কেন এত রান হচ্ছে এবারের আইপিএলে?
এবারের আইপিএলে হচ্ছেটা কী! অহরহ দেখা যাচ্ছে দুশো ছাড়ানো, এমনকি প্রায় তিনশো ছোঁয়া ইনিংসও। রানের দিক দিয়ে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবারের আইপিএল।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে আইপিএলের ইতিহাসে ২৭৭ রানের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তিন সপ্তাহ পরেই সেই রেকর্ড ভেঙে ২৮৭ রানের নতুন চূড়ায় উঠেছে সেই সানরাইজার্সই। সেই ২৮৭ রান তাড়া করে আবার বেঙ্গালুরু থেমেছে ২৬২ রানে। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়েছে এই ম্যাচেই।
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে কলকাতা নাইট রাইডার্স তুলেছিল ২২৩ রান। রাজস্থান সেটা টপকে গিয়ে গড়েছে আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড! এখন পর্যন্ত ছয়টি সেঞ্চুরি হয়ে গেছে এবারের আইপিএলে। জস বাটলার একাই করেছেন দুটি, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ট্রাভিস হেড, সুনিল নারাইন করেছেন একটি করে।
ব্যাটারদের তান্ডবে এবারের আইপিএলে দুই ইনিংসেই দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরিয়েছে এখন পর্যন্ত এমন ম্যাচ দেখা গেছে পাঁচটি। কিন্তু কেন এত মুড়ি মুড়কির মতো রান হচ্ছে এবারের আইপিএলে? সামনে আসছে বেশ কয়টি জিনিস। ইমপ্যাক্ট সাব, ব্যাটিং সহায়ক উইকেট, মাঠের বাউন্ডারির সাইজ এমনকি ম্যাচ বলের প্রভাবের কথাও আসছে।
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার
বড় কারণ মনে করা হচ্ছে ইম্প্যাক্ট সাবকে। গত বছর থেকে আইপিএলে চালু হয়েছে এই নিয়ম। এবার সেই নিয়মের পুরো ফায়দা তুলছে দলগুলো। জস বাটলারের সর্বশেষ সেঞ্চুরির কথাই ধরুন। শুরুর একাদশে না থাকলেও ইম্প্যাক্ট সাব হিসেবে নেমে তার সেঞ্চুরিটা মোড় ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের। আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে শেষ বলে ম্যাচ জিতিয়েছেন রাজস্থানকে।
বাটলার যদি তীব্র গরমে কিপিং না করে শুরু থেকে খেলতেন তাহলে এই ইনিংসটা খেলতে পারতেন কি না এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। ইমপ্যাক্ট সাব হিসেবে নেমে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের স্ট্যামিনা আর মনোবল ধরে রেখেই ম্যাচ বের করে নিয়েছেন চেন্নাইয়ের শিভাম দুবে, মুম্বাইয়ের সূর্যকুমার যাদব, গুজরাটেরব সাইন সুদর্শনরাও ইমপ্যাক্ট সাবের আদর্শ উদাহরণ।
রিকি পন্টিং যেমন বলেছেন ইম্প্যাক্ট সাবের কারণে টপ অর্ডার ব্যাটারররা আরো সাহস নিয়ে খেলতে পারছেন। অনেক দলই এখন আট নাম্বার পজিশনে স্পেশালিস্ট ব্যাটার খেলাতে পারছে। এতে করে দলের ব্যাটিং গভীরতা অনেক বাড়ছে। ডেথ ওভারে রানও উঠছে দেদারসে। আবার ইরফান পাঠানের মতো কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন ইম্প্যাক্ট সাবের জন্য অলরাউন্ডারদের উপেক্ষা করা হচ্ছে। যেটা ক্রিকেটের ওপর ভালো প্রভাব নাও ফেলতে পারে।
ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট
আইপিএলে এত রান হওয়ার আরেকটি বড় কারণ মাঠ ও কন্ডিশনের প্রভাব। বেশির ভাগ মাঠে এখন একদম ফ্ল্যাট পিচে খেলা হচ্ছে। যেখানে বোলারদের কোনো সহায়তাই মিলছে না। তাই সোজা ব্যাটে সহজেই খেলতে পারছেন ব্যাটাররা। আগে কিছু কিছু পিচে স্পিন ধরলেও এবার তেমনটাও দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ ম্যাচ নতুন পিচে হওয়াতে তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না স্পিনাররাও। স্পিন ফ্রেন্ডলি উইকেটের জন্য বিখ্যাত চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামেও স্পিনাররা সুবিধা করতে পারছেন না। এবারের আইপিএলে স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা।
বাউন্ডারি সাইজ
মাঠের বাউন্ডারি সাইজও একটা বড় নিয়ামক আইপিএলের এই রান বন্যার। বিশেষত বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বাস্মী, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স আর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে। বিশেষত এই তিন মাঠেই আইপিএলের হাই স্কোরিং ম্যাচগুলো দেখা যায়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গড় বাউন্ডারি সাইজ ৬৫ মিটার। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের স্কয়ার বাউন্ডারি রিজিওনের সাইজও গড়ে এমনই।ইডেন গার্ডেন্সের স্কয়ার বাউন্ডারি সাইজও ৬৬-৬৮ মিটার। মজার ব্যাপার হচ্ছে ম্যাচের দুই ইনিংসেই দুইশো পেরিয়েছে দলীয় সংগ্রহ, এই তিন ভেন্যুতেই দেখা গেছে এমন।
ম্যাচ বল
আলোচনায় এসেছে বল পরিবর্তনের কথাও। এসজি বল দিয়ে উপমহাদেশে খেলা হলেও আইপিএল হয় কুকাবুরা বল দিয়ে। হার্শা ভোগলের মতো কেউ কেউ তাই ডিউক বল ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। কুকাবুরা আর ডিউক বলের মধ্যে বেশ কিছু ভিন্নতা আছে। কুকাবুরার চেয়ে ডিউক বলে বোলাররা বেশি সুইং-মুভমেন্ট পান। ডিউক বলের সিম ও চামড়ার গুণগত মানই এখানে এক্স ফ্যাক্টর। মূলত বোলারদের আরেকটু সহযোগিতার জন্যই ভোগলে এই পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও টুর্নামেন্টের মাঝপথে এমন বদল হবে না, এটা বলে দেয়াই যায়। প্রায় মাঝপথে এখন আইপিএল। এর মধ্যেই রানের ফোয়ারা ছুটেছে। টুর্নামেন্টের বাকিটায় কী হবে?