অস্ট্রেলিয়া টিম প্রিভিউ: এক্স ফ্যাক্টর হেড-ডেভিড, দুশ্চিন্তা ম্যাক্সওয়েলদের নিয়ে?
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে চমক কী? স্টিভেন স্মিথের বাদ পড়া, তরুণ ওপেনার জেক ফ্রেসার-ম্যাকগার্কের জায়গা না পাওয়া। অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াড সাজিয়েছে তাদের রেগুলার সেট আপেই। অর্থাৎ গেল এক-দেড় বছরে টি-টোয়েন্টিতে যে দলটা খেলেছে সেই দলটাই যাচ্ছে বিশ্বকাপে।
গ্রুপা কারা?
গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষে ওমান, ইংল্যান্ড, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ড। ইংল্যান্ড ছাড়া বাকি তিন দল তূলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষই।
কোন ভেন্যুতে খেলা?
গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া চারটি ম্যাচই খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। প্রথম দুই ম্যাচের ভেন্যু বার্বাডোজ, পরের দুটি অ্যান্টিগা। এই দুই ভেন্যুতেই টিপিক্যাল ক্যারিবিয়ান বাউন্সি উইকেট দেখা যায়। আর বল ক্যারি করা উইকেটে ট্রাভিস হেড দুর্দান্ত এক হিটার।
শক্তি কোথায়?
প্রথমেই আসবে অজিদের ওপেনিং জুটি। ক্যারিয়ারের শেষদিকে চলে আসা ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে অল ফরম্যাট ক্রিকেটার ট্রাভিস হেড।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পেস আর স্পিনের এগেইন্সটে হেডের স্ট্রাইকরেটের পার্থক্যই বলে দিচ্ছে পেসের বিপরীতে কতটা সাবলীল তিনি। পেসারদের বিপক্ষে ১৬০-এর বেশি স্ট্রাইকরেট তার। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত মাত্র একটা ইনিংসে একসাথে ওপেন করেছেন ওয়ার্নার-হেড। তবে তাদের জুটি ক্লিক করলে পাওয়ারপ্লেতে রান বন্যা ছোটাতে পারে অস্ট্রেলিয়া।
২০২৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির পাওয়ারপ্লেতে ১০ রান করে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের ওভারল ব্যাটিং অর্ডারটাও পাওয়ারফুল হিটারে ভরপুর। ওয়ার্নার-হেডের পর মিচেল মার্শ, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
এই ব্যাটিং অর্ডারে আলাদা ভ্যালু এড করবেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে বিশেষত বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কমপক্ষে দশ ম্যাচ খেলা অজি ব্যাটারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করতে পারেননি আর কেউ। লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে তার ওপর নজর থাকবে নিশ্চিত। অ্যাশেজ কিংবা বিশ্বকাপ; অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিং লাইন আপে ঘুরেফিরে তিনজনকেই দেখা যায়; মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজলউড। বিশ্বকাপে এই পেস ট্রায়োই থাকছেন ফ্রন্টলাইনে। সাথে অ্যাশটন অ্যাগার, টি-টোয়েন্টিতে অজিদের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী অ্যাডাম জ্যাম্পা আছেন স্পিন আক্রমণে।
এই কমপ্যাক্ট বোলিং অ্যাটাকের সাথে ম্যাক্সওয়েল, স্টয়নিস, গ্রিনের মতো অলরাউন্ডাররা দিচ্ছেন স্কোয়াডের ট্যাকটিক্যাল ফ্লেক্সিবিলিটি। যেটা অজিদের শক্তির অন্যতম জায়গা। চাইলে পেস ট্রায়োর যেকোনো দুজনকে একাদশে রেখে একজুন এক্সট্রা ব্যাটার খেলাতে পারবে অজিরা। সেটা হতে পারেন ম্যাথু ওয়েডের মতো কেউ। সেক্ষেত্রে স্টয়নিস-গ্রিনরা থাকছেন পেস অ্যাটাকের অপশন হিসেবে।
যদি অধিনায়ক মার্শ হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট কাটিয়ে বল করার মতো ফিট হয়ে উঠেন, সেক্ষেত্রে আরও একটা পেস বোলিং অপশন পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। একটু লো বাউন্সের উইকেটে স্পিনের বিপক্ষে হেডের স্ট্রাইকরেট ১২০ এরও কম। ব্যাটিং এভারেজ ২৮-এর নিচে।
তবে এবারের আইপিএলে স্পিন হিটার হিসেবে যেন তার বিবর্তন ঘটে গেছে। ১৬০ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন আইপিএলে।
তবে বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ান কন্ডিশনে আইপিএলের মতো ফ্ল্যাট উইকেট থাকবে না বলাই যায়। সেক্ষেত্রে হেডের ব্যাটিং এপ্রোচটা কেমন হয়, সেটা দেখার অপেক্ষা।
প্রশ্ন স্পিন সক্ষমতায়?
দুই ওপেনারের পর অজিদের সম্ভাব্য একাদশের মিডল অর্ডারে ডানহাতি ব্যাটারদেরই আধিক্য। মার্শ-ম্যাক্সওয়েল-স্টয়নিস-গ্রিন-ডেভিড কিংবা ইনগ্লিসদের ব্যাটিং অর্ডার হয়তো এক্সপোজড হয়ে যেতে পারে প্রতিপক্ষের কাছে। বিশেষত স্পিনারদের বিপক্ষে। এখানে অজিরা কাজে লাগাতে পারে তাদের ট্যাকটিক্যাল ফ্লেক্সিবিলিটিকে।
অ্যাগার বা ওয়েড একাদশে জায়গা পেলে ব্যাটিং অর্ডারে তাদের প্রোমোশন দিয়ে লেফট-রাইট কম্বিনেশন ট্রাই করার সুযোগ থাকছে তাদের সামনে। তবে অস্ট্রেলিয়া এই বছর যে কয়টা টি-টোয়েন্টি খেলেছে, বেশিরভাগগুলোতেই টপ ও মিডল অর্ডার ছিল ডানহাতি নির্ভর। কাজেই বিশ্বকাপে এই থিওরি থেকে সরে না আসার সম্ভাবনাই বেশি। আর দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া বলেই আরও জোর গলায় সেটা বলা যাচ্ছে। যেহেতু তারা প্রসেসেই বিশ্বাসী। ব্যাটিং অর্ডারে এনাফ ফায়ার পাওয়ার, ফিনিশার-পাওয়ার হিটারের ছড়াছড়ি, স্পিন কিংবা সিম বোলিং অপশন, ব্যাটিং ডেপথ আর ট্যাকটিক্যাল ফ্লেক্সিবিলিটি মিলিয়ে শক্তিশালী এক দল নিয়েই বিশ্বকাপে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপে তাদের একমাত্র সাফল্য ২০২১ সালের শিরোপা জেতা। এবারও কি সেই সাফল্য ফেরাতে পারবে অজিরা?