৪৪ বছর পর হাঙ্গেরি
তিন দশক পর কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে উপস্থিতি। অতঃপর ইউরোতে দুয়েক বছর নয়, পাকা ১৬ হাজার ৬৮ দিন, ৪৪ বছর পর গোল করার পর যখন দেখবেন গোলপোস্ট ছেড়ে চল্লিশোর্ধ্ব গোলকিপার দলের সাথে উদযাপন করতে ছুটে আসছেন, তখন আসলে জয়টির মাহাত্ম্য বোঝাতে বাক্যব্যয় করা প্রয়োজন হয় না। ফ্রান্সের বোর্দোতে শেষ বাঁশির পর হাঙ্গেরি খেলোয়াড়, স্টাফ ও সমর্থকদের বুনো উল্লাসই বলে দিচ্ছিল শিহরণ মিশ্রিত আবেগ ঠিক কতটা বেগে বয়ে যাচ্ছিল তাদের শরীরে।
অথচ ম্যাচের শুরুতে কেউই হাঙ্গেরিকে গোণাতেই ধরেনি। এমনকি ম্যাচের প্রথম মিনিটেই যখন ডেভিড আলাবার শট বারে লেগে ফিরে আসলো, তখন আসলে প্রশ্নটা হাঙ্গেরি হারবে কি না তা ছিল না, প্রশ্ন ছিল অস্ট্রিয়ার জয়টা কয় গোলের ব্যবধানে হবে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটার সাথে সাথে এবং প্রথমার্ধের খেলা শেষের মিনিট পাঁচেক আগে ইউরো ইতিহাসে সবচেয়ে ‘বুড়ো’ কিরাইয়ের অসাধারণ সেভ যেন হাঙ্গেরিকে তাঁতিয়ে দেয়। বর্ষীয়ান এই গোলরক্ষকের অনুপ্রেরণায় নিজেদের ফিরে পায় হাঙ্গেরি। তাদের ‘খেল’ শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধে।
৬৩ মিনিটে কিছুটা খেলার গতির বিপরীত স্রোতে অসাধারণ এক গোল করে হাঙ্গেরিকে এগিয়া দেন স্ট্রাইকার সালাই। ডিফেন্ডারের লংপাস চমৎকারভাবে বুক দিয়ে নামিয়ে দুটি অসাধারণ ওয়ান-টুয়ের পর দক্ষ এক ফিনিশে হাঙ্গেরির ১৬,০৬৮ দিনের ইউরোতে গোলের বন্ধ্যাত্ব ঘোচান সালাই। এরপর পরই জেগে ওঠা অস্ট্রিয়া মিনিট দুয়েক পর বলে জালে পাঠালেও গোলের বিল্ডআপে মারাত্মক ফাউল করায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় আলেক্সান্দার দ্রাগোভিচকে। দলের মূল গোলরক্ষক মার্ক ইয়াঙ্কোকে উঠিয়ে নেওয়ায় এবং দশজনের দলে পরিণত হওয়ায় আক্রমণভাগে দিশেহারা অস্ট্রিয়ার কফিনে ম্যাচ শেষের মিনিট তিনেক আগে শেষ পেরেক ঠুকে দেন স্টিবার। দারুণ কাউন্টার অ্যাটাকে অসাধারণ এক চিপে বল জালে পাঠিয়ে হানঙ্গেরিকে ভাসান উল্লাসের ভেলায়।
গোলের পর ‘বুড়ো’ কিরাইয়ের সতীর্থদের সাথে উদযাপনের জন্য শিশুসুলভ দৌড়ই বলে দিচ্ছিল, কতটা গুরুত্বপূর্ণ আজকের এই জয়।ইউরোতে হাঙ্গেরির হয়ে প্রথম ক্লিন শিটও রেখেছেন কিরাই। এই জয়ে পর্তুগাল, আইসল্যান্ডের সাথে ম্যাচের আগে দারুণ এক ‘বুস্ট’ পেয়ে গেল পুসকাসের উত্তরসূরিরা। অপরদিকে বাছাইপর্বে অপরাজিত অস্ট্রিয়াকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে প্রথম রাউন্ডেই বিদায়ের হতাশা।