লা লিগা ২৪/২৫: প্লেয়ারস টু ওয়াচ
লা লিগার ২০২৪-২৫ মৌসুমের পর্দা উঠে গেছে চলতি মাসের পনেরো তারিখেই। প্রায় ৯ মাস আর ৩৮০ ম্যাচের এই ম্যারাথন লিগটা এই মুহূর্তে রয়েছে একেবারে শুরুর পর্যায়ে। তারকায় ঠাসা লা লিগায় স্বাভাবিকভাবে দর্শকদের চোখটা থাকবে কিলিয়ান এমবাপে, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রবার্ট লেওয়ানডস্কি, জুড বেলিংহাম, লামিন ইয়ামাল, আঁতোয়ান গ্রিজমানদের ওপর। তবে নজর কেড়ে নিতে পারেন পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে থাকা খেলোয়াড়রাও। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, লা লিগার এই মৌসুমে কোন কোন খেলোয়াড়ের ওপর আপনার বাড়তি নজরটা রাখতেই হবে।
১. ফারমিন লোপেজ
ফারমিন লোপেজ; ছবি: Getty Images
সদ্যসমাপ্ত ইউরোতে স্পেনের হয়ে খুব বেশি গেমটাইম পাননি ফারমিন, তবে অলিম্পিকটা মাতিয়েছেন নিজের মতো করেই। মিডফিল্ডার হলেও বক্সে সময়মতো রান নিতে পারেন তিনি, গোল করার দক্ষতাটাও চোখে পড়ার মতো। অলিম্পিকে নিজে ৬ গোল আর ১ অ্যাসিস্ট তো করেছেনই, সাথে স্পেনকে জিতিয়েছেন স্বর্ণপদকও। গত মৌসুমে বার্সেলোনার হয়েও ১১ গোল ছিল তাঁর। সারা মাঠ দৌড়ে খেলার সক্ষমতা, প্রেসিং আর গোল করার পারদর্শিতার কারণে কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও তাঁকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ পাবেন না। অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ গাভি-পেদ্রি-অলমোর সাথেও সমানে সমানে টক্কর দিতে পারবেন ফারমিন।
২. আর্দা গুলার
আর্দা গুলার; ছবি: Getty Images
ভিনি-এমবাপে-রদ্রিগো-বেলিংহামের রিয়াল মাদ্রিদের শুরুর একাদশে মৌসুমের প্রথম ভাগে নিশ্চিতভাবেই জায়গা হবে না আর্দা গুলারের। তবে বেঞ্চ থেকে এসেও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা আছে গুলারের, গত মৌসুমে সেটা দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার। ইউরোতেও তুরস্কের হয়ে দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তিনি, ১ গোলের সাথে আছে দুটো অ্যাসিস্ট। লস ব্লাঙ্কোসদের দুর্দান্ত আক্রমণভাগের ওপরও চাপটা রাখবেন গুলার। নিয়মিত রাইট উইঙ্গার রদ্রিগো ভালো করতে না পারলে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগটাও এসে যেতে পারে গুলারের সামনে। আর এই তরুণ তুর্কির সেটপিসগুলোও চমৎকার, রিয়াল মাদ্রিদের ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ হওয়ার সবগুলো গুণ আছে তাঁর মধ্যে।
৩. রবিন লে নরমাঁদ
রবিন লে নরমাঁদ; ছবি: Getty Images
চলতি ট্রান্সফার উইন্ডোতেই রিয়াল সোসিয়েদাদ থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে পাড়ি জমিয়েছেন এই স্প্যানিশ সেন্টারব্যাক। বয়স মাত্র ২৭, এর মধ্যেই স্পেনের হয়ে ইউরোর ট্রফি জেতায় আত্মবিশ্বাসটাও তুঙ্গে থাকবে তাঁর। ইউরোতে স্পেনের হয়ে ৬টা ম্যাচে খেলেছেন লে নরমাঁদ। এই ছয় ম্যাচে দল হিসেবে স্পেন হজম করেছে মাত্র ৩টা গোল। অ্যাটলেটিকোর প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতে তাই কষ্ট হবে না নরমাঁদের, দলের ‘থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন’ সিস্টেমের রাইট সেন্টারব্যাক পজিশনটাও দখলে নেওয়ার কথা তাঁর।
৪. গিওর্গি মামার্দাশভিলি
গিওর্গি মামার্দাশভিলি; ছবি: Getty Images
আড়াই বছর ধরে ভ্যালেন্সিয়ায় নিয়মিত খেলছেন মামার্দাশভিলি, তবে পাদপ্রদীপের আলোটা কেড়েছেন সর্বশেষ ইউরোর পারফরম্যান্স দিয়ে। দলকে টেনেছেন শেষ ষোলো পর্যন্ত, আর নিজেও চার ম্যাচে করেছেন মোট ৩০টা সেভ। এর মধ্যে চেকিয়ার বিপক্ষেই ছিল ১১টা সেভ, পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে ছিল ৫টা। অবশ্য দলবদলের গুঞ্জন রয়েছে তাঁকে ঘিরে। তবে এখন পর্যন্ত যা খবর, তাতে ভ্যালেন্সিয়াতেই থাকছেন তিনি। আর ইউরোর পারফরম্যান্সটা স্প্যানিশ লিগে টেনে আনতে পারলে ভ্যালেন্সিয়ার চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সম্ভাবনাও বাড়বে।
৫. নিকো উইলিয়ামস
নিকো উইলিয়ামস; ছবি: Getty Images
ইউরোতে লামিন ইয়ামালের সাথে জুটি বেঁধে ইউরোতে একের পর এক প্রতিপক্ষকে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন নিকো। তবে ইউরো দিয়ে পৃথিবীর নজর কাড়লেও অ্যাটলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে নিকো ভালো করছেন কয়েক মৌসুম ধরেই। দারুণ গতি আর ড্রিবলিংয়ের এই লেফট উইঙ্গারের গোল করার দক্ষতাও বেশ ভালো। সাথে ইউরোতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে বার্সেলোনা আর পিএসজির মতো দলগুলোর নজরেও এসেছিলেন তিনি, যদিও শেষ পর্যন্ত বাল্যকালের ক্লাবের হয়ে আরো একটা মৌসুম কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
৬. পাউ কুবারসি
পাউ কুবারসি; ছবি: Getty Images
গত মৌসুমের শেষভাগে বার্সেলোনার হয়ে আলো ছড়িয়েছিলেন এই ১৭ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক। স্পেনের হয়ে ইউরোর স্কোয়াডে সুযোগ পাননি, তবে সুযোগ পেয়ে স্বর্ণপদক জিতেছেন অলিম্পিকে। প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের মুভমেন্ট দারুণভাবে আন্দাজ করতে পারেন কুবারসি, ট্র্যাকব্যাক করতে পারদর্শী বলে চাইলে দলের সামনে সুযোগ থাকে হাইলাইন ডিফেন্স নিয়ে খেলার। এর পাশাপাশি অসাধারণ লাইনব্রেকিং পাস দিতে পারেন তিনি। সব মিলিয়ে বার্সেলোনার লিজেন্ড রাফা মার্কেজের সাথেও অনেকে তুলনা করছেন তাঁকে। আরাউহো-ক্রিস্টেনসেন-এরিক-ইনিগোর মতো সেন্টারব্যাকদের ভিড়ে তরুণ এই স্প্যানিশকে কীভাবে ব্যবহার করছেন হ্যান্সি ফ্লিক, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে বার্সার এই মৌসুমের সাফল্যের সম্ভাবনাও।
৭. ফেডে ভালভার্দে
ফেডে ভালভার্দে; ছবি: Getty Images
ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ে চমৎকারভাবে ছয়টা মৌসুম কাটিয়ে ফেলার পর ফেডে ভালভার্দেকে সেই অর্থে স্পটলাইটের বাইরের খেলোয়াড় বলতে চাইবেন না অনেকেই। তবে এমবাপে-ভিনি-বেলিংহামের রিয়াল মাদ্রিদের মূল তারকা অবশ্যই ভালভার্দে নন, যদিও এই গ্যালাকটিকো দলটিতেও ভালভার্দের গুরুত্ব অনেক বেশি। ক্লান্তিহীনভাবে নব্বই মিনিট পুরো মাঠজুড়ে খেলার কারণে ভালভার্দের আলাদা সুনাম রয়েছে এমনিতেই, এর পাশাপাশি টনি ক্রুসের বিদায়ের পর মাদ্রিদের আট নম্বর জার্সিটাও উঠেছে ভালভার্দের পায়ে। উয়েফা সুপার কাপে গোল করে নিজের প্রস্তুতিটাও সম্পূর্ণ করেছেন উরুগুয়ের এই ২৬ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। তারকাসমৃদ্ধ রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের মূল ভরসাও তিনি।
এর বাইরেও জুলস ক্যুন্দে, আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন, জুলিয়ান আলভারেজ, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি, এনড্রিক, মিকেল মেরিনোর মতো পর্দার আড়ালের খেলোয়াড়দের সামনেও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে নায়ক হয়ে ওঠার।