টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে কী করতে হবে বাংলাদেশকে?
যেভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যেতে পারে বাংলাদেশ
২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে জয়শূন্য ছিল বাংলাদেশ। পরের চক্রে, ২০২১-২০২৩-এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ছিল মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই একমাত্র জয়। সেই তুলনায়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি চক্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের বিপক্ষে এসেছে মোট তিনটা জয়, পয়েন্ট টেবিলের চারেও উঠে এসেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। গাণিতিক হিসাবে আগামী জুনে লর্ডসে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে খেলার সম্ভাবনাও তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ।
এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি চক্রে বাংলাদেশ সর্বমোট ছয়টা সিরিজ খেলবে, তিনটি করে হোমে এবং অ্যাওয়েতে। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে যথাক্রমে হোম, হোম এবং অ্যাওয়ে সিরিজ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাকি রয়েছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যথাক্রমে অ্যাওয়ে, হোম এবং অ্যাওয়ে সিরিজ।
আইসিসির নিয়ম অনুসারে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য রয়েছে ১২ পয়েন্ট, এছাড়া টাই এবং ড্রয়ের জন্য রয়েছে যথাক্রমে ৬ এবং ৪ পয়েন্ট। এখন পর্যন্ত খেলা ৬ ম্যাচের মধ্যে সমান ৩টি করে ম্যাচ জিতেছে এবং হেরেছে বাংলাদেশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট ৩৬ হওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে স্লো ওভার রেটের কারণে বাংলাদেশের পয়েন্ট এই মুহূর্তে ৩৩। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিটি আসরে যেহেতু সব দল সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না, পয়েন্ট টেবিলটা তাই তৈরি করা হয় প্রাপ্ত পয়েন্ট এবং সম্ভাব্য পয়েন্টের অনুপাত হিসেবে। সম্ভাব্য ৭২ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৩৩, শতাংশের হিসেবে যা ৪৫.৮৩%। এই হিসাবের কারণের ইংল্যান্ডের চেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েও পয়েন্ট তালিকার ওপরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
কিন্তু ফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশকে কী করতে হবে?
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত চক্রে, শতাংশের হিসেবে যথাক্রমে ৬৬.৭% এবং ৫৮.৮% পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। ওই ৫৮.৮%-কে এবারের আসরের ফাইনালের জন্যও ‘থ্রেশোল্ড’ হিসেবে ধরলে, শেষ তিনটা সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রয়োজন মোট ৫২ পয়েন্ট। আর এজন্য শেষ ছয় টেস্টে অন্তত ৪টা জয় আর একটা ড্র পেতেই হবে বাংলাদেশকে, এবং স্লো ওভার রেট বা অন্য কোন কারণে কোন পয়েন্ট হারানো যাবে না।
বাংলাদেশের পাশাপাশি চোখ রাখতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সূচির দিকেও। বাংলাদেশের মতো পাকিস্তানেরও তিনটা সিরিজ বাকি: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোমে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অ্যাওয়েতে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোমে। এই তিন সিরিজের সাতটা ম্যাচ জিততে পারলে পাকিস্তান এই চক্রটা শেষ করবে ৫৮.২% নিয়ে।
এই মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ভারত পরের তিনটা সিরিজ খেলবে যথাক্রমে বাংলাদেশ (হোম), নিউজিল্যান্ড (হোম) এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (অ্যাওয়ে)। এই ৩ সিরিজে মোট ১০টা ম্যাচ খেলবে তারা।
পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার বাকি রয়েছে দুটো সিরিজ: ভারতের বিপক্ষে হোমে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অ্যাওয়েতে। টেবিলের তিনে থাকা নিউজিল্যান্ড খেলবে ইংল্যান্ড (হোম), ভারত (অ্যাওয়ে) এবং শ্রীলঙ্কার (অ্যাওয়ে) বিপক্ষে। এছাড়া এই মুহূর্তে পাঁচে অবস্থান করা ইংল্যান্ডের বাকি রয়েছে নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ।
এই প্রতিটা সিরিজের প্রতিটা ম্যাচের পরই পয়েন্ট টেবিলের অবস্থার পরিবর্তন হবে। এই মুহূর্তে চারে থাকা বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি-অবনতি ঘটতে পারে অন্যদের জয়-পরাজয়ে। আবার বাকি ছয় ম্যাচে চার জয়, এক ড্র পেলেই যে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে, নিশ্চিত করে সেটা বলারও সুযোগ নেই। তাই লাল বলের ক্রিকেটে নিজেদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী রাখার পাশাপাশি অন্য ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্সের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।