শোক থেকেই প্রেরণা খুঁজছে ক্রোয়েশিয়া
ভেডরান চরলুকার রক্তে মাখামাখি মুখের ছবিটা দেখেছেন নিশ্চয়ই? তুরস্কের বিপক্ষে ম্যাচে খুব বাজেভাবে আহত হওয়ার পরও মাঠ ছাড়েন নি ক্রোয়েশিয়ার সেন্টার ব্যাক। দলের প্রতি, দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার মাত্রা উচ্চনাদেই প্রশংসিত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ১-০ ব্যবধানে জিতে চলতি ইউরোতে শুভ সূচনাই করেছে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সে আনন্দ খুব বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় নি। ম্যাচ শেষে ড্রেসিং রুমে ফিরতে না ফিরতেই অধিনায়ক দারিও সরনাকে ব্যাগ গোছাতে হয়েছে দেশের বিমান ধরার জন্য। বাবার মৃত্যু সংবাদটা যে তখনই পেয়েছেন!
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। বাবা মারা গেছেন গোলকিপিং কোচ মারিয়ান মরমিকেরও। ‘স্ট্রোক’ করেছেন এক নারী স্টাফের স্বামী। সবমিলিয়ে যেন শনি ভর করেছিল ক্রোয়েশিয়ার উপর। তবে সেটা দলের মধ্যে চেপে বসতে দেন নি কোচ আন্তে ক্যাচিচ। তাঁর ‘শোককে শক্তিতে পরিণত’ করার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আজ পূর্ণোদ্দমেই চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে ক্রোয়েশিয়া।
দলকে ঠিক কী বলেছেন কোচ? “প্রশ্নটা হচ্ছে এইসব ক্ষেত্রে আপনি আসলে কী করতে পারেন? (গত ক’দিনে) অনেক বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছি আমরা। এমন সময়ে স্বাভাবিক থাকাটা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু মনে হয়েছে এসবই তো প্রেরণা হতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের মনোযোগ কেবলই আগামীকালের ম্যাচে। নিজেদের সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করবো আমরা।”
অধিনায়ক সরনা আদৌ আর খেলবেন কিনা এই টুর্নামেন্টে, সে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল ভালোমতোই। তবে বাবার শেষকৃত্যে যোগ দিয়েই ফিরতি ফ্লাইটে ফ্রান্সে ফিরে গেছেন, গতকালের ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন। সংগত কারণেই ম্যাচ সংক্রান্ত কথাবার্তার চেয়ে ওসব নিয়ে প্রশ্ন উঠলো বেশী। না ফেরার কোনো চিন্তা কি ছিল? সরনা বলছেন বাবার শেষ ইচ্ছে হিসেবেই ফিরে এসেছেন, “তাঁর জীবনের একটাই মাত্র চাওয়া ছিল, আমি যেনো জাতীয় দলের হয়ে সম্ভব সবকিছু জিতি। বাড়ি যাওয়ার পর ওখানেও সবাই আমাকে একই কথা বলছিল, বাবা বলে গেছেন আমি যেন দলের সাথেই থাকি, সেরাটা অর্জনের চেষ্টা করি।”
গণমাধ্যমকর্মীরা ঘুরেফিরে এই বিষয়েই প্রশ্ন করতে থাকলে একসময় বাধ্য হয়েই প্রসঙ্গ বদলানোর অনুরোধ করেন ক্রোয়াট ক্যাপ্টেন। তাঁর এভাবে ফিরে আসায় কেউ অবাক হয়ে থাকলে তাঁদের জন্য সরনা জানাচ্ছেন তাঁর এমন দায়বদ্ধতার প্রকাশ নতুন কিছু নয়, “বিয়ের পরের রাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে উড়াল দিয়েছিলাম। এটা জাতীয় দল এবং আমি সে দলের অধিনায়ক।”
আর অধিনায়ক হিসেবে নিজের দলকে নিয়ে যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী সরনা। এমনকি ১৮ বছরের আগের বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া ক্রোয়েশিয়া দলের চেয়েও এই দলকে এগিয়ে রাখতে চান তিনি। এবার কী করতে পারবেন সে কীর্তন তিনি গাইছেন না। তবে বলছেন, সমর্থকদের ভালো কিছু উপহার দিতে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েই খেলেন তাঁরা।
সেটা বোধকরি আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। রক্তক্ষরণ- হোক সেটা বাইরে কিংবা ভিতরে...চরলুকা, সরনাদের দাওয়াই যে একটাই, দেশের জন্য খেলো!