কোন নতুনের কেতন উড়বে ?
অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের ইউরোতে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনার উত্তাপটা কিছুটা হলেও বেশি। রেনাটো সানচেজ থেকে র্যাশফোর্ড- নিজ নিজ লিগ মাতিয়ে এবার তাদের সামনে এসেছে বৈশ্বিক মঞ্চে নিজ দেশের হয়ে নিজেদের প্রমাণ করার প্রথম সুযোগ। প্রথমবারেই কে ফুটবল অনুরাগীদের বাজিমাত করবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা, কৌতূহলের কোনো শেষ নেই।
টার স্টেগেন, অ্যান্থনি লোপেজ, সার্জিও রিকো। এবারের ইউরো স্কোয়াডে ডাক পাওয়া অন্যতম সেরা তিন গোলরক্ষক। কিন্তু নয়্যার, প্যাট্রিসিও, ডি গেয়া-রা ইনজুরিতে না পড়লে এবারের ইউরোটা খুব সম্ভবত দর্শক হয়েই কাটাতে হবে এই তিনজনকে। নিজ নিজ ক্লাবে অসাধারণ পারফর্ম করেই ফ্রান্সের টিকেট আদায় করে নিয়েছেন এই তিন তরুণ।
আর্সেনালের হয়ে অসাধারণ এক মৌসুম কাটানো হেক্টর বেলেরিনের এবারের আসরে স্পেন দলে থাকারই কথা ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে দানি কারভাহাল হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়লে তার পরিবর্তে বেলেরিনকে দলে নেন দেল বস্ক। হুয়ানফ্রানের সাথে রাইটব্যাকের পজিশনের জন্য লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হলেও বড় টুর্নামেন্টে না খেলার অভিজ্ঞতাই হতে পারে বেলেরিনের বেঞ্চওয়ার্মার হয়ে থাকার পেছনে।
বেলেরিনের মতই ক্লাব ফুটবলে ধারাবাহিকতার জোরেই সুইজারল্যান্ড দলে জায়গা করে নিয়েছেন নিকো এলভেদি। এবারের ইউরোতে সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্স সামলানোর দায়িত্বটা ফ্যাবিয়ান শারের সাথে এলভেদিকেই ভাগাভাগি করে নিতে হবে। বেনাশিয়া, আলাবাদের ইঞ্জুরির দরুণ বায়ার্ন মিউনিখের মূল দলে সুযোগ পেয়ে অল্প কিছু ম্যাচ খেলেই নিজের জাত চিনিয়েছেন জশুয়া কিমিচ। ফলশ্রুতিতে জাতীয় দলের কোচ জোয়াকিম লো-এর ২৩ জনের স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন কিমিচ। ট্রেনিং-এ রুডিগার ও হামেলসের ইনজুরির জন্য লো, জার্মানীর সেন্টার ব্যাকে কিমিচকে খেলালেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
রিকো, বেলেরিনদের মত বেঞ্চওয়ার্মার নয়, বরং একেবারে মূল একাদশেই খেলবেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে বায়ার্নে যোগ দেয়া এবং এই ইউরোর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়দের একজন রেনাটো সানচেজ। তাঁর জায়গা অনিশ্চিত হলেও মূল একাদশেই খেলার কথা ইংল্যান্ডের দেলে আলির। বেনফিকা ও টটেনহামের হয়ে গত মৌসুমে মাঠ কাঁপানো এই দুই তরুণ তুর্কির কাছ থেকে তাদের দেশ যে ক্লাব ফর্মের মতই বা তার চেয়েও ভাল পারফরম্যান্স চাইবে, তা বলাই বাহুল্য। তরুণ উইঙ্গারদের মধ্যে এবার আছেন বিশ পার না হওয়ার আগেই ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানীতে লিগ জেতা কিংসলে ‘দ্যা কিং’ কোমান এবং জার্মান প্রডিজি লিরয় সানে। অবশ্য এই দুইজনের অবস্থাও অনেকটা বেলেরিন, রিকোদের মতই। বেঞ্চেই টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হলেও বেঞ্চ থেকে এসে দলের জন্য মূল্যবান অবদান রাখাটাই হবে কোমান, সানে, বেলেরিনদের মূল লক্ষ্য।
ফরওয়ার্ড লাইনে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জোড়া অ্যান্থনি মার্শিয়াল এবং মার্কাস র্যাশফোর্ড। ইংলিশ লিগে প্রথম মৌসুমেই সাড়া ফেলে দেওয়া এই দুই তরুণেরই প্রথম ইউরো এটি। ফ্রান্সের বাঁ প্রান্তে মার্শিয়ালের জায়গা পাকা হলেও র্যাশফোর্ডের জায়গা পাকা নয়। ইংলিশ সমর্থকদের বিশ্বাস, ইউনাইটেডের হয়ে দেখানো ধারাবাহিকতা নিয়ে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবেন র্যাশফোর্ড। দ্রুত গতি, ড্রিবলিং ও অসাধারণ ফিনিশিংয়ের জন্য ইতোমধ্যেই থিয়েরি অঁরির সাথে তুলনা শুরু হয়ে গেছে মার্শিয়ালের। কিন্তু বরাবরের মতই লাজুক এবং মাটিতে পা রাখা মার্শিয়াল বার বার বলেছেন, একক নয়, বরং দলগত সাফল্য ও দলকে কিছু জেতাতে পারলেই বরং বেশি খুশি হবেন ।
মার্শিয়াল, র্যাশফোর্ডদের সাথে আক্রমণভাগের আরেক তরুণ হলেন তুরষ্কের এমরে মোর, তুরস্কে যিনি ‘দ্যা টার্কিশ মেসি’ নামে পরিচিত। ডেনমার্কে জন্ম এই ফরওয়ার্ড পরবর্তীতে তুরষ্কের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। মোরের প্রথম কোচ ক্যাস্পার হুলম্যান্ডের ভাষ্যমতে, মোরের মত ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ উইঙ্গার খুব কমই আছে।
এই কয়জন ছাড়াও এবার ইউরোতে আছেন ‘ক্রোয়েশিয়ান মেসি’ খ্যাত আন্তে কোরিচ, পোল্যান্ডের ‘নতুন লেওয়ানডস্কি’ খ্যাত আর্কাদিউজ মিলিক, সুইডেনের ‘দ্যা আইসম্যান’ ক্যাত ভিক্টর লিন্ডেলফ, বেলজিয়ামের ইয়ানিক ফেরেরা-কারাস্কো, আলবেনিয়ার এলসিড হিসাজ, সুইজারল্যান্ডের ব্রিল এম্বোলোরা।
প্রত্যেক ইউরোতে ২২ বা ২২-অনূর্ধ্ব খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের খেতাব। পুরষ্কারটি কে পাবেন এবার? প্রথম ইউরোতেই বাজিমাত করবেন কে? সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে সময় হলেই।