• ইউয়েফা নেশনস লিগ
  • " />

     

    আন্তর্জাতিক অধ্যায়: যেমন গেল ইউয়েফা নেশনস লিগ

    আন্তর্জাতিক অধ্যায়: যেমন গেল ইউয়েফা নেশনস লিগ    

    আন্তর্জাতিক বিরতি এলেই ফুটবল সমর্থকরা যেন ক্লাব ফুটবল একটু বেশি মিস করেন; সেই সাথে ক্লাব কোচদের দিন কাটে চরম উৎকণ্ঠায়। তবে নেশনস লিগ আসার পর থেকে ইউরোপের আন্তর্জাতিক বিরতিটাও কাটে দারুণ ফুটবলের মাঝেই। এবারও যেমন বড় দলগুলোর সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে ছোট দলগুলো; বড় ম্যাচগুলোতে দেখা গিয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। রেকর্ডের মূর্ছনা, ইনজুরির শঙ্কা, দুর্দান্ত ম্যাচ - সব মিলিয়ে এবারের নেশনস লিগের অধ্যায়টা কাটল দারুণ।

    নেশনস লিগে এবার চোখ ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ওপর। ৮৯৯ গোল নিয়ে এসেছিলেন এবার। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা পর্তুগালের জন্য বেশ কঠিন হবে জানাই ছিল। অথচ সেই ম্যাচেই ৯০০ ক্যারিয়ার গোলের মাইলফলক ছুঁলেন রোনালদো। পরের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু করলেন বেঞ্চে; ২০২২ সালের পর এই প্রথম একাদশে নেই তিনি। দলও পিছিয়ে পড়ল। সেই রোনালদো নামলেন, ৮৮ মিনিটে গোল করে দলকে এনে দিলেন জয়। ৯০১তম গোল দিয়ে ইউয়েফা নেশনস লিগের এবারের পর্বটা যেন নিজের করেই রাখলেন রোনালদো।

    রোনালদোর মাইলফলকের হাতছানির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের হয়ে অধিনায়ক হ্যারি কেইন খেলেছেন শততম ম্যাচ। ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এই মাইলফলক ছুঁতে চলেছেন - তা ছিল অনুমেয়। সেই ম্যাচেই জোড়া গোল করলেন; জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজের গোলসংখ্যা নিয়ে গেলেন ৬৮ নম্বরে। স্যার ববি চার্লটন ও ওয়েইন রুনির পর মাত্র তৃতীয় ইংলিশ হিসেবে শততম ম্যাচে গোলের রেকর্ড গড়েছেন কেইন।

    ইংল্যান্ডের আগের ম্যাচটা ছিল আরও ঘটনাবহুল। ম্যাচটা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ লি কার্সলি নিজে আইরিশ বলে জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন না, পড়লেন সমালোচনার মুখে। ম্যাচে ইংল্যান্ড সহজেই জয় পেল। তবে গোল পেলেন এমন দুজন যাদের এই ম্যাচে গোল পাওয়াটাও একটা গল্প। গোলদাতা ডেক্লান রাইস ও জ্যাক গ্রিলিশ দুজনেই যে এর আগে খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে! সাবেক জার্সির প্রতি সম্মান জানিয়ে রাইস কোনো উদযাপন না করলেও গ্রিলিশ বহুদিন পর গোল পেয়ে আর নিজেকে বেঁধে রাখেননি।

    যেই ইংলিশদের হারিয়ে ইউরো জয়ের স্বাদ পেয়েছে স্পেন, তাদের শুরুটা অবশ্য অপ্রত্যাশিতভাবে ভাল যায়নি। সার্বিয়ার মাঠ থেকে ফিরতে হয়েছিল গোলশূন্য ড্র নিয়ে। তবে পরের ম্যাচে দোর্দণ্ড প্রতাপে ফিরেছিল লুইস দে লা ফুয়েন্তের লা রোহারা। চার গোল জালে জড়ানোর চেয়ে বড় কথা ম্যাচের মাঝে লে নরমান্দ লাল কার্ড দেখেছিলেন; অথচ খেলায় তাদের ধার কমেনি একেবারেই। সুইজারল্যান্ড এবারের ইউরোতেও নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে; অথচ সেই সুইসদের জালেই ফাবিয়ান রুইজের ব্রেসের সাথে হোসেলু ও ফেরান তরেসের সুবাদে গুণে গুণে চার গোল দিয়েছে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা।

    যাদের ঘরে গিয়ে ইউরো জিতে এসেছে স্পেন, সেই জার্মানির শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। হাঙ্গেরিকে রীতিমত পাঁচ গোলের উড়িয়ে দিয়েছে জার্মানদের নতুন ও তারুণ্যে ভরপুর দলটা। মুসিয়ালা, ভিয়ারৎজরা আরও একবার জ্বলে উঠেছিলেন। পরের ম্যাচটা অবশ্য কঠিন হতে চলেছিল। ডাচদের মাঠে কঠিন চ্যালেঞ্জটাও তারা প্রায় পাড়ি দিয়েছিলেন। তবে রেফারির কিছু প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত আর নিজেদের একের পর এক মিসে ফিরতে হয়েছে ড্র নিয়ে।

    নেদারল্যান্ডস-জার্মানির মতো অবশ্য অন্যান্য বড় ম্যাচগুলো জমেনি তেমন একটা। ফ্রান্সকে হতবাক করে ইতালি যে জয় পেল তাতে ফ্রান্স তেমন কিছুই করতে পারেনি। দশ মাস পর মাঠে ফেরা টোনালির সাথে দারুণ বোঝাপাড়ার পর অসামান্য এক ভলিতে ডি মার্কো যেভাবে জালে বল জড়িয়েছিলেন, সেটাই যেন ম্যাচের গল্পটা বলে দেয়। নেশনস লিগ ইতিহাসের দ্রুততম গোল হজমের লজ্জায় পড়তে হয় ইতালিয়ানদের। তবে এরপর থেকে গল্পের রচয়িতা তারা নিজেরাই। সেই অর্থে ইসরায়েলের বিপক্ষে তাদের জয়টা কিছুটা ম্যাড়ম্যাড়ে ছিল। টানা দুটো কঠিন ম্যাচ খেলতে হওয়া দেশমের শিষ্যরা অবশ্য বেলজিয়ামের বিপক্ষে সহজেই জয় পেয়ে নিজেদের মেলে ধরেছিলে ঠিকই।

     

    এক নজরে উল্লেখযোগ্য ম্যাচের ফলাফল

     

    সার্বিয়া ০-০ স্পেন
    পর্তুগাল ২-১ ক্রোয়েশিয়া
    ফ্রান্স ১-৩ ইতালি
    বেলজিয়াম ৩-১ ইসরায়েল
    আয়ারল্যান্ড ২-০ ইংল্যান্ড
    নেদারল্যান্ডস ৫-২ বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা
    জার্মানি ৫-০ হাঙ্গেরি


    পর্তুগাল ২-১ স্কটল্যান্ড
    সুইজারল্যান্ড ১-৪ স্পেন
    ক্রোয়েশিয়া ১-০ পোল্যান্ড
    ফ্রান্স ২-০ বেলজিয়াম
    ইসরায়েল ১-২ ইতালি
    ইংল্যান্ড ২-০ ফিনল্যান্ড
    নেদারল্যান্ডস ২-২ জার্মানি