• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    'টেক্সাস টেল ফর দ্য এজেস': পাকিস্তানকে যেভাবে নাস্তানাবুদ করল যুক্তরাষ্ট্র

    'টেক্সাস টেল ফর দ্য এজেস': পাকিস্তানকে যেভাবে নাস্তানাবুদ করল যুক্তরাষ্ট্র    

    গ্রুপ পর্ব, ডালাস (টস-যুক্তরাষ্ট্র/বোলিং)
    পাকিস্তান - ১৫৯/৭, ২০ ওভার  (বাবর ৪৪, শাদাব ৪০, আফ্রিদি ২৩*, কেনজিগে ৩/৩০, নেত্রভাল্কার ২/১৮, আলী ১/৩০)
    যুক্তরাষ্ট্র- ১৫৯/৩, ২০ ওভার (মোনাঙ্ক ৫০, জোনস ৩৬*, গোস ৩৫, আমির ১/২৫, নাসিম ১/২৬, হারিস ১/৩৭)
    ফলাফল - ম্যাচ টাই (সুপার ওভারে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী)

    সুপার ওভার:
    যুক্তরাষ্ট্র - ১৮/১ (১)
    পাকিস্তান - ১৩/১ (১)


     

    ডালাসে স্বপ্নপূরণ হল যুক্তরাষ্ট্রের; আর পাকিস্তান হয়ত এটাকে বছর বছর ধরে মনে রাখবে 'ডালাস ডিজাস্টার' হিসেবে। ম্যাচ সুপার ওভারে গড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের হিসেব কষা রান তাড়ায়, সাথে অবশ্য পাকিস্তানও সাহায্য কম করেনি। সুপার ওভারে তাদের বদান্যতা যেন অন্য পর্যায়ে চলে গেল। এলোপাথাড়ি বোলিং, জীর্ণ ফিল্ডিংয়ের মাশুল তাদের তাই গুণতে হল কড়ায় গণ্ডায়। নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বাজিমাত করে যুক্তরাষ্ট্র হারিয়ে বসল কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে, সেই সাথে পেয়ে গেল টানা দ্বিতীয় জয়।

    ১৬০ রানের লক্ষ্যে শুরু থেকেই জয়ের মানসিকতাটা স্পষ্ট ছিল যুক্তরাষ্ট্র ব্যাটারদের মধ্যে। আমির, আফ্রিদি, নাসিমদের ভয় না পেয়ে বুঝেশুনে খেলে এগিয়ে যান দুই ওপেনার মোনাঙ্ক পাটেল ও স্টিভেন টেইলর। মোনাঙ্ক তো তৃতীয় ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিলেও ইফতিখার ঝাঁপ দেননি বিধায় বেঁচে যান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়ে টেইলরকে ফেরান নাসিম। তার পরের বলেই উইকেটে আসা গোসকেও ফেরানোর সুযোগ তৈরি করলেও এবার ইফতিখার স্লিপে ক্যাচ ফেলে দেন। সেই গোস পরে ঠিকই গলার কাঁটা হয়ে বিধে থাকেন।

    পাওয়ারপ্লেতে ৪৪ রান তোলার পর যেন ওভার ও বোলার হিসেব করেই খেলে চলেছিলেন অধিনায়ক মোনাঙ্ক ও গোস। মাঝে মোনাঙ্ক কিছুটা রয়েসয়ে খেললে বাউন্ডারি বের করার দায়িত্বটা বুঝে নেন গোস। মাঝ ওভারে হারিস বা শাদাব কাউকেই চেপে বসতে দেননি তিনি। বাধ্য হয়ে বাবর ইফতিখারকে আক্রমণে আনলে সেখান থেকে গিয়ার পাল্টান মোনাঙ্কও। পরের ওভারে শাহীন আফ্রিদিকে টানা দুটো দারুণ চার-ছয়ে ফিফটিও তুলে নেন যুক্তরাষ্ট্র অধিনায়ক। ১৩-তম সেই ওভারেই দলীয় শতরান ছুঁয়ে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র।

    সেখান থেকেই যেন টনক নড়ে পাকিস্তানের। ভেতরে ঢোকা এক গুড লেংথ বলে পরের ওভারের প্রথম বলেই ২৬ বলে ৩৫ রানে থাকা গোসের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হারিস। পরের ওভারে প্রথম বলেই আমিরকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ৩৮ বলে মোনাঙ্কের ৫০ রানের দারুণ ইনিংস। ১৪-১৯ ওভারে ৪১ রান তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র; মনে হচ্ছিল স্নায়ু ধরে রেখে পাকিস্তান জয়টা পেয়েই যাচ্ছে। তবে প্রথম ম্যাচেই রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলা অ্যারন জোনসের ভাবনায় সেসব ছিল না।

    শেষ ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের দরকার ১৫ রান। হারিসের গতি যে ব্যবহার করতে পারেন সেটা তার মাথায় ছিল; সেই সাথে নিজের পেশির ওপর তার আস্থাটা তার শটেই বোঝা যায়। যেই হারিস ইয়র্কার মিস করলেন ওমনি ৪র্থ বলটা মাঠছাড়া করলেন জোনস। তবুও পরের বলে সিঙ্গেল নেওয়ার শেষ বলটা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। অন্য প্রান্তে থাকা নিতিশও তো কম যান না! মিড অফ আর মিড অনে ফিল্ডার থাকায় মিড অফের ওপর দিয়েই শেষ বলটা উড়িয়ে পেয়ে গেলেন চার!

    সুপার ওভারেও শুরু থেকেই তাদের মাঝে দেখা গেল একই প্রত্যয়। আমিরকে প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করলেন জোনস। তবে এরপর থেকেই মাঠে যেন হাস্যরসাত্মক ফিল্ডিংয়ের হিড়িক পড়ে গেল। এক দিকে আমির বাঁহাতি ব্যাটারের কাছে লাইন মিস করে ওয়াইড গুনছেন তো অন্যদিকে একের পর এক ওভারথ্রো করেই যাচ্ছে পাকিস্তানি ফিল্ডাররা। শেষ বলটায় তো দুই বার ওভারথ্রো করে বসল তারা। মাত্র এক বলে বাউন্ডারি হলেও তাই সুপার ওভারে যুক্তরাষ্ট্র তুলে ফেলে ১৮ রান! সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাস পেয়ে যায় স্বাগতিকরা।

    টেক কোম্পানিতে কাজ করা পার্ট টাইম ক্রিকেটার নেত্রভাল্কারের হাতে বল তুলে দেওয়া হলে প্রথম বল থেকেই লেগ সাইডের বাউন্ডারিতে দুটো ফিল্ডার রেখে ওয়াইড ইয়র্কারের পন্থায় আগান এই বাঁহাতি পেসার। ইফতিখার একবার তাকে বাগে পেয়ে বাউন্ডারি বের করলেও পরের বলেই লং অফে দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে থামেন তিনি। পরে শাদাব নামলে তিনিও সুবিধা করতে না পারলে পাকিস্তান আটকে যায় ১৩ রানে; আর যুক্তরাষ্ট্র মেতে ওঠে ইতিহাস গড়ার উত্তাল উদযাপনে।