স্পেন-জার্মানি: ফাইনালের আগে যেখানে ফাইনালের আমেজ
২০০৮ ইউরো ফাইনালটা স্পেনের জন্য এসেছিল নতুন যুগের বার্তা নিয়ে। সেবার জার্মানিকে হারিয়েই ইউরো জিতেছিল স্পেন। এবারও এই দুই দলের লড়াইয়ে সেই ফাইনালের আমেজ। কারণটাও পরিস্কার - কোয়ার্টার ফাইনালের আগে দুই দলই আছে দারুণ ফর্মে। স্পেনের তরুণরা যেভাবে জ্বলে উঠেছেন, সেভাবে আলো ছরাচ্ছেন জার্মান তরুণরা। ইয়ামাল, নিকোদের সাথে মুসিয়ালা, উইয়ারতজদের লড়াইটা তাই দেখার মতই হবে। রমরমা এই ম্যাচের আগেই দুই দলের পর্যালোচনা হয়ে যাক।
পরিসংখ্যান কী বলে?
-
ইউরোতে সবচেয়ে সফল দুই দল স্পেন ও জার্মানি , তিন বার করে জিতেছে। এবারের সবচেয়ে বেশি গোল দুই দলের, ফেবারিটদের মতো খেলেছে দুই দল
-
কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ইউরোতে কোনো স্বাগতিক বাদ পড়েনি
হেড টু হেড
জার্মানি |
ড্র |
স্পেন |
|
সব প্রতিযোগিতায় |
৯ |
৯ |
৮ |
ইউরোতে |
১ |
০ |
২ |
-
২০০৮ ইউরোতে জিতেছে স্পেন। ইউরোতে ১৯৮৮ সালের পর জার্মানি হারাতে পারেনি তাদের। ২০২২ বিশ্বকাপে দুই দলের ম্যাচ ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে।
-
গত সাত ম্যাচের ছয়টিতেই দুই দলের কেউ একটির বেশি গোল করতে পারেনি। একটা ম্যাচেই এর চেয়ে বেশি হয়েছে যখন স্পেন ৬-০ গোলে হারিয়েছিল জার্মানিকে।
সর্বশেষ ৫ ম্যাচে স্পেন
জর্জিয়া |
৪-১ |
আলবেনিয়া |
১-০ |
ইতালি |
১-০ |
ক্রোয়েশিয়া |
৩-০ |
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড |
৫-১ |
সর্বশেষ ৫ ম্যাচে জার্মানি
ডেনমার্ক |
২-০ |
সুইজারল্যান্ড |
১-১ |
হাঙ্গেরি |
২-০ |
স্কটল্যান্ড |
৫-১ |
গ্রিস |
২-১ |
ট্যাকটিকস ও ফর্মেশন
স্পেন
-
টুর্নামেন্টে একটা গোল খেয়েছে স্পেন। সর্বোচ্চ গোল জার্মানির (১০), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৯) স্পেনের।
-
বাঁ প্রান্ত থেকে স্পেনের কুকুরেয়া ওভারল্যাপ করায় নিকো ভেতরে ঢুকে অনেক সুযোগ তৈরি পারেন। ওদিকে ইয়ামালও একই কাজ করেন, সেই সাথে দুজনেই প্রচুর ক্রস করেন বক্সে। ফাবিয়ান রুইজ একটু অ্যাডভান্সড প্লেমেকার হিসেবে খেলছেন। স্পেনের পাসিং অ্যাকুরেসি আবার ৯০%!
-
স্পেনের যাদের বিপক্ষে ক্ষেলেছে এক ক্রোয়েশিয়া ছাড়া বাকিরা কেউই পজেশন নির্ভর খেলার চেষ্টা করেনি, তারপরও স্পেন তাদের সাথে ডিরেক্ট খেলেছে। জার্মানির সাথেও একই নীতিতে হয়ত হাঁটবে স্পেন। আগের দেখায় স্পেন অনেক বেশি পজেশন-ভিত্তিক ছিল। ৬৪% পজিশন নিয়েও করতে পেরেছিল মাত্র এক গোল।
-
৫৮.৩ % ডিফেন্সিভ ডুয়েল জিতেছে স্পেন, এরিয়াল ডুয়্যেল জিতেছে মাত্র ৫৩.৩%। যার মানে এয়ারে ভালো করতে চাইবে জার্মানি, সেক্ষেত্রে ফুলক্রুগ বড় অস্ত্র হতে পারে তাদের।
জার্মানি
টনি ক্রুস: ৪১১/৪৩১ (৯৫%)
*টুর্নামেন্টের ইতিহাসে বেস্ট পাসিং একুরেসি
লাইন ব্রেকিং পাস: ১২৫
- দুই টিমের প্লেয়িং স্টাইলে বিস্তর ফারাক নেই, তবে পার্থক্যটা স্পষ্ট। স্পেন ফ্ল্যাঙ্কে এবার ভয়ঙ্কর, এই দুই ফ্ল্যাঙ্ককে তারা সবচেয়ে ভালোভাবে ইউজ করে। নিকো-ইয়ামাল এই ইউরোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফরওয়ার্ড কম্বিনেশন। অপরদিকে জার্মানি খুবই সেন্ট্রালি খেলে। সেন্ট্রাল স্পেস ও হাফ স্পেস ধরে তারা অ্যাটাক করে, ফ্ল্যাঙ্ক খুব একটা ব্যবহার করে না তারা। প্রয়োজনে অবশ্য মুসিয়ালাকে জায়গা বানিয়ে ভেতরে ঢুকতেও দেখা যায়।
- লিরয় সানে এবার ইনভার্টেড উইঙ্গার হিসেবে খেলেছে, উইয়ারতজের জায়গায়। সেটা পারতপক্ষে কাজ না করলেও অন্য পন্থা বিবেচনা করা হয় না। সত্যি বলতে সানে দশ নম্বরের ধাচের খেলা খেলেনে না। কিমিখকে ভেতরে রেখে সানেকে হয়ত ফ্ল্যাঙ্কে খেয়ালতে পারে এবার। সমস্যা এখানে একটাই- জার্মানদের ডিফেন্সিভ কাভার সেক্ষেত্রে কমে যাবে।
- জার্মানদের সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গাটাও এই ম্যাচে ডিফেন্স। সুইজারল্যান্ডের সাথে বেশ ভুগেছে জার্মানির রক্ষণ। এখন তাদের চেয়েও দ্রুতগতির, আরও বেশি স্কিলফুল উইঙ্গার নিয়ে আসছে স্পেন।
- এই কনসার্নটা কীভাবে ট্যাকটিকালি সমাধান করেন নাগেলসমান সেটাই দেখার বিষয়। কারণ তাদের কোনো ডেসট্রয়ার সিডিএমও নাই। ক্রুস, আন্দ্রিখ কেউই ডিফেন্সিভলি রদ্রি, পালিনহার মতো না।
- এক কাজ করতে পারেন, ফুলব্যাকরা নিচে টাকড ইন অবস্থায় থাকতে পারে। অথবা হল্যান্ডের মতো একজনকে নিচে রেখে আরেকজনকে উপরে তুলতে পারেন। মিডফিল্ড নিয়েও চিন্তা করতে হবে নাগেলসমানকে। কারণ স্পেনের মিডফিল্ড সম্ভবত এই ইউরোর সেরা মিডফিল্ড। মিডফিল্ডে এমনিতেই দুজন থাকে মাত্র তাদের। তাই স্পেন সহজেই তাদের আউট-নাম্বার করে দিতে পারে। এখানে হয়তো এই নাম্বার টেনদের আরেকটু নিচে নেমে খেলতে হবে, অদলবদল করে। মুসিয়ালা, হ্যাভার্জ, উইয়ারতজ সবাই এই কাজটাই পারদর্শী।