আহা, কার্ডিফ!
মাতাল ‘হাওয়া’!
শেন ওয়াটসনের ২৪তম জন্মদিন। সাত সতীর্থের সঙ্গে সেটিই উদযাপন করতে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। পরেরদিন বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ, সবাই হোটেলে ফিরে এলেন আগেভাগেই। রয়ে গেলেন সাইমন্ডস, একটু বেশী সতেজ হতেই কিনা একটু বেশী পান করে ফেললেন। পরদিন সকালে যখন সাইমন্ডস এলেন ওয়ার্ম-আপে, তখনও তাঁর মুখে আগের রাতে পান করা ‘সুরা’র গন্ধ, শরীরে ‘আমেজ’। ফিট নন সে ম্যাচ খেলার জন্য, সাইডলাইনে থেকেই তাই ম্যাচটা দেখতে হলো ‘রয়’কে। বদলী হিসেবে খেললেন সাইমন ক্যাটিচ, পরে সাইমন্ডসকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল দুই ম্যাচ।
মাশরাফিতেই শুরু
একটু ড্রিফট, ঘন্টায় ৭৯ মাইল গতির ব্যাক অব আ লেংথের বলটা অ্যাডাম গিলক্রিস্ট খেলতে গেলেন ব্যাকফুটে গিয়ে। মিস করলেন, বল লাগলো প্যাডে। বিলি বাউডেন তুলে ধরলেন ‘ক্রুকেড-ফিংগার’! কদিন পরই শুরু হতে যাওয়া অ্যাশেজটা মোটামুটি দুঃস্বপ্নই উপহার দিয়েছিল ব্যাট হাতে গিলিকে, ৫ টেস্টে ২২.৬২ গড়ে করেছিলেন ১৮১ রান, ছিলনা একটিও ফিফটি! গিলির ইংলিশ গ্রীষ্মের আফসোসের শুরুটা হয়েছিল মাশরাফির বলেই! ৬ষ্ঠ ওভারে রিকি পন্টিংকে এলবিডাব্লিউ করলেন তাপস বৈশ্য, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে গেল ৯ রানে ২ উইকেট!
‘নো’, বৈশ্য!
৩০ রানে মিড-অফে মোহাম্মদ রফিককে ক্যাচ দিলেন ম্যাথু হেইডেন। কিন্তু আউট হলেন না, তাপস বৈশ্য যে করেছেন নো! সেই ইনিংসে বৈশ্যকে যেন পেয়ে বসেছিল নো বলের ‘নেশা’, মোট নো দিয়েছিলেন আটটি! তবুও বোলিংয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন, পন্টিংয়ের পর দুই সর্বোচ্চ স্কোরার ড্যামিয়েন মার্টিন ও মাইকেল ক্লার্ককেও ফিরিয়েছিলেন তিনিই, মোট ৬৯ রান দিয়ে।
হাসি-ক্যাটিচে অস্ট্রেলিয়ার হাসি
৪৩.৩ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১৮৩, ৫ উইকেটে। সেখান থেকেই রান গিয়ে দাঁড়ালো ২৪৯, ওই ৫ উইকেটেই। মাইক হাসি করলেন ২১ বলে ৩১, সাইমন ক্যাটিচ ২৩ বলে ৩৬। দুজনের জুটিতে শেষ ৬.৩ ওভারে এলো ৬৬ রান। অস্ট্রেলিয়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, শুরু থেকেই চেপে ধরা বাংলাদেশের সঙ্গে এই স্কোরটা তো মোটামুটি নিরাপদই!
গুল্লুর ‘সংগ্রাম’
নাফিস ইকবাল ফিরেছিলেন ৮ম ওভারে। তুষার ইমরানও ফিরে গেলেন ১৬তম ওভারে। রয়ে গেলেন জাভেদ ওমর বেলিম। মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচকে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে যখন হেইডেনকে ক্যাচ দিলেন, জাভেদের রান তখন ১৯। খেলে ফেলেছেন ৫১টি বল, উইকেটে ছিলেন ৮৪ মিনিট!
একপ্রান্তে জীবন, অন্যপ্রান্তে মরণ
ততক্ষণে বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন সুমন; মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে। ৪৭ রানে দাঁড়িয়ে যেন একটু বিভ্রান্তই হয়ে পড়লেন হাবিবুল বাশার। ফুলটস বলটা মিডউইকেটে খেলেই পড়িমড়ি ছুটলেন। ফিরে আসলেন একটু পরেই, সরাসরি থ্রোতে ভেঙ্গে গেল স্ট্যাম্প। বল স্ট্যাম্পে লেগে আসলো সামনে, আবার ছুটলেন রান নিতে। গিলক্রিস্ট আন্ডারআর্ম করে দিলেন গিলেস্পিকে, তিনি ভাঙ্গলেন ওপারের স্ট্যাম্প। ডেভিড শেফার্ড টেলিভিশন আম্পায়ারের দ্বারস্থ হলেন। মার্ক বেনসন দেখলেন দুই প্রান্তেই। ক্যাথেড্রাল এন্ডে বাংলাদেশ অধিনায়ক বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু রিভার টার্ফ এন্ডে ঠিকই আউট হলেন!
আহা, আশরাফুল!
ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে খেয়েছিলেন গোল্ডেন ডাক। এ ম্যাচে তাই ব্যাটিং পজিশনে অবনতি হলো তাঁর। নামলেন চারে। ৫০তম ওয়ানডে ছিল তাঁর। এ ম্যাচের আগে গড় ছিল ১৬.৫০। গ্লেন ম্যাকগ্রাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে চার মেরে করেছিলেন ফিফটি। তাঁর বলেই এলো শততম রান। ১০৮তম ওয়ানডেতে এসে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ানকে পেলো বাংলাদেশ, মেহরাব হোসেন অপি পেলেন সঙ্গী। মোহাম্মদ আশরাফুল তো গড়লেন জয়েরই ভিত!
১১টি চার মেরেছিলেন, ছিল কাভার ড্রাইভ, ছিল সুইপ, ছিল ইনসাইড-আউটে বাউন্ডারি, ছিল ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে বাউন্ডারি। ছিল ‘হোয়্যাক’, ছিল ‘চিকি-শট’। জ্যাসন গিলস্পি মিড-উইকেটে একটা ক্যাচ মিস করেছিলেন, তাঁর সুযোগটা নিয়েছিলেন কী নিদারুণভাবে! ১০১ বলে ১০০ রান করে আউট হওয়ার পর গিলক্রিস্ট ছুটে এসে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, আশরাফুলের ইনিংসটা যে ছিল অভিনন্দনের চেয়েও বেশী কিছু প্রাপ্তির!
শট, শর্ট
গিলেস্পিকে কাভার দিয়ে চার মেরেছিলেন। ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মারলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। দরকার ১০ বলে ৯। একটা সিঙ্গেল নিলেন তিনি, আফতাব আহমেদও নিলেন। ৮ বলে ৭ প্রয়োজন। গ্লেন ম্যাকগ্রা দুইটা বলই করলেন শর্ট, মোহাম্মদ রফিক মিস করলেন দুইটাই! বিলি বাউডেন বাউন্সারের সংকেত দিলেন না একটাতেও! ম্যাকগ্রার অভিজ্ঞতায় মার খেয়ে গেল রফিকের অভিজ্ঞতা!
ছয় ঐতিহাসিক!
৬ বলে ৭ রান। বাংলাদেশ আর ঐতিহাসিক জয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে এমন সমীকরণ। জ্যাসন গিলস্পির ফুললেংথের বলটা টেনে মারলেন। লং-অনের সীমানা পেড়িয়ে গেল তা! আফতাব আহমেদ ঢুকে গেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে! আইসিসি ট্রফিতে খালেদ মাসুদের সেই ছক্কার পর সবচেয়ে বিখ্যাত ছক্কা! পরের বলটা ঠিকমতো খেলতে পারেননি, তাতে কী! বাংলাদেশ ঠিকই পেয়েছে জয়, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে!
কী বলবেন এই জয়কে?
‘জয় ঐতিহাসিক’!
ছবি ঐতিহাসিক!