• ইউরো
  • " />

     

    কিক অফের আগে: মাঠে নামছে স্পেন, ইতালি

    কিক অফের আগে: মাঠে নামছে স্পেন, ইতালি    

    নতুন স্পেনের সামনে আজ চেক, রসিস্কি

    ২০১৪ বিশ্বকাপে ইস্কো, কারভাহালদের মত উদীয়মান তরুণদের বাদ দিয়ে গতানুগতিক একাদশ নামিয়ে গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ভিসেন্তে দেল বস্ককে। স্পেনের হয়ে নিজের শেষ টুর্নামেন্টের দল বাছাইয়ে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে চমকে দিয়েছেন অনেককেই। আজ মাঠে নামছে তার ‘নতুন’ স্পেন। ০৮, ১২-স্পেন কি পারবে টানা তৃতীয়বারের মত ইউরো নিজেদের করে নিতে?

     

    অপরদিকে, ’৭৬ সালে চেকোস্লোভাকিয়া হিসেবে ইউরো জয়ের পর '৯৬ সালে রানার্স আপ হওয়াই চেক প্রজাতন্ত্রের সেরা সাফল্য। চেক, রসিস্কি, ডচকাল, দারিদাদের নিয়ে সাজানো পাভেল ভারবার দল কি পারবে মূলপর্বের শেষ দশ ম্যাচে মাত্র একটিতে হারা স্প্যানিশদের রুখে দিতে?

     

    দু’দলে কোনও ইনজুরির আশঙ্কা না থাকায় সেরা একাদশই নামাতে পারবেন দুই কোচ। চেকদের একমাত্র অনুপস্থিতি হবে সাসপেনশনের জন্য ডিফেন্ডার মারেক সুচির না খেলা। যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ডেভিড ডি গেয়াকেই গোলের নিচে দেখা যেতে পারে। তবে আক্রমণভাগে কারা নামবে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রতীক্ষিত বিষয়।

     

    আইরিশদের ভয় একজনকেই!

    নিজেদের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বারের মত ইউরোর মূলপর্বে আসা রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের আজকের প্রতিপক্ষ সুইডেন। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, ইব্রাহিমোভিচ। ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়ন পিএসজিতে চার বছর অগণিত রেকর্ড চুরমার করে ক্লাব ছাড়ার পর প্রথম ম্যাচটিই খেলতে নামবেন সেই ফ্রান্সে। এমন এক ফরওয়ার্ডকে সমীহ না করে উপায় আছে?

     

    ফ্রান্সের সেন্ট ডেনিসে আজকের এই ম্যাচটিতে পাদপ্রদীপের আলোটা স্বাভাবিকভাবেই থাকে ইব্রার ওপর। পরবর্তী ক্লাব নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও ১৬-১৭ মৌসুম কোথায় খেলবেন, তা ইতোমধ্যেই জানেন বলে মিডিয়া ও সমর্থকদের রেখেছেন উত্তেজনার শীর্ষ চূড়ায়। দুই দলের বিগত দশ দেখায় সুইডিশদের পাঁচ জয়ের বিপক্ষে আইরিশদের জয় তিনটি, বাকি দুটি ম্যাচ ড্র। আইরিশদের অনভিজ্ঞ রক্ষণ কিভাবে ইব্রা, লারসনদের সামলায়, তা-ই হবে ম্যাচের প্রধান লড়াই। অবশ্য সুইডেনের রক্ষনও যে খুব সুবিধার, তাও নয়। কোয়ালিফায়ারে একমাত্র চেকরাই এরিক হামরেনের শিষ্যদের (১২) চেয়ে বেশি গোল হজম করেছে(১৪)। তাই জন ওয়াল্টারস, শেন লংদের বিপক্ষে মার্টিন ও জোনাস অলসনদের মুখোমুখিটাও হবে দেখার মত।

     

    ইউরোর মূলপর্বে দু’দলের কারো রেকর্ডই সুবিধার নয়। মূলপর্বের শেষ চার ম্যাচের চারটিতেই হেরেছে মার্টিন ও’নিলের শিষ্যরা। আর অপরদিকে মূলপর্বের শেষ ১৪ ম্যাচ মাত্র ৩ জয় ইব্রাদের।

     

    সব হিসাবনিকাশের পরেও এই ম্যাচের মূল ‘ফেস-অফ’ একটাই, ইব্রাহিমোভিচ বনাম আইরিশ ডিফেন্স। ও’শে দের বিপক্ষে শেষ তিন ম্যাচে গোলশূণ্য এই দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার আজ গোল করলেই একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে চারটি ভিন্ন ইউরোর মূলপর্বে গোল করার গৌরব অর্জন করবেন। এই আসরে আর তিনবার লক্ষ্যভেদ করলেই ধরে ফেলবেন মূলপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিশেল প্লাতিনিকে। ইব্রা কি পারবেন দলকে জেতাতে এবং ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করতে? উত্তরটা সময়ই বলে দেবে।

     

     

    ইতালির রক্ষণ বনাম বেলজিয়ামের আক্রমণ

    প্রতি টুর্নামেন্টে যা হয় ইতালির সাথে, এবারও হল তা-ই। অভিজ্ঞতা, ঠিক মানসম্পন্ন ‘ইতালীয়’ স্কোয়াড না হওয়ায় অনেকেই ইতালিকে এখনই ফেলে দিয়েছেন বাতিলের খাতায়। এভাবেই বাতিলের খাতা থেকেই ইউরো ’১২ এর ফাইনাল খেলা ‘আজ্জুরি’দের প্রতিপক্ষ যখন আন্তর্জাতিক ফুটবলের অন্যতম ‘হটকেক’ বেলজিয়াম, তখন ইতালির জয় বা ড্র্য়ের পক্ষে বাজি ধরার লোক খুব কমই পাওয়া যাবে।

    ১৯৭২ এর পর ইতালিকে হারাতে পারেনি বেলজিয়াম। কিন্তু দৃশ্যপট এখন আর আগের মত নয়। ইতালি এখন আর টট্টি, পিরলো, দেল পিয়েরোদের প্রতিপক্ষের আত্মা কাঁপিয়ে দেয়া সেই ইতালি নেই আর বেলজিয়ামও আগের মত সহজ প্রতিপক্ষ নয়। হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইন, দেম্বেলে, ভারমালেইনদের নিয়ে সাজানো বেলজিয়াম এখন ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ফিফা র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছে। রক্ষণে জুভেন্টাস চতুষ্টয় বুফন, বনুচ্চি, বারজাগলি, কিয়েল্লিনিদের সাথে হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইন, লুকাকু, দেম্বেলেদের লড়াইটাই হবে ম্যাচের মূল লড়াই।

    পরিষ্কার ফেবারিট হয়েও পা মাটিতেই রাখছেন বেলজিয়াম কোচ মার্ক উইলমটস। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইতালির মত একটি দলের বিপক্ষে টুর্নামেন্ট শুরু করা আসলেই সম্মান ও খুব সম্ভবত নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম।

    অপরদিকে কোচ আন্তনিও কন্তের মতে বেলজিয়ামের এই ফিনিক্স পাখির মত উত্থান আসলেই বাহবা জানানোর উপযোগী। কিন্তু হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, ‘বাতিলের খাতার’ ইতালি লড়বে গ্ল্যাডিয়েটরদের মত। ম্যাচ শেষে নিজেদের ও নিজেদের সমর্থকদের মুখে হাসি টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন পরবর্তী মৌসুমে চেলসিতে যোগ দেয়া কন্তে।

    শুক্রবার ট্রেনিংয়ে কাপ্তান হ্যাজার্ড ও থমাস ভারমাইলেনের ইনজুরি উইলমটসের কপালে ভাঁজ সৃষ্টি করলেও মেডিকেল দল থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন দুজনই। অপরদিকে, টুর্নামেন্টের আগে মার্কো ভেরাত্তি ও ক্লদিও মার্কিসিওর ইঞ্জুরি ইতালিকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। কিংবদন্তি পিরলোকে ২৩-জনের দলে না নেয়ায় দলে নেতৃত্বের অভাবেও ভুগতে পারে আজ্জুরিরা!

    দু’দলের শেষ পাঁচ দেখায় গোল হয়েছে ১৮টি। ইউরোতে শেষ তিন ম্যাচে বেলজিয়ামের বিপক্ষে অপরাজিত ইতালি (২ জয়, ১ ড্র)। এরকম গড়পড়তা এক দল নিয়েও কোয়ালিফায়ারে অপরাজিত ছিল কন্তের শিষ্যরা। মজার ব্যাপার হল, শেষবার যখন এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, তখন দুই কোচই মাঠে খেলোয়াড় হিসেবে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।