কিক অফের আগেঃ 'পারী'তে শুরু ফুটবল রোমাঞ্চ!
উৎসবের নগরী এখন প্যারিস। চ্যাম্প ডি মার্সের আয়রন অ্যালয়ের তৈরী ১০৬৩ ফিটের ওই টাওয়ারটার জন্য অবশ্য সবসময়ই উৎসব লেগে থাকে শহরটিতে। তবু কাল রাতে আইফেল টাওয়ারে আলো ঝলমলে রাতটা সবদিক দিয়ে যেন একটু আলাদা। কনসার্ট আর চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জায় নতুন সাজে সেজেছে চ্যাম্প ডি মার্সের সবুজ চত্বর। লাখখানেক মানুষ জড়ো হয়েছে বিকেল থেকেই। তাদের বেশিরভাগের হাতেই ফ্রান্সের পতাকা। স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ডের পতাকার সংখ্যাও কম নয়। শেষ কবে এমন বর্ণিল রূপে সেজেছিল আইফেল টাওয়ার প্রাঙ্গন?
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বর্ণিল সাজটা অবশ্য টিকে ছিল অনেকদিন ধরেই! নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতা শেষ দল তো তারাই। আর ইউরো? সেটিও ঘরের মাঠে শেষবার উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়েছিল প্লাতিনির ফ্রান্সেরই। ঘরের মাঠে, ঘরের ছেলেরা হতাশ করে না। এমন একটা বিশ্বাস যেন এরই মধ্যে গেঁথে গেছে ফ্রান্সবাসীর মনে। ফুটবলের মহাদেশীয় লড়াই শুরুর আগের দিন তাই বোধ হয় এর চেয়ে ভালোভাবে ইউরোকে স্বাগত জানাতে পারত না ইউরোপের কোন দেশ!
আজ রাতেই রোমানিয়ার বিপক্ষে স্বাগতিক দেশের খেলা দিয়ে স্টাডে ডি ফ্রান্সে পর্দা উঠছে ১৫ তম ইউরোর। ২৪ টি দল নিয়ে পুরো একমাস চলবে এবারের টুর্নামেন্ট। অংশগ্রহণ আর দিনের হিসেবে এটিই সবচেয়ে বড় আয়োজন। এমন আয়োজনকে সামনে রেখে উৎসব আসলে এখন গোটা ফ্রান্স জুড়েই। সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় পঁচিশ লক্ষ মানুষের প্রবেশ ঘটেছে ফ্রান্সে, এই ইউরো উপলক্ষ্যে। অথচ কে বলবে মাত্র কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীর হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল প্যারিসের রাস্তাঘাট।
প্যারিসের সেই বোমা হামলা অবশ্য দমাতে পারেনি ফ্রান্সের মানুষজনকে। ইউরোর এমন জাঁকজমক আয়োজন তো তারই প্রমাণ। তবে ভয়াবহ সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বার ও রেঁস্তোরাগুলোয় টিভি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে বসান হয়েছে জায়ান্ট স্ক্রিন, তবে সেখানেও একসাথে ৯০ হাজারের বেশি মানুষের খেলা দেখতে মানা। একটি সফল আয়োজনের জন্য হাসি মুখে তা মেনেও নিয়েছে ফ্রান্সের মানুষজন।
নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ঠিকই, তবে উৎসবের তার আঁচ লেগেছে সামান্যই!
জার্মানি, স্পেনের সাথে এবারের ইউরোতে হট ফেভারিট ফ্রান্স। ইউরোর উদ্বোধনী ম্যাচে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ যতো না রোমানিয়া, তার চেয়ে বেশি সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ সামলান। রোমানিয়ার চেয়ে যোজন এগিয়ে থেকেও তাই ইউরোর শুরুর আগের দিন দলের লাগামটা টেনে ধরতে চাইলেন ফ্রান্স অধিনায়ক হুগো লরিস। “আমরা এখনও কিছুই করিনি, আমরা কিছুই প্রমাণ করিনি। আমার মনে হয় না আমরা ফেভারিট। তবে ঘরের মাঠে খেলতে পারায় অন্য সব দলের চেয়ে কিছুটা সুবিধা পাব বলে আশা করি”।
অধিনায়কের সাথে সুর মেলালেন কোচ দিদিয়ের দেশমও। ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের চেয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ, ২০০০ ইউরো জয়ী ফ্রান্স দলের সাবেক এই অধিনায়কের ওপরই বরং প্রত্যাশার চাপটা সবচেয়ে বেশি। প্রথম ম্যাচের আগে দেশমও বললেন ট্রাম্পকার্ডটা আসলে নিজেদের মাঠে খেলতে পারা! “একেক দেশের সংস্কৃতি একেক রকম। আমি হয়ত ব্রাজিলের (২০১৪ বিশ্বকাপ) জন্য এটা সুফল বয়ে আনিনি, তবে আমার মনে হয় আমার দেশের মানুষ আমাদেরকে সমর্থন জুগিয়ে যাবে। আমাদের শুধু তাদের সমর্থনটা কাজে লাগিয়ে জিততে হবে।”
অন্যদিকে স্বাগতিক দেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা রোমানিয়া ম্যানেজার অবশ্য নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগাই ভাবতে পারেন। প্রথম ম্যাচের আগে যে সব আলোই কেড়ে নিচ্ছে বিপক্ষে দল! নেবেই বা না কেন, ফ্রান্সের সাথে রোমানিয়ার দূরত্বটা জানেন কোচ ইয়র্দানেশুও। “ফ্রান্স আমাদের চেয়ে পরিষ্কারভাবে এগিয়ে। দেশমের কাছে আছে অসাধারণ কিছু খেলোয়াড়। তারা চ্যাম্পিয়নস লিগেও খেলে।“
তবে এসব বলে অবশ্য নিজের দলের মনোবলটা চাঙাই করলেন রোমানিয়ার কোচ। পরিষ্কার হবে তাঁর পরের কথায়। “আমার খেলোয়াড়েরা রোমানিয়া, তুরষ্ক, ইসরায়েল, কাতারে খেলে। কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা মাঠে আত্মসমর্পণ করব। আমাদের সবার লক্ষ্যই এক, দলকে পরের রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া।” স্বাগতিক দেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই একটা অঘটন ঘটিয়ে সংবাদের শিরোনাম হতে নিজের দলটাকে যেন একটু তাতিয়েই দিলেন লর্দানেশু।
ইয়র্দানেশু যতই বলুক, ফ্রান্সের বিপক্ষে রোমানিয়ার রেকর্ডটা খুব একটা সুখকর নয়। ১৯৭২ সালের পর ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখেনি তারা। অবশ্য এই দু’দলের গত ম্যাচের চারটিতেই ড্র হওয়ার পরিসংখ্যানটা দিয়ে সান্ত্বনা খুঁজতে পারে রোমানিয়া। তবে এই সমীকরণেও ফ্রান্সের ‘নিজের মাঠে খেলার সুবিধা’ টেনে আনলে কাগজে কলমে রোমানিয়ার সম্ভাবনা থাকে সামান্যই।
আরো পড়ুনঃ ফিক্সচার : ইউরো ২০১৬ (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী)