কোহলির রাজসিক বিদায়; হার্দিক, বুমরাহ, আরশদীপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ভারত
ফাইনাল, ব্রিজটাউন (টস- ভারত/ব্যাটিং)
ভারত - ১৭৬/৭, ২০ ওভার (কোহলি ৭৬, অক্ষর ৪৭, দুবে ২৭, মহারাজ ২/২৩, নরকিয়া ২/২৬, রাবাদা ১/৩৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা - ১৬৯/৮, ২০ ওভার (ক্লাসেন ৫২, ডি কক ৩৯, স্টাবস ৩১, হার্দিক ৩/২০, বুমরাহ ২/১৮, আরশদীপ ২/২০)
ফলাফল - ভারত ৮ রানে জয়ী
একটা আইসিসি ট্রফির জন্য ১১ বছরের অপেক্ষা, একটা বিশ্বকাপের জন্য ১৩ বছরের অপেক্ষা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৭ বছরের অপেক্ষা - সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত। ভিরাট কোহলির অবসর ঘোষণার দিনে তিনিই ম্যাচ সেরা, রাহুল দ্রাবিড়ের শেষ ম্যাচে শিরোপা তারই হাতে - ভারতের জন্য রূপকথার মঞ্চ যেন তৈরি ছিল; দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয় ভেঙে ভারত সেটাই করে দেখাল।
১৭৭ রানের লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। হেন্ড্রিকস, মার্করাম দুজনেই ফিরেছিলেন আরশদীপ, বুমরাহর জুটির শিকার হয়ে। তবে চারে নামা স্টাবসকে নিয়ে পাওয়ারপ্লেতে ৪২ রান তুলে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। স্পিনারদের সামলে দারুণ খেলছিলেন স্টাবস। তবে হুট করে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প ফাঁকা রাখায় বল মিস করে অক্ষরকে উইকেট উপহার দিয়ে ২১ বলে ৩১ রানে ফেরেন স্টাবস। এতক্ষণ রয়েসয়ে খেলা ডি কক হাত খুলতে শুরু করেছিলেন কেবল, তবে ফাঁদ সাজাতেই সাজঘরে ফেরেন তিনিও। ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে আগের বলেই চার মারার পর সেখানে ফিল্ডার বসানো হলে সেখানেই ক্যাচ দিয়ে ৩১ বলে ৩৯ রানে ফেরেন ডি কক।
ডি কক ফিরলে জ্বলে উঠতে শুরু করেন ক্লাসেন। কুলদীপ, জাদেজা, অক্ষরদের কোনো সুযোগ না দিয়ে ভারতীয়দের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান তিনি। ২৪ বলে ফিফটি সারেন, অক্ষরের এক ওভারেই নেন ২৪ রান। ৩০ বলে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ৩০ রান, হাতে আছে ছয় উইকেট। অথচ সেখান থেকেই ম্যাচ হেরে বসল প্রোটিয়ারা। পান্ডিয়ার কিছুটা বাইরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ২৭ বলে ৫২ রানে ক্লাসেন ফিরলেই ঘুরতে শুরু করে ম্যাচের মোড়। শেষের পাঁচ ওভারে অসামান্য বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটারদের হাত খোলার সুযোগই দেননি ভারতীয়রা। আক্রমণে ফিরে বুমরাহ যখন ক্লাসেনের স্টাম্প উপড়ে ফেললেন ভারত যেন তখন থেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল। তবুও উইকেটে থাকা মিলারের ওপর ভরসা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। শেষ ওভারে ১৬ রান লাগলেও তাদের আশা ছিল। তবে হার্দিকের করা প্রথম বলেই লং অফে সূর্যকুমার যেভাবে ক্যাচ ধরলেন ম্যাচের ফলাফল ওখানেই লেখা হয়ে যায়। ১৭ বলে মিলারের ২১ রানের ইনিংসের অবসান ঘটিয়ে হার্দিক শেষ ওভারে দেন ৮ রান। ভারত তাই পেয়ে যায় তাদের কাঙ্ক্ষিত জয়।
এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছে ভারত। ব্যাটিং নিয়ে প্রথম ওভারেই কোহলি যেন বার্তা দিয়েছিলেন দিনটা নিজের করে রাখার। তবে পাওয়ারপ্লেতেই আকড়ে ধরেছিল প্রোটিয়ারা। নিজের প্রথম ওভারেই সুইপ করতে যাওয়া রোহিতকে ফেরানোর পর পান্টকেও থামান মহারাজ। উইকেটে এসে সূর্যকুমারও সুবিধা করতে না পেরে রাবাদার শিকার হয়ে ফেরেন। তবুও কোহলির দক্ষতার পাওয়ারপ্লেতে ৪৬ রান পেয়ে যায় ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকা লাগাম টেনে ধরলেও অক্ষর ম্যাচের দখলটা আবারও নিজের করে নেন। স্পিনারদের মাঝে একেবারেই নিষ্ফলা করে রাখেন বাতাসের সদ্ব্যবহার করে। শুধু স্পিনার নয়, রাবাদা, ইয়ানসেনদেরও এক হাত নিয়েছেন। মাঝে কোহলি শুধু প্রান্ত বদলে মনোযোগী হলে আক্রমনের ঝান্ডা বহন করেন এই অলরাউন্ডার। তবে নিজে ডাক দিয়ে দ্রুত নিজের প্রান্তে ফিরতে না পারলে তার অলস প্রচেষ্টার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে দারুণ এক থ্রোতে তাকে থামান ডি কক। ৩১ বলে ৪৭ রানে অক্ষর থামলেও খুব একটা অসুবিধা হয়নি ভারতের।
মাঝের সময়টায় অবশ্য ৩৯ বলে কোনো বাউন্ডারি পায়নি ভারত। সেখান থেকে ৪৮ বলে কোহলি ফিফটি পাওয়ার পরেই হাত খুলতে শুরু করেন। উইকেটে এসে দুবেও পেসারদের একহাত নেন। পুরো দিনেও নিজের লাইন লেংথ খুঁজে পাননি ইয়ানসেন। তাকেই লক্ষ্য বানিয়ে কোহলিও গিয়ার বদলালে ভারতকে দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ১৯-তম ওভারে সেই ইয়ানসেনের আঘাতেই থামলেও ৫৯ বলে ৭৬ রান করে ফাইনালে ঠিকই ফর্মে ফিরেছিলেন কোহলি। শেষ ওভারটায় জোড়া আঘাত হেনে নরকিয়া ভারতকে ১৭৬ রানের বেশি যেতে দেননি। সেই সংগ্রহ নিয়ে ভারত পেয়ে যায় তাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ।