• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    কোপাতে এত আর্জেন্টাইন কোচ কেন?

    কোপাতে এত আর্জেন্টাইন কোচ কেন?    

    একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কি? চলতি কোপা আমেরিকার ষোলটা দলের মধ্যে সাতটা দলের কোচই আর্জেন্টাইন। ফিল্টারটাকে আরো ছোট করে শুধু দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, দশটা দলের মধ্যে ছয়টা দলকেই কোচিং করাচ্ছেন আর্জেন্টাইন কোচেরা। কিন্তু কোপাতে আর্জেন্টাইন কোচদের আধিক্যের কারণ কী?

    কনমেবলের আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, চিলি, প্যারাগুয়ে, এবং কনকাকাফের কোস্টারিকা, এই প্রতিটি দলের কোচই আর্জেন্টাইন। আর এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৫ কোপা আমেরিকার চার সেমিফাইনালিস্ট দলের কোচই ছিলেন আর্জেন্টাইন। ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালের দুটো দলের কোচের জন্মস্থান ছিল আর্জেন্টিনা।

    ঐতিহাসিকভাবে আর্জেন্টিনা ফুটবল গ্রেটদের দেশ। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, দিয়েগো ম্যারাডোনা এবং লিওনেল মেসির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় এসেছেন আর্জেন্টিনা থেকেই। এর পাশাপাশি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবল-মস্তিষ্ক সিজার লুইস মেনোত্তিও এসেছিলেন আর্জেন্টিনা থেকে। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো এই কোচের অধীনে খেলেছে বার্সেলোনা, বোকা জুনিয়র্স এবং রিভারপ্লেটের মতো দলগুলো। আমৃত্যু আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর অব ফুটবল পদেও ছিলেন তিনি।

    আর্জেন্টাইন কোচদের অন্যতম বড় গুণ, তাঁরা একই সাথে ভালো ট্যাকটিশিয়ান এবং নেতা হয়ে থাকেন। আর যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিতে পারেন নিজেদের কাজ দিয়েই।

     

    কলম্বিয়ার ব্যাপারটাই দেখা যাক। ২০২২ সালে, নেস্তর লরেঞ্জো যখন কলম্বিয়ার কোচ হলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠলো সমালোচনার ঝড়। সমর্থকেরা মজা করে এমনটাও বললেন, 'কলম্বিয়ার কোচ হতে নাকি আর্জেন্টিনার পাসপোর্ট লাগবে!'

    কলম্বিয়া ও কোস্টারিকার সাবেক কোচ হোর্হে লুইস পিন্টোও লরেঞ্জোকে নিয়োগের সমালোচনা করেছিলেন এভাবে, 'লরেঞ্জোকে নিয়োগ দিতে দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। কলম্বিয়া জাতীয় দলকে কোচিং করানোর কোন যোগ্যতাই নেই ওর।'

    সমালোচনার কারণও মূলত দুটো। প্রথমত, লরেঞ্জোর আগে কলম্বিয়ার কোচ ছিলেন রেইনালদো রুয়েদা, যাঁকে কলম্বিয়াতে খুব বেশি রেট করা হয়। দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলম্বিয়ার দ্বিতীয় আর্জেন্টাইন কোচ হলেন লরেঞ্জো। এর আগে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল অবধি কলম্বিয়াকে কোচিং করিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকারম্যান। দলের কোচ হিসেবে এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আরেকজন আর্জেন্টাইনের আগমনকে স্বাগত জানাতে পারেনি কলম্বিয়ানরা। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পরই সব চিত্র পাল্টে দিলেন লরেঞ্জো। কোপা আমেরিকা শুরুর আগে টানা ১৯ ম্যাচ রইলেন অপরাজিত।

     

    আর্জেন্টিনার কোচদের আরেকটা বড় গুণ, দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোর সংস্কৃতির সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন। এই কারণেই, জাতীয় দলের পাশাপাশি ঘরোয়া লিগেও আর্জেন্টাইন কোচদের চাহিদা রয়েছে। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগেও নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে চলেছেন আর্জেন্টাইনরা। অ্যাটলেটিকো মিনেইরো, ভাস্কো দা গামা, ইন্টারন্যাসিওনাল, ক্রুজেইরো, ফোর্তালেজা প্রভৃতি দলগুলোর কোচিং করাচ্ছেন আর্জেন্টাইনরাই।

    অপর দিকে, আর্জেন্টাইন লিগে ব্রাজিলীয় কোচদের উপস্থিতি প্রায় নগণ্য। বোকা জুনিয়র্সের ইতিহাসেই মাত্র নয়জন বিদেশী ম্যানেজার ছিলেন, যাদের মধ্যে মাত্র দুইজন ব্রাজিলীয়। আর শুধু দক্ষিণ আমেরিকা নয়, আর্জেন্টাইন কোচরা ভালো করছেন পুরো বিশ্বজুড়েই। দিয়েগো সিমিওনে, মরিসিও পচেত্তিনো, জেরার্ডো মার্তিনো, মার্সেলো গ্যায়ার্দোরা কোচিংজগতের পরিচিত মুখ।

     

    আর্জেন্টিনার কোচদের নিয়ে কথা হচ্ছে, অথচ লিওনেল স্কালোনির নাম বিশেষ ভাবে উচ্চারিত হবে না, এটা তো সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজার হিসেবে যখন দায়িত্ব নিচ্ছেন স্কালোনি, তাঁর ঝুলিতে ছিল না কোন দলের হেড কোচ হওয়ার অভিজ্ঞতা। অথচ দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্জেন্টিনাকে ঠিকই বদলে দিয়েছেন স্কালোনি। ২০২১-এর কোপা আমেরিকা জিতে দূর করেছেন আর্জেন্টিনার শিরোপা-খরা। এরপর ফিনালিসিমা জিতেছেন, আর বিশ্বকাপ জিতে ঘুচিয়েছেন ছত্রিশ বছরের অপেক্ষা।

     

    মার্সেলো বিয়েলসার কথাও আলাদা করে বলতেই হচ্ছে। আর্জেন্টিনার অন্যান্য কোচদের ওপর তো বটেই, বিয়েলসা প্রভাব রেখে চলেছেন পেপ গার্দিওলার মতো ভিনদেশী কোচদের ওপরও। এবং সেই প্রভাব এতটাই, ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকা এই কোচকে ‘কোচদের কোচ’ বললেও ভুল হবে না।

     

    সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আর্জেন্টাইন কোচদের দাপট চলবে এবারও। এক বা একাধিক আর্জেন্টাইন কোচকে ফাইনালে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না