কিক অফের আগে: নতুনদের আবাহনে চোখ ইংল্যান্ড-রাশিয়ায়
নিজ দেশের হয়ে প্রথমবারের মত ইউরোর মূলপর্বে খেলতে যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই অনেক গর্বিত ও ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা আপনার। কিন্তু যখন আপনি জানতে পারলেন, আপনার প্রথম ম্যাচ হবে যে দেশে জন্মিয়েছিলেন তার বিপক্ষে এবং এর চেয়েও বড় কথা, সে দেশেই খেলেন আপনারই রক্ত, আপনারই সহোদর। নিজের বর্তমান দেশ আলবেনিয়ার হয়ে তাই ইউরোতে প্রথম ম্যাচটা খেলার আগে অনুভূতিটা কিছুটা হলেও মিশ্রই হওয়ার কথা তলান্ত শাকার। আলবেনিয়ার এই ডিফেন্ডারের জন্মও ভাই গ্রানিতের মত সুইজারল্যান্ডের বাসেলেই। বাবা-মা কসোভোর এথনিক আলবেনিয়ান হলেও যুব পর্যায়ে দু’জনেই সুইজারল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এরপর, গ্রানিত বেছে নেন সুইজারল্যান্ড আর তলান্ত আলবেনিয়াকে।
ডার্বি না হয়েও এক দিক ম্যাচটা তাই ডার্বি হয়ে যাচ্ছে! বিগত ছয় দেখায় সুইসদের জয় ৫টি, ড্র ১টি। আজো যে সুইসরাই ফেভারিট, তা মেনে নিয়েছেন স্বয়ং আলবেনিয়ার কোচ জিয়ানি ডে ব্লাসি এবং অধিনায়ক লরিক চানা। ব্লাসি বলেছে, গ্রুপের ‘আন্ডারডগ’ হলেও কোয়ালিফায়ারে যেভাবে নিজ সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েই মূলপর্বে এসেছেন, ঠিক সেভাবেই নিজ দেশ ও মানুষের জন্য সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করবেন গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিতে।
অপরদিকে সুইস কোচ ভ্লাদিমির পেটকোভিচ বলছেন, ইউরোর মূলপর্বে এসে কোনো ফেভারিট, আন্ডারডগ নেই। নিজেদের দিনে যে কেউই জয় ছিনিয়ে আনতে পারে। তাই নিজেদের সামর্থ্যের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দিয়েই পরের রাউন্ডে যেতে চায় সুইজারল্যান্ড। অবশ্য ‘লোকে আমার দলকে অনেক বছর মনে রাখবে’ বলে নিজেদের ওপর বাড়তি প্রেশার নিয়ে নিলেন না তো সুইস কোচ?
দুই দলে তেমন ইঞ্জুরির ঝামেলা না থাকায় সেরা একাদশই নামাবেন এই দুই কোচ। আলবেনিয়ার কোচের মূল সিদ্ধান্ত হবে ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার আরমান্ডো সাদিকু আর দলের মূল স্ট্রাইকার সকল চিকাল্লেশির মধ্যে একজনকে বেছে নেয়া। অপর দিকে সুইসদের চিন্তার কারণ উইঙ্গার ভ্যালন বেহরামির ইঞ্জুরি। স্তাদ বোলার্ত-দেলেলিসে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচটিতে কিক অফের আগেই ছড়াচ্ছে উত্তাপ ও মিশ্র অনুভূতির ফুলঝুড়ি।
একদিকে ৫৮ বছর পর প্রথম ইউরো খেলতে আসা ওয়েলস, অপরদিকে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইউরো খেলা স্লোভাকিয়া। অনেক ‘প্রথমের’ এই ম্যাচটি দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের ইউরোর অন্যতম শক্ত ও আকর্ষণীয় গ্রুপ ‘বি’-এর হিসাব-নিকাশ। দু’দলের মূল তারকা গ্যারেথ বেল ও মারেক হামসিক কোয়ালিফায়ারে নিজ নিজ দলের টপস্কোরার ছিলেন। স্তাদ দে বোর্দোতে রাত দশটার এই ম্যাচটি জিতে পরের রাউন্ডে যাবার রাস্তা মসৃণ করে ফেলতে মরিয়া থাকবে দু’দলই।
বৈসাদৃশ্যের চেয়ে সাদৃশ্যই বেশি দুই দলের মাঝে। প্রথমবার ইউরো ছাড়াও উভয়েই দের মূল তারকাদ্বয়ের ওপর মাত্রাতিরিক্ত ভাবে নির্ভরশীল। কোয়ালিফায়ারে ওয়েলসের মোট গোলের ৬৪ শতাংশই এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ ফরওয়ার্ডের থেকে। মারেক হামসিকও স্লোভাকিয়াকে প্রায় একাই এনেছেন মূল পর্বে। আজকের এই ম্যাচটিতে তার দুইজনই যে দুই দলের আক্রমণভাগের দায়িত্বে থাকবেন ,তা বলাই বাহুল্য।
ওয়েলস কোচ ক্রিস কোলম্যান সতর্ক করে দিচ্ছেন, আবেগের ভেলায় না ভেসে নিজেদের মাঠের পারফরম্যান্সে মনযোগী হতে, নাহলে নিজেদের প্রমাণ করে এতদূর আসার এই লড়াইয়ের অঙ্কুরগোম ঘটবে অঙ্কুরেই। অন্যদিকে, ১৯৮০ সালে ইউরোতে তৃতীয় হওয়া চেকোস্লোভাকিয়া দলের অন্যতম প্রধান সদস্য ইয়ান কোয্যাকের বক্তব্যেও পাওয়া গেছে একই সুর। প্রথমবার ইউরো বলে আবেগ নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে এতদূর আসা সব কষ্টই বৃথা হয়ে যাবে এই দুই দলের।
ম্যাচে তিনটি পৃথক ‘ইন্ডিভিজুয়াল ব্যাটেল’ হবে দেখার মত। লেডলি বনাম হামসিক, স্কারটেল বনাম বেল এবং অ্যালেন বনাম কুচকা। তিনটিতেই জিতে কোন দল শেষমেশ জয়ী হতে পারে তা-ই দেখার বিষয়।
তবে আজকের দিনের সবচেয়ে জম্পেশ লড়াইটা হওয়ার কথা ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার। অনেক দিন ধরেই বড় টুর্নামেন্ট এলেই ইংল্যান্ডকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় উন্মাদনা। এবার সেই ঢাকঢোল যেন অনেকটাই কম, ব্রয় হজসনের তরুণ দল নিয়ে সেই অর্থে মাতামাতিও নেই। তবে কেন, ডেল আলিদের মতো তরুণরাই এবার আশা দেখাচ্ছেন ইংল্যান্ডকে। তার ওপর রাশিয়ার দশাও খুব একটা ভালো নয়, ডেনিসভ, জিরকভ, জাগোয়েভদের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের চোটের জন্য হারিয়ে অনেকটাই খর্বশক্তির হয়ে গেছে।