'নার্ভস অফ স্টিল' নাঈব, নাভিনে আরনোস ভেইলে আফগান রূপকথা
সুপার এইট, কিংসটাউন (টস - অস্ট্রেলিয়া/ফিল্ডিং)
আফগানিস্তান - ১৪৮/৬, ২০ ওভার (গুরবাজ ৬০, ইব্রাহিম ৫১, করিম ১৩, কামিন্স ৩/২৮, জাম্পা ২/২৮, স্টয়নিস ১/১৯)
অস্ট্রেলিয়া - ১২৭, ১৯.২ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ৫৯, মার্শ ১২, নাঈব ৪/২০, নাভিন ৩/২০, নবী ১/১)
ফলাফল - আফগানিস্তান ২১ রানে জয়ী
আরনোস ভেইলে ইতিহাস গড়ল আফগানিস্তান। কোনো আইসিসি ইভেন্টে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখল তারা। আরও একবার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তাদের আশায় জল ঢালার যজ্ঞ সাজাতে শুরু করলেও স্নায়ু ধুরে রেখে গুলবদিন নাঈবের দুর্দান্ত স্পেল, নাভিন-উল-হকের অসামান্য ওপেনিং স্পেলে এবার ঠিকই হাসল আফগানরা।
কঠিন উইকেটে প্রথম ওভারেই লেগ স্টাম্পে পিচ করে অসাধারণ এক আউট সুইংয়ে রানের খাতা খোলার আগেই হেডের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন নাভিন। উইকেটে এসে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মার্শ প্রতি আক্রমণ করতে গেলে স্লোয়ারে তাকে বোকা বানান সেই নাভিনই। হাত খোলার সুযোগ খুঁজতে থাকা ওয়ার্নার পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে নবীকে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে পাওয়ারপ্লেতে ৩৩ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসে অজিরা।
তবে সেখান থেকে আবারও আফগানদের চোখ রাঙাতে থাকেন ম্যাক্সওয়েল। অবশ্য স্টয়নিসের সাথে গুরবাজের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর অস্ট্রেলিয়াকেও ছেড়ে কথা বলছিল না আফগানরা। ১১-তম ওভারে দারুণ এক বাউন্সারে স্টয়নিসকে সেই গুরবাজের ক্যাচে ফিরিয়ে রাস্তাটা তৈরি করা শুরু করেন নাঈব। এক প্রান্ত ধরে রেখে স্পিনারদের এক হাত নিয়ে ৩৫ বলে ফিফটি তুলে নেন ম্যাক্সওয়েল। তবে আফগানরা যেন অন্য প্রান্তে ত্রাস সঞ্চারের টোটকাটা এদিন পেয়ে গিয়েছিলেন।
ভেতরে ঢোকা এক বলে ডেভিডকে নাঈব ফেরালেও যখন আশায় ছিল অজিরা তখনই আক্রমণে ফিরে ম্যাক্সওয়েলকে থামান নাঈব। নাঈবের স্লোয়ারে অনেকটুকু শরীর প্রসারিত করে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় বল লেগে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে চলে গেলে সেখানে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন নূর। ৪১ বলে ৫৯ রানে ম্যাক্সওয়েল থামার পর রশিদকে সুইপ করতে ওয়েড থামলে আফগানরা বিশ্বাস করতে শুরু করে। শেষ কাঁটা হয়ে পথে দাঁড়িয়ে থাকা কামিন্সের স্টাম্প দারুণ এক অফ কাটারে উপড়ে ফেলে নাঈব সেই আশার পালেই লাগান জোর হাওয়া। পরে নিজের শেষ ওভার করতে এসে অ্যাগারকেও ফেরালে জয়ের খুব কাছে চলে আসে তারা। শেষ ওভারে জাম্পাকে থামিয়ে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ এনে দেন ওমরযাই।
কিংসটাউনে প্রথম ওভার থেকেই দেখা মিলছিল তীক্ষ্ণ ঘূর্ণি ও বাউন্সের। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা তাই দুহাত ভরেই নিয়ে আফগানরা নিজেদের ব্যাটিংটা সেরেছে ভালোমতই। আসরে যেখানে কোনো দলই শতরানের ওপেনিং জুটির দেখা পায়নি সেখানে এবারই তৃতীয়বারের মতো এই কীর্তি গড়লেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ-ইব্রাহিম জাদরান জুটি। তবে রেকর্ড শুধু আজ ওখানেই থেমে থাকেনি; টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েছেন প্যাট্রিক কামিন্স। শেষদিকে কামিন্স লাগাম টেনে ধরলেও ফিল্ডিংয়ে বেসামাল অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ লুফে নিয়ে মন্থর উইকেটে লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে আফগানরা।
রয়েসয়ে শুরু করে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই কামিন্সকে দুই চার মেরে হাত খোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দুজনে। পাওয়ারপ্লেতে ৪০ রান তোলার পর দুই আফগান ওপেনার উইকেটের মর্ম বুঝে খেলতে থাকেন। একাদশে ফেরা অ্যাগারকে সামলাতে দুজনের বেশ বেগ পেতে হলেও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেননি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি গড়ার পর স্টয়নিসের মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে হার মানেন গুরবাজ। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্লোয়ারে ডিপ স্কয়্যার কেগে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৪৯ বলে ৬০ রান করা গুরবাজ।
১১৮ রানের দারুণ সেই ওপেনিং জুটি ভেঙ্গেই অবশ্য ম্যাচে ফিরতে শুরু করে অজিরা। তবে বাজে ফিল্ডিং, ক্যাচ মিস তাদের পিছু ছাড়েনি। গুরবাজকে এর আগে সুযোগ দিয়েছিলেন স্টয়নিস, জাদরানও ফিফটি পেয়ে যান লং অনে অ্যাগারের ফিল্ডিং মিসের সুবাদে। তবে এরপরেই নিজের শেষ ওভার করতে এসে জোড়া আঘাত হানেন জাম্পা। ৪৮ বলে ৫১ রানে থাকা ইব্রাহিমকে থামানোর পর প্রায় এক বাউন্সারে ওমরযাইকে ফেরান জাম্পা।
সেখান থেকেই শুরু হয় কামিন্সের জাদু। উইকেট আরও ধরে আসায় একের পর এক স্লোয়ার ও কাটার দিতে থাকেন কামিন্স। আফগানরা রান রেট বাড়াতে রশিদ খানকে নামালেও ১৮-তম ওভারের শেষ বলে তাকে লং অনের ফাঁদে ফেলেন কামিন্স। স্বভাববিরুদ্ধ ফিল্ডিংয়ে পরের ওভারে হেজলউড উইকেট বঞ্চিত হয় ক্যাচ মিসে। শেষ ওভার করতে এসে অবশ্য সুযোগ পাওয়া জানাতের পর উইকেটে আসা নাঈবকেও কামিন্স থামান স্লোয়ারের ফাঁদে ফেলে। তবে সুপার হ্যাটট্রিকটা মিস হয়ে যায় পরের বলেই ওয়ার্নারের মতো ঝানু ফিল্ডার ডিপ স্কয়্যার লেগে সোজা ক্যাচ ফেলে দিলে। শেষ বলে চার মেরে নবী ৪ বলে ১০* রানে থেকে তাই আফগানদের এনে দেন লড়াইয়ের রসদ। সেই রসদ নিয়েই অজিদের খারাপ ফিল্ডিংয়ের দিনে অসামান্য বোলিংয়ের সাথে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ঠিকই জয় পেয়েছে আফগানরা।