪৭ রান গুনে সেদিন তিনি পেয়েছিলেন শুধু ওয়ার্নারের উইকেট। সেটার জন্য অবশ্য পাথিরানাকে তার দুর্দান্ত উড়ন্ত ক্যাচের জন্য ধন্যবাদ জানাবেন ফিজ।
প্রতিপক্ষ, কলকাতা নাইট রাইডার্স (২/২২)
মাঝে এক ম্যাচ খেলা হয়নি বিধায় স্কোয়াডে আবার জায়গা হবে কি না তা নিয়ে চলছিল কানাঘুষা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ভিসার কাজ সারতে দেশে এসেছিলেন। ফিরতে দেরি হওয়ায় মাঝের ম্যাচটা খেলা হয়নি; চেন্নাইও বাজেভাবেই হেরেছে সেই ম্যাচ। তবে ঘরের মাঠে ম্যাচে মোস্তাফিজকে ঠিকই দলে রাখল চেন্নাই। আর কী দারুণভাবেই সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন ফিজ! প্রথম ওভার থেকেই এদিন অসাধারণ বল করলেন; বোলিং ফিগারটা তাই যেন ঠিক সত্যিটা তুলে ধরতে পারছে না। এমনকি শেষে ফিরেও যেভাবে রাসেলকে বোকা বানালেন; দুর্দান্ত এক শেষ ওভার করলেন, তার সবটাই যেন পুরনো ফিজকেই মনে করিয়ে দিল। রাসেল অনেকটাই ডিপে থেকে বাউন্ডারি মারার জন্য তক্কে তক্কে থাকেন বলেন তার আওতার বাইরে বল রাখার নির্দেশনা এলো। সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে রাসেলকে একেবারেই সুবিধা করতে দেননি। এমনকি টোপ ফেলে রাসেলকে ধরেও ফেলেছিলেন। কিন্তু ধোনি সহজ এক ক্যাচ লুফে নিতে না পারায় সেই যাত্রায় সফলতার মুখ দেখেননি ফিজ। অবশ্য শেষ ওভারে তাকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ধুঁকতে থাকা কলকাতা অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারকে প্রথম বলেই ফেললেন কাটারের ফাঁদে; পরে স্টার্কও তাকে পড়তে পারলেন না। দুর্দান্ত এক শেষ ওভারে মোস্তাফিজ দিলেন মোটে ২ রান, সেই সাথে জোড়া আঘাতে বুঝে নিলেন নিজের পার্পল ক্যাপ।