আইপিএল ২০২৪ : মোস্তাফিজের মতো দামে কম, মানে ভালো যারা
আইপিএলে বেশি দামে কাউকে কিনলেই পারফরম্যান্সের শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। মিচেল স্টার্ককেই দেখুন না! প্রায় ২৫ কোটি রুপিতে তাকে কিনেও আশানুরূপ পারফর্ম্যান্স পাচ্ছে না কলকাতা নাইট রাইডার্স। বিশাল প্রাইস ট্যাগের স্যাম কারান, ক্যামেরন গ্রিনরাও ভালো করতে পারছেন না। কিন্তু বিপরীতে অপেক্ষাকৃত কম প্রাইস ট্যাগের হয়েও পারফর্ম করছেন বেশ কজন ক্রিকেটার। যাদের বলা চলে দামে কম, কিন্তু মানে ভালো। এদের মধ্যে একজন মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান
এবারের নিলামের প্রথমাংশে তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই। কিন্তু এক্সিলারেটেড নিলাম থেকে শেষ মুহুর্তে তাকে দলে নিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে প্রথম ম্যাচেই নিয়েছিলেন চার উইকেট। নিজের করা প্রথম ওভারেই ফিরিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ফাফ ডু প্লেসি আর রজত পতিদারকে। দলের জেতা তিন ম্যাচে অবদান রেখেছেন। পাঁচ ম্যাচ শেষে নিয়েছেন দশ উইকেট। এখন পর্যন্ত আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। মাঝে মাথায় উঠেছিল পার্পল ক্যাপও। তবে তাকে ছাপিয়ে গেছেন চাহাল ও বুমরাহ।
বিদেশী পেসার হিসেবে তুলনামূলক অনেক কম দামেই তাকে পেয়েছে চেন্নাই। তবে বাংলাদেশের এই বাহাতি পেসার যা করেছেন বল হাতে, তার পেছনে চেন্নাইয়ের এই বিনিয়োগকে সার্থকই বলা চলে। পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট।
যদিও চাহাল আর বুমরাহর চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেছেন মোস্তাফিজ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেশে ফেরায় খেলতে পারেননি হায়দরাবাদের বিপক্ষে চেন্নাইয়ের ম্যাচ। খেলতে পারলে হয়তো পার্পল ক্যাপটা ফিজের দখলেই থাকত। পাওয়ারপ্লে আর ডেথ ওভারে চেন্নাইয়ের গো টু বোলারদের একজন হয়ে উঠেছেন।
রিয়ান পরাগ
গত আসরের রিয়ান পরাগের সাথে এবারের রিয়ান পরাগকে আপনি মেলাতেই পারবেন না। রাজস্থান রয়্যালসে এই যেন পুনর্জন্ম হয়েছে এই ব্যাটারের। ২০২৩ সালে ৭ ইনিংসে ব্যাট করে মাত্র ৭৮ রান করেছিলেন পরাগ। আর এবার মাত্র ৬ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে করে ফেলেছেন ২৮৪ রান। চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক পরাগ। তার চেয়ে এগিয়ে আছেন কেবল বিরাট কোহলি। কোহলি সব ম্যাচেই ওপেন করেছেন। পরাগ ৬ ইনিংসের সবকটিতে ব্যাট করেছেন চার নম্বরে। কোহলির চেয়ে কম বল খেললেও ফিফটি করেছেন তিনটি। দুটিতে ছিলেন অপরাজিত। স্ট্রাইকরেটও দেড়শো ছাড়ানো।
অবশেষে পরাগ তার ওপর করা রাজস্থানের বিনিয়োগের প্রতিদান দিচ্ছেন দু হাতে। ২০১৯ আইপিএলে ২০ লাখ রুপিতে রাজস্থানে যাত্রা শুরু। দুই মৌসুম পর তাকে ছেড়ে দিলেও ২০২২ সালে ৩ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে আবার তাকে ফেরায় ফ্র্যাঞ্চাইজি।গত আসরে না পারলেও এবারের আসরে ছুটছে রিয়ানের রান ফোয়ারা।
মায়াঙ্ক যাদব
২০২২ সালে মাত্র ২০ লাখ রূপিতে মায়াঙ্ক যাদবকে দলে নিয়েছিল লখনৌ সুপার জায়ান্টস। চোটের জন্য টানা দুই মৌসুম খেলতে না পারলেও এবার এসেছেন দৃশ্যপটে। তুমুল গতিতে নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছেন ব্যাটারদের। আইপিএল অভিষেকেই গড়েছেন এবারের আসরের দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ড। প্রায় ১৫৬ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে। অথচ তার ফিজিক, রান আপ দেখে বোঝার উপায় নেই এত জোরে বল করতে পারেন এই তরুণ পেসার!
পাঞ্জাবের বিপক্ষে অভিষেকে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। বেঙ্গালুরু ব্যাটাররাও পড়েছিলেন তার গতির তোপে। মাত্র ১৪ রানে নেন তিন উইকেট। ম্যাক্সওয়েল-গ্রিনরাও খাবি খেয়েছেন তার পেস সামলাতে। বিশেষ করে গ্রিন যে বলে বোল্ড হয়েছিলেন, ডেলিভারিটা উইকেটে ডিপ করার পর গতির তোড়ে লাইনই মিস করে বসেন তিনি। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
গতির সাথে তাকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে লিথাল বাউন্সারগুলো। এবারের আইপিএলে কমপক্ষে ৫০ বল করা বোলারদের মধ্যে তার ইকোনমি তৃতীয় সর্বনিম্ন। তবে ছন্দে থাকা এই পেসার গুজরাটের বিপক্ষে সাইড স্ট্রেইন নিয়ে উঠে গিয়েছেন এক ওভার করেই। না সারায় মিস করেছেন দিল্লীর বিপক্ষে ম্যাচটাও।
শশাঙ্ক সিং
শশাঙ্ক সিং, নাম বিভ্রাটে পাঞ্জাব কিংসে জুড়ে যাওয়া ক্রিকেটার। অন্য এক শশাংককে দলে নিতে চেয়ে তাকে কিনে ফেলেছিল পাঞ্জাব। এক নামের দুজন ক্রিকেটার থাকাতেই এই বিভ্রাট হয়েছিল নিলামে। এমনকি তাকে কেনার পরেও ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সব মিলিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিই বটে।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভুল করে কেনা এই শশাংকই হয়ে উঠছেন পাঞ্জাবের আসল রাজা। এবারের আসরে পাঞ্জাবের হয়ে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল শিখর ধাওয়ান। আসরে নিজের প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে ফিরলেও গুজরাটের বিপক্ষে প্রায় হারতে বসা ম্যাচটা একাই জিতিয়েছেন এক বল হাতে রেখে। হায়দরাবাদের বিপক্ষে ম্যাচটাও প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন। শেষ বলে ছক্কা মারলেও থেকে যায় দুই রানের ব্যবধান। সেই ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ৪৬* রানে। এই আসরে সব মিলিয়ে ৬ ইনিংসে ১৪৬ রান করেছেন প্রায় ১৮৫ স্ট্রাইকরেটে। এবার কমপক্ষে ৫০ বল খেলা ব্যাটারদের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
নিলামের টেবিলে তাদের নিয়ে অত কাড়াকাড়ি হয়নি। জোটেনি বড় প্রাইস ট্যাগ। তবুও পারফরম্যান্সে তারা উজ্জ্বল নিজ দলের হয়ে। এখন প্রায় মাঝপথে আইপিএল। মোস্তাফিজ ফিরে আসবেন আগামী পহেলা মে’র পর। বাকিরা থাকছেন মৌসুমের পুরোটাজুড়ে। কেমন কাটবে তাদের বাকি মৌসুম? দামে কম, মানে ভালো এই ক্রিকেটাররা কি এই ছন্দ ধরে রাখতে পারবেন?