যুক্তরাষ্ট্র-ধাক্কার পর টি-টোয়েন্টিতে কয়টা দলের বিপক্ষে হারল বাংলাদেশ?
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা একেবারেই ভালো হচ্ছে না বাংলাদেশ দলের। গত মঙ্গলবারে হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়া-ভারত-পাকিস্তান-নিউ জিল্যান্ডের মতো 'বড়' দলগুলোর বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত ব্যর্থতা তো আছেই, আয়ারল্যান্ড-হংকং-নেদারল্যান্ড-স্কটল্যান্ডের মতো ‘ছোট’ দলগুলোর বিপক্ষেও সময়ে সময়ে হেরে বসার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ দলের। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নামও।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সর্বমোট ২১টা ভিন্ন দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৫টি দলের কাছে কখনো না কখনো পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। সেই তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, পাকিস্তান, স্কটল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাকি ৬টা দেশ, অর্থাৎ কেনিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, ওমান, পাপুয়া নিউগিনি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে কখনো পরাজিত হয়নি বাংলাদেশ।
তুলনার স্বার্থে যদি এশিয়ার অন্যান্য টেস্টখেলুড়ে দেশগুলোর পরিসংখ্যান ঘাঁটা হয়, দেখা যাচ্ছে, ১৭টি ভিন্ন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলেও ভারতকে পরাজিত করতে পেরেছে ৯টি দল, আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হিসাবটা ১৯ দলের মধ্যে ১২টি। ১৫টি ভিন্ন দলের মুখোমুখি হয়ে ১১টির কাছেই কখনো না কখনো হেরেছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান হেরেছে ২১ প্রতিপক্ষের মধ্যে ১৬টির কাছেই।
এর বাইরে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি হিসেবে যাদের ধরা হয়, তাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া কখনো না কখনো হেরেছে মুখোমুখি হওয়া ১২ দলের মধ্যে ৯টির বিপক্ষে, ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটা ১২ দলের মধ্যে ৯। ১৬ প্রতিপক্ষের মধ্যে ৯টি কোন না কোন সময়ে পরাজিত করেছে নিউ জিল্যান্ডকে, ১৩টা দলের মধ্যে ৮টার কাছে ধরাশায়ী হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩টা দলের মধ্যে ১২টা দলই হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, আয়ারল্যান্ড হেরেছে ৩০টি প্রতিপক্ষের মধ্যে ১৯টির বিপক্ষে।
সহযোগী দলগুলোর মধ্যে স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস মুখোমুখি হয়েছে ২৪টি দলের বিপক্ষে, যেখানে বিভিন্ন সময়ে যথাক্রমে ১৩টি ও ১৮টি দলের কাছে হার মেনেছে তারা। বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া জিম্বাবুয়ে মুখোমুখি হয়েছে ২৭টি ভিন্ন প্রতিপক্ষের, ১৬টি দলই কোন না কোন সময়ে পরাজিত করেছে জিম্বাবুয়েকে।
দলের নাম | প্রতিপক্ষ সংখ্যা | যে সংখ্যক প্রতিপক্ষের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে | যে সংখ্যক প্রতিপক্ষ কখনো হারাতে পারেনি |
---|---|---|---|
বাংলাদেশ | ২১ | ১৫ | ৬ |
ভারত | ১৭ | ৯ | ৮ |
পাকিস্তান | ১৯ | ১২ | ৭ |
শ্রীলঙ্কা | ১৫ | ১১ | ৪ |
অস্ট্রেলিয়া | ১২ | ৯ | ৩ |
ইংল্যান্ড | ১২ | ১০ | ২ |
নিউ জিল্যান্ড | ১৬ | ৯ | ৭ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ১৩ | ৮ | ৫ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ১৪ | ১২ | ১ |
আফগানিস্তান | ২১ | ১৬ | ৫ |
আয়ারল্যান্ড | ৩০ | ১৯ | ১১ |
স্কটল্যান্ড | ২৪ | ১৩ | ১১ |
নেদারল্যান্ডস | ২৪ | ১৮ | ৬ |
নামিবিয়া | ২২ | ১৪ | ৮ |
উগান্ডা | ২৬ | ১৪ | ১২ |
ইউএসএ | ১৫ | ৭ | ৮ |
নেপাল | ২৩ | ১৪ | ৯ |
পাপুয়া নিউ গিনি | ২১ | ১৩ | ৮ |
কানাডা | ৩৬ | ২২ | ১৪ |
ওমান | ২৭ | ১৮ | ৯ |
জিম্বাবুয়ে | ২৭ | ১৬ | ১১ |
আন্তর্জাতিক দলগুলোর টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান
তবে এই পুরো পরিসংখ্যানে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যায়, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলো অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছে, এদেরকে পরাজিত করা দলের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। এর মূল কারণ, বিগত বছরগুলোতে এই দলগুলোকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর মুখোমুখি হতে হয়নি, সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে তারা। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাইরে মূলত নিজেদের মতো সমশক্তির দলগুলোর সাথেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে তারা।
মুদ্রার উল্টো পিঠে, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, কানাডা, উগান্ডার মতো দলগুলোকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বিভিন্ন দলের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিভিন্ন দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ায় তারা লড়েছে অনেক বেশি সংখ্যক প্রতিপক্ষের সাথে। উদাহরণস্বরূপ উগান্ডার ব্যাপারটাই ধরা যাক। বিভিন্ন সময়ে বতসোয়ানা, ঘানা, লেসোথো, মালাউই, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, সিশেলেস, সোয়াজিল্যান্ড, তানজানিয়ার মতো আফ্রিকান দলগুলোর মুখোমুখি হয়েছে তারা, যে দলগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দিকেও। তাই মুখোমুখি হওয়া প্রতিপক্ষের সংখ্যার হিসেবে আইসিসির এই সহযোগী দেশগুলোই এগিয়ে থাকে আইসিসির পূর্ণ ও শক্তিশালী সদস্যগুলোর তুলনায়।
তবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিগত আসরগুলোর মতো প্রাথমিক রাউন্ড (অথবা বাছাইপর্ব) এর নিয়ম না থাকায় র্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দিকের অনেক দলই প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হবে র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দিকের দলগুলোর বিপক্ষে। এই পরিসংখ্যানেও তাই পরিবর্তন আসবে, সাথে হয়তো পাল্টে যাবে ইতিহাসও!