সেই সাকিবই এখন বাংলাদেশের ভরসা!
তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম এবং মোস্তাফিজুর রহমান। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রথম পছন্দের অস্ত্র ছিলেন এই তিনজনই। তবে শরীফুলের ইনজুরির কারণে একাদশে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ এসেছিল তানজিম হাসান সাকিবের সামনে। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই সেই সুযোগটা দুহাত ভরে গ্রহণ করেছেন সাকিব।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজের প্রথম স্পেলেই টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন সাকিব। রিজা হেনড্রিকস, কুইন্টন ডি কক আর ট্রিস্টান স্টাবসের উইকেট তুলে শুরুতেই ম্যাচের চালকের আসনে বসিয়ে দেন বাংলাদেশকে। এর মধ্যে কুইন্টন ডি ককের উইকেটটা পেয়েই সবচেয়ে বেশি খুশি তিনি। প্রথম ওভারে, সাকিবের প্রত্যাশার বাইরেই ছক্কা-চার মেরেছিলেন ডি কক। সাকিবের মধ্যে তাই কাজ করছিল বাড়তি তাড়না।
উইকেট থেকে কিছুটা সাহায্য পেয়ে দুর্দান্ত লাইন-লেন্থ আর নিয়ন্ত্রিত সুইংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন সাকিব। ম্যাচের পরে জানিয়েছেন, এটিও ছিল দলীয় পরিকল্পনারই অংশ। নিজেদের মৌলিক কাজগুলো ঠিক রাখার পর বাকি সব কিছুর জন্য নির্ভর করতে চেয়েছিলেন পিচ আর বলের ওপর।
নিজের শেষ ওভারেও ভালো বোলিং করেছেন সাকিব। মাত্র পাঁচ রান দিয়ে শেষ করেছেন নিজের শেষ ওভারটা। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ করেছেন পুরো স্পেলটা। আর পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এমন স্পেল তাঁকে আত্মবিশ্বাস দেবে ভবিষ্যতেও। বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও লো-স্কোরিং ম্যাচটা জেতা হয়নি বাংলাদেশের। তবে ব্যাটসম্যানদের রান করতে না পারাকে নয়, সাকিব দুষছেন দুর্ভাগ্যকেই।
এর আগে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছিলেন সাকিব। পাওয়ারপ্লেতে করা তাঁর প্রথম স্পেলের দুই ওভারে মাত্র বারো রান নিতে পেরেছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। এরপর শেষ ওভারে সাকিব তুলে নেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের উইকেট। পরে যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, বাংলাদেশের সামনে তখন পরাজয়ের শঙ্কা। সেই অবস্থা থেকে, মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিয়ে দলকে জিতিয়েই ফেরেন তিনি।
এখন পর্যন্ত সাকিবের পারফরম্যান্সে খুশি টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচের পরে সংবাদ সম্মেলনে তাওহীদ হৃদয় জানিয়েছেন সাকিবের সক্ষমতার ওপর দলের আস্থার কথা, 'আজও সে খুব ভালো বল করেছে। ম্যাচের মোড় ঘুরে গিয়েছিল ওর ওভারেই। ওকে দলে নেওয়াটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল আমাদের জন্য।'
তবে সব ঠিকঠাক থাকলে এই তানজিম সাকিবেরই হয়তো থাকা হতো না বিশ্বকাপ দলে। বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজেও মাত্র দুটো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ওই সিরিজে চার ম্যাচ খেলা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনই তখন তাসকিন-শরীফুল-মোস্তাফিজের পর বাংলাদেশের প্রথম পছন্দের পেসার। কিন্তু সাইফউদ্দিনের অফফর্ম, ইয়র্কার করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এবং নিবেদনের ঘাটতির ব্যাপারগুলো বিবেচনা করে নির্বাচকেরা দলে ডাকেন তানজিম সাকিবকে।
তবুও হয়তো একাদশে সুযোগ হতো না তার। কিন্তু গা গরমের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে শরীফুলের ইনজুরিতে কপাল খোলে সাকিবের। আর এখন পর্যন্ত সেই সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।
হঠাৎ প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগানোর নজির আগেও রেখেছেন সাকিব। গত বছরের এশিয়া কাপে ভারতে বিপক্ষের ডেড রাবার ম্যাচে অভিষেক হয় সাকিবের। দারুণ বোলিং করে নজর কাড়েন তিনি। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কার্যকর বোলিং করেছিলেন তিনি। আলো ছড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও। এর আগে ২০২০-এর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কথা কে-ই বা ভুলতে পারে! ওই বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণের নেতৃত্বেও ছিলেন তানজিম সাকিব। বিশ্বকাপের ফাইনালেও দেখা গিয়েছিল আক্রমণাত্মক তানজিমকে।
সেই আক্রমণাত্মক মানসিকতাটা নিয়ে জাতীয় দলেও এসেছেন তানজিম। সুযোগ পেলেই নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন, বোলিং-ব্যাটিংয়ে চেষ্টা করছেন প্রাপ্ত সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে। এক মাস আগেও যিনি অনিশ্চিত ছিলেন বাংলাদেশ দলে, এখন তাঁকে ছাড়া কল্পনাই করা যাচ্ছে না বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। তাই জীবন যদি আপনাকে একটা সুযোগ দেয়, সেটাকে তানজিম সাকিবের মতো করেই গ্রহণ করুন!