কোপা-ইউরো: যেভাবে টাইব্রেকার জিততে হয়
ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই চলছে একই সাথে। দুটো টুর্নামেন্টই চলে এসেছে শেষের পথে, এখন শুধু সেমিফাইনাল আর ফাইনালের অপেক্ষা।
মজার ব্যাপার, দুটো টুর্নামেন্টেই এখন পর্যন্ত তিনটা করে টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোর রাউন্ড অব সিক্সটিনে পর্তুগাল-স্লোভেনিয়া ম্যাচটা গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে, এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল-ফ্রান্স আর ইংল্যান্ড-সুইজারল্যান্ড ম্যাচের জয়ী দল খুঁজতেও আশ্রয় নিতে হয়েছে পেনাল্টি শুটআউটের। ওদিকে কোপা আমেরিকার চার কোয়ার্টার ফাইনালের তিনটাই শেষ হয়েছিল অমীমাংসিত অবস্থায়। আর্জেন্টিনা-ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা-কানাডা আর উরুগুয়ে-ব্রাজিল, এই তিন ম্যাচ থেকে তিন সেমিফাইনালিস্ট খুঁজতে টাইব্রেকারের প্রয়োজন হয়েছিল।
পিকফোর্ডের সেভেই ইংল্যান্ডের টাইব্রেকার জয়; Image Source: Getty Images
তবে দর্শকদের জন্য সমর্থিত দলের জয়-পরাজয়ের পরে টাইব্রেকারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক যেটা, পেনাল্টি-টেকার ও গোলরক্ষকদের মধ্যে কৌশল আর মনস্তত্ত্বের লড়াইও দেখা গেছে এবারের ইউরো এবং কোপা আমেরিকাতে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই দুই আসরের মোট ছয়টা টাইব্রেকারের খুঁটিনাটি।
১। টাইব্রেকারের আগে দলগুলোর প্রস্তুতি
প্রস্তুতির ব্যাপারটা কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। গোলরক্ষক আর পেনাল্টি-টেকাররা যেমন নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নেন ট্রেনিংয়ে, তেমনি ম্যাচের মাঝে বা টাইব্রেকারের আগেও কিছু প্রস্তুতির ব্যাপার থেকেই যায়।
(ক) ব্যতিক্রমী টিম-মিটিং
ইংল্যান্ডের টিম মিটিংয়ে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক আর সম্ভাব্য পেনাল্টি-টেকাররা; Image Source: Getty Images
অতিরিক্ত সময়ের পরে আর টাইব্রেকারের আগে সাধারণত একটা টিম মিটিং করতে দেখা যায় দলগুলোকে। এই মিটিংটাও একেক দলের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হয় একেকভাবে। মিটিংয়ে সুইজারল্যান্ডের কোচ মুরাত ইয়াকিন যেখানে পুরো দলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন, ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট কথা বলছিলেন শুধুই গোলরক্ষক আর সম্ভাব্য পেনাল্টি-টেকারদের সাথে। দলকে চাপমুক্ত রাখার জন্য ইংলিশ টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত।
ম্যানেজার দরিভাল জুনিয়র দাঁড়িয়েছিলেন দলীয় মিটিংয়ের বাইরে; Image Source: Premier Sports
ওদিকে ব্রাজিল দলে আবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। টাইব্রেকারের আগে দলকে ব্রিফ করছিলেন দলের সহকারী কোচ। ম্যানেজার দরিভাল জুনিয়রকে দেখা গিয়েছিল টিম হাডলের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করতে। তাঁর মাথা চুলকানোর দৃশ্যটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
(খ) পানির বোতলে টাইব্রেকার-টোটকা
প্রতিপক্ষের শটের সম্ভাব্য দিক লেখা পিকফোর্ডের বোতলে; Image Source: Getty Images
জর্ডান পিকফোর্ডের পানির বোতলের ওই ছবিটা ইতোমধ্যেই আলোড়ন তুলেছে ফুটবল-দুনিয়ায়। সুইজারল্যান্ডের কোন পেনাল্টি-টেকার কোন দিকে পেনাল্টি নিতে পারেন, সেটা বোতলে লিখে এনেছিলেন পিকফোর্ড ব্যাপারটা কাজেও দিয়েছিল। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক ম্যানুয়েল আকাঞ্জির শটটা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
(গ) আগে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া
এমির বিপক্ষে মাটি-কামড়ানো শট নেননি ইকুয়েডরের খেলোয়াড়েরা; Image Source: Getty Images
টাইব্রেকারে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ যে কতটা ভয়ঙ্কর, সেটা জানেন না এমন ফুটবলপ্রেমী পাওয়া দুষ্কর। একই ব্যাপারটা জানতেন ইকুয়েডরের কোচিং স্টাফ আর পেনাল্টি-টেকাররাও। সেই কারণেই হয়তো তাঁরা চেয়েছিলেন তাঁদের পেনাল্টিগুলো এমির নাগালের বাইরে মারতে, এবং এ কারণেই মাটি-কামড়ানো কোন শট নিতে দেখা যায়নি তাঁদের। যদিও এই পরিকল্পনা সফল হয়নি পুরোপুরি, এমি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম দুটো শট।
২। পেনাল্টি-টেকারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা
গত কোপা আমেরিকা থেকেই টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি-টেকারদেরকে বিভ্রান্ত করে মনোযোগ নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার ডেভিনসন সানচেজ আর ইয়েরি মিনা, এরপর বিশ্বকাপে অঁরেলিয়েঁ চুয়ামেনিকে বিভ্রান্ত করেছিলেন তিনি। এবার সেটা ইউরোতে দেখা গেল ইংল্যান্ডের জর্ডান পিকফোর্ডের কাছ থেকেও।
(ক) আকাঞ্জিকে অপেক্ষা করিয়ে মিস করানো
পানির বোতল আনতে যাচ্ছেন পিকফোর্ড; Image Source: Sony LIV
সুইসদের পক্ষে প্রথম শট নিতে এগিয়ে এসেছিলেন ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড তখন ইচ্ছা করেই বাড়তি সময় নিতে থাকেন। নিজের অবস্থান থেকে গোলপোস্ট পর্যন্ত এসেও পানির বোতল ফেলে আসার ছুতোয় আবারও ফিরে যান কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে। এরপর ধীর পায়ে এসে দাঁড়ান পোস্টের নিচে, রেফারির সাথে কথাও বলতে থাকেন। আকাঞ্জি তখনও দাঁড়িয়ে আছেন পেনাল্টি স্পটে বল বসিয়ে।
আকাঞ্জিকে দাঁড় করিয়ে রেখে রেফারির সাথে কথা বলছেন পিকফোর্ড; Image Source: Sony LIV
এই মাইন্ডগেমে সফলও হয়েছেন পিকফোর্ড। আকাঞ্জির শটটা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
(খ) অদ্ভুত মুখভঙ্গি
পিকফোর্ডের সেই অদ্ভুত মুখভঙ্গি; Image Source: Sony LIV
আকাঞ্জির মিসের পরে দ্বিতীয় পেনাল্টি নিতে এসেছিলেন ফাবিয়ান শার। তাঁর বিপক্ষে মুখের অদ্ভুত ও হাস্যকর ভঙ্গি করে তাঁকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন পিকফোর্ড, তবে সফল হননি এই যাত্রায়। শার ঠিকই গোল করেন ওই পেনাল্টি থেকে
(গ) ফেক ডাইভ
বাম দিকে ঝুঁকে পড়ার অভিনয় করছেন পিকফোর্ড; Image Source: Sony LIV
পেনাল্ট-টেকারদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য যেকোন একদিকে ঝাঁপ দেওয়ার অভিনয় করেও পরবর্তীতে অন্যদিকে ঝাঁপ দেন গোলরক্ষকেরা। পিকফোর্ডের বোতলেও এমন নির্দেশনা ছিল। পিকফোর্ড চেষ্টা করেছিলেন প্রথমে বাঁ দিকে একটু ঝুঁকে পরবর্তীতে ডান দিকে ঝাঁপ দিয়ে পেনাল্টি-টেকারকে বিভ্রান্ত করতে।
কিন্তু ঝাঁপ দিলেন ডানদিকে; Image Source: Sony LIV
৩। গোলরক্ষকের মনোযোগ এবং সেভ করার দক্ষতা
পেনাল্টি ঠেকানোর জন্য গোলরক্ষকের মনোযোগের পাশাপাশি শট সেভ করার দক্ষতাও দরকার অনেক বেশি।
(ক) স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে কস্তার তিন সেভ
স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে তিনটা পেনাল্টি সেভ করেন কস্তা; Image Source: Getty Images
ইউরোর রাউন্ড অব সিক্সটিনে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম তিনটা পেনাল্টিই সেভ করেন পর্তুগালের দিয়োগো কস্তা। অখণ্ড মনোযোগ এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলের দিকে লক্ষ্য রেখে সঠিক দিকে ঝাঁপ দিয়ে প্রতিটা শট ঠেকিয়ে দেন তিনি।
(খ) ফ্রান্সের বিপক্ষে কস্তার ব্যর্থতা
ফ্রান্সের বিপক্ষে একটাও সেভ করতে পারেননি কস্তা; ; Image Source: Sony LIV
স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনটা শট ঠেকানো কস্তা ফ্রান্সের বিপক্ষে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। ফরাসিদের পাঁচ শটের একটাও ঠেকাতে পারেননি তিনি। আর ঠেকানো তো দূরের কথা, মাত্র একটা ক্ষেত্রে সঠিক দিকে ঝাঁপ দিতে পেরেছিলেন তিনি। অবশ্য তাঁর ব্যর্থতার পাশাপাশি ফরাসি পেনাল্টি-টেকারদের কৃতিত্বও দিতে হবে এক্ষেত্রে।
(গ) সঠিক দিকে ঝাঁপ দেওয়া
চারটা শটে সঠিক দিকে ঝাঁপ দেন অ্যালিসন; ; Image Source: Getty Images
টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষকে গোলবঞ্চিত করার উপায় দুটো। হয় পেনাল্টি-টেকারকে পোস্টের বাইরে মারতে হবে, অথবা গোলরক্ষককে শটের দিকে ঝাঁপ দিয়ে বলের নাগাল পেতে হবে। শট ঠেকানোর মতো শটের দিকে ঝাঁপাতে পারাটাও তাই জরুরি ব্যাপার।
টুর্নামেন্ট | টাইব্রেকারে শট | গোলরক্ষকের সঠিক দিকে ঝাঁপ | পেনাল্টি সেভ | পেনাল্টি মিস |
ইউরো | ২৪ | ১১ | ৪ | ১ |
কোপা আমেরিকা | ৩০ | ১৬ | ৭ | ৪ |
শটের দিকে ঝাঁপানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। উরুগুয়ের পাঁচ শটের চারটিতেই তিনি সঠিক দিক বেছে নিতে পেরেছিলেন, যদিও তাঁর দস্তানায় আটকেছে মাত্র একটি শট। আর্জেন্টিনার এমি মার্টিনেজ চার শটের তিনটাতে শটের দিকে ঝাঁপিয়েছিলেন। দুটো সেভ করেছিলেন, আরেকটা অল্পের জন্য পারেননি।
৪। পেনাল্টি-টেকারদের কৌশল ও সফলতা
টাইব্রেকার মানে শুধু গোলরক্ষকদের পরীক্ষা না, একই সাথে পেনাল্টি-টেকারদের ব্যক্তিগত কৌশলের পরীক্ষাও হয় এখানে।
(ক) নিচু শটের আধিক্য
এবারের ইউরোতে পেনাল্টি-টেকারদের মধ্যে নিচু করে শট নেওয়ার প্রবণতা বেশ লক্ষ্যণীয়। ইংল্যান্ড-সুইজারল্যান্ড ম্যাচে যেমন, ইংল্যান্ডের প্রথম চার শুটার, অর্থাৎ কোল পামার, জুড বেলিংহাম, বুকায়ো সাকা এবং আইভান টনি শট নিয়েছিলেন বটম লেফট বা বটম রাইট কর্নারকে লক্ষ্য করে, এবং সফলও হয়েছিলেন প্রত্যেক ক্ষেত্রে। উল্টো দিকে সুইজারল্যান্ডের ম্যানুয়েল আকাঞ্জির বটম মিড-রাইটে নেওয়া শটটা আটকে দিয়েছিলেন পিকফোর্ড। তবে ফাবিয়ান শার আর জেকি আমদুনি পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেছিলেন নিচু করে নেওয়া শটেই।
নিচু করে বেশি শট নিচ্ছেন পেনাল্টি-টেকাররা; Image Source: Getty Images
পর্তুগাল আর স্লোভেনিয়া ম্যাচেও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। স্লোভেনিয়ার তিনটা শট আটকে দিয়েছিলেন দিয়োগো কস্তা, যার মধ্যে একটি ছিল বটম রাইট কর্নারে। একই সময়ে পর্তুগিজ পেনাল্টি-টেকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ব্রুনো ফার্নান্দেজ এবং বার্নার্দো সিলভা যথাক্রমে বটম লেফট, বটম লেফট এবং বটম রাইট কর্নারে শট নিয়ে পর্তুগালের জয় নিশ্চিত করেন। পর্তুগাল-ফ্রান্স টাইব্রেকারের নয় শটের পাঁচটাই ছিল নিচু করে নেওয়া।
কোপা আমেরিকার পেনাল্টি-টেকারদের ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা কিছুটা ভিন্ন। আর্জেন্টিনা-ইকুয়েডর ম্যাচে আর্জেন্টিনার শেষ তিন শুটার, আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গঞ্জালো মন্তিয়েল এবং নিকোলাস ওতামেন্দি নিচু করে শট নিলেও ইকুয়েডরের চার শুটারের কেউই বটম কর্নারকে লক্ষ্য করে শট নেননি। ওদিকে সাডেন ডেথে গড়ানো ভেনেজুয়েলা-কানাডা ম্যাচে আবার ভেনেজুয়েলার ছয় শটের মধ্যে তিনটা ছিল নিচু করে নেওয়া, কানাডার ক্ষেত্রে সেটা ছয়ে দুই।
টুর্নামেন্ট | মোট শট | পোস্টের ওপরের দিকে | পোস্টের মাঝের দিকে | পোস্টের নিচের দিকে |
ইউরো | ২৪ | ৪ | ৫ | ১৫ |
কোপা আমেরিকা | ৩০ | ৭ | ১১ | ১২ |
উরুগুয়ে-ব্রাজিলের টাইব্রেকারে উরুগুয়ের প্রথম দুই পেনাল্টি-টেকার ফেদে ভালভার্দে এবং রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুর যথাক্রমে বটম লেফট ও বটম রাইটে শট নিয়ে সফল হয়েছিলেন। ওদিকে ব্রাজিলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শুটার, আন্দ্রেইস পেরেইরা এবং ডগলাস লুইজ বটম লেফটে শট নিয়েছিলেন। পেরেইরা সফল হলেও পোস্টে আটকে যায় লুইজের শটটা।
ওপরের কর্নারে শট নেওয়ার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য, এবং প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের শক্তিমত্তা বিশ্লেষণ করেই নিচু করে অধিক শট নিচ্ছেন পেনাল্টি-টেকাররা।
(খ) টনির নো-লুক পেনাল্টি
শটের আগে পুরোটা সময়জুড়ে কিপারের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন টনি, শটের সময়েও তাকাননি বলে দিকে। ব্যাপারটা পুরোপুরি ঠিক কিনা সেটা নিয়ে জর্ডেটের সন্দেহ আছে, তবে টনি বেছে নিয়েছেন তাঁর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটাই।
আইভান টনির 'নো-লুক' পেনাল্টি; Image Source: Getty Images
“আমার রুটিন অনুযায়ী, আমি এভাবেই পেনাল্টি নিই,” টনি বলেন, “অনেকে হয়তো এটাকে পাগলাটে ভাবতে পারে, তবে এটাই আমার রুটিন এবং আমি এতেই স্থির থাকতে চাই। ব্যাপারটা আমার জন্য এখনো ঠিকঠাক চলছে, আশা করি প্রয়োজনের সময়ে এভাবেই ঠিকমতো চলতে থাকবে।”
(গ) রেফারির বাঁশি বাজার পর সময় নেওয়া
দলের নাম | রেফারির বাঁশি ও শটের মাঝের সময় (সেকেন্ড) |
ইংল্যান্ড | ৫.২ |
সুইজারল্যান্ড | ১.৩ |
টাইব্রেকারে রেফারির পেনাল্টির জন্য বাঁশি বাজানোর পর খেলোয়াড়রা ঠিক কত সময় পরে শট নিচ্ছেন, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখে পেনাল্টির ফলাফলে। অনেক ক্ষেত্রে পেনাল্টি-টেকাররা বড় করে শ্বাস নিয়ে নিজেদের উত্তেজনাকে প্রশমিত করেন, এরপর ঠাণ্ডা মাথায় পেনাল্টি নেন। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা যেমন গড়ে ৫.২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সফল হয়েছেন, সুইসরা ১.৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে হেরেছেন।
পেনাল্টি-টেকার | গৃহীত সময় | ফলাফল |
আনহেল মেনা | ৭.৯৬ | সেভ |
অ্যালান মিন্ডা | ৩.৫৭ | সেভ |
জন ইয়েবোহ | ১.৯৮ | গোল |
জর্দি কাইসেদো | ৭.১৯ | গোল (প্রায় সেভ) |
আবার উল্টো ব্যাপারও আছে। রেফারির বাঁশি বাজার পর ইকুয়েডরের যেসব পেনাল্টি-টেকার অপেক্ষাকৃত বেশি সময় নিয়েছেন, এমি মার্টিনেজ তাঁদের ঠেকিয়েছেন বা প্রায় ঠেকিয়ে ফেলেছিলেন। যেমন মেনা আর মিন্ডার শট তিনি ঠেকিয়ে দিয়েছেন, আর কাইসেদোর শট ঠেকানোর খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে, টাইব্রেকারকে এখন আর শুধুই ভাগ্যের খেলা বলার কোনো সুযোগ নেই। পেনাল্টি শুটআউটের জন্য এখন আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতেই হয় দলগুলোকে। শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে নয়, বরং ট্যাকটিক্স আর অনুশীলন দিয়েই টাইব্রেকার জিততে হয় এখন।