পাঁচ ছক্কার ট্র্যাজেডি থেকে ‘দয়াল রিডেম্পশন’
২০২৩ আইপিএলে রিংকু সিংয়ের কাছে টানা পাঁচ ছক্কা খেয়ে ক্যারিয়ার ডুবতে বসেছিল ইয়াশ দয়ালের। এমনকি সেই ওভারের পর গুজরাটের হয়ে আর কোনো ম্যাচই খেলেননি গত আসরে। হারিয়ে যেতে বসা সেই ইয়াশ এবার দল বদলালেন আরসিবিতে। ইয়াশই তুললেন প্লে অফে। যেন এক চক্রপূরণ হলো এই বাঁহাতি পেসারের। লিখলেন এক কামব্যাকের গল্প! তুমুল চাপের মুখে ধোনির মতো ইতিহাস সেরা এক ফিনিশারকে থামিয়ে দিয়ে, জাদেজার মতো সেট ব্যাটারকে কোনো শট খেলতে না দিয়ে।
প্লে অফে উঠতে শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৭ রান। ইয়াশের করা ফুলটস ধোনির শটে গিয়ে পড়ল চিন্নাস্বামীর ছাদে। ১১০ মিটার লম্বা সেই ছয়ে ম্যাচে হেলে পড়েছিল চেন্নাইয়ের দিকেই। ইয়াশের ঘাবড়ে যাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। আহমেদাবাদের সেই ভুত যে দীর্ঘদিন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তাকে। নিজেই বলেছেন,ধোনির কাছে ছয় খাওয়ার পর কলকাতার বিপক্ষে সেই ম্যাচের কথাই তার মনে পড়েছে। কীভাবে ফিরলেন সেখান থেকে? উদ্দেশ্য ছিল কেবল একটা ভালো করা। সেটাই হয়েছে। তার ব্যাক অফ দ্য হ্যান্ড স্লোয়ারেই ধরা পড়েছেন ধোনি।
ধোনির কাছে ছয় হজমের পর ইয়াশের বাকি পাঁচটা ডেলিভারিই ছিল ব্যাক অফ দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার। অবশ্য ধোনির সেই ছয়টাই আরও ইফেক্টিভ করে তুলেছিল ইয়াশ দয়ালের সেই ওভারটাকে। প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে?
১১০ মিটার লম্বা সেই ছয় গিয়ে পড়েছিল স্টেডিয়ামের ছাদে। কাজেই বাধ্য হয়েই বল বদলাতে হয়েছিল আম্পায়ারদের। আর ভেজা বলের চেয়ে তুলনামূলক নতুন বলেই এই স্লোয়ারগুলো বেশি ইফেক্টিভ হয়। কোহলি আর ফাফ ডু প্লেসি মিলে এর আগে বেশ কবার বল বদলাতে চেয়েও পারেননি। সেটাই শাপেবর হিসেবে এনে দিল ধোনির এক শট।
দারুণ ইনিংস আর দুর্দান্ত এক ক্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন আরসিবি অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। তবে হাই ভোল্টেজ এই ম্যাচের পুরস্কারটা ফাফ উৎসর্গ করেছেন ইয়াশ দয়ালকেই। শেষ ওভারটা ইয়াশের করার কথাই ছিল না। শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে লোকি ফার্গুসনের সাথে বদলে তাকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন ফাফ ডু প্লেসি আর দিনেশ কার্তিক।প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়র্কার করতে গিয়েই লাইন মিস করে বসেন ইয়াশ। ব্যস! হিসেবের গড়বড় যা হয়েছিল ওখানেই শেষ।
কলকাতার বিপক্ষে সেই ম্যাচের পর ক্রিকেট থেকে দুরেই ছিলেন ইয়াশ। তার তৎকালীন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া বলেছিলেন, এক রাতে ওজন কমে গিয়েছিল সাত-আট কেজি। সেখান থেকে ফিরে এসেছেন। রিংকুকে করা যে ওভারটা তাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে দীর্ঘদিন, সেটা থেকে মূক্তি পেয়েছেন। বেঙ্গালুরুকে তুলেছেন প্লে অফে।
কোহলি- ডু প্লেসিদের আরসিবি প্রথম আট ম্যাচে জিতেছিল মাত্র একটা। সেখান থেকে টানা ছয় জয়ে লিখল ইয়াশের মতোই অবিশ্বাস্য কামব্যাকের গল্প। যে ইয়াশ দয়ালকে ক্রিকেট মনে রেখেছিল পাঁচ ছক্কা খাওয়া, শেষ ওভারে ২৬ রান ডিফেন্ড করতে না পারা বোলার হিসেবে, সেই ইয়াশকে এখন ক্রিকেট মনে রাখবে ধোনির ফেয়ারিটেইল এন্ডিং আটকে দেয়া বুদ্ধিমান এক পেসার হিসেবে। চিন্নাস্বামীর এই ম্যাচটা হয়ে রইল আরেকটা আইপিএল ক্লাসিক, যেটা নিয়ে কথা হবে আরও অনেকদিন।
স্পোর্টসই আমাদের জীবনে এসব মুহুর্ত এনে দেয়। যখন সুযোগ আসে সব বদলে দেয়ার, তখন ইয়াশের মতোই সেটা কাজে লাগাতে হয়। ইয়াশ আর আরসিবির সামনে চ্যালেঞ্জ এখন প্লে অফ। সেই বাধা টপকাতে পারলে লড়াই হবে শিরোপার। আরসিবি কি পারবে শেষ মুহুর্তের জাদুতে অধরা ট্রফিটা তুলে ধরতে? ঘুচবে কি ১৬ বছরের অপেক্ষা? কে হবেন নায়ক? ফাফ ডু প্লেসি, কোহলি নাকি এই ইয়াশ দয়ালই?