কিক অফের আগেঃ জার্মানির গৃহযুদ্ধ এবং রাকিটিচের ‘আকুতি’
ঘরের শত্রু বিভীষণঃ
পোল্যান্ডের সাথে ম্যাচে গোলমুখে শট নেওয়ার ব্যর্থতা সমর্থক-অনুরাগীদের মত জার্মান ডিফেন্ডার জেরোম বোয়াটেংকেও বিরক্ত করে তুলেছে। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমরা আক্রমণে শটই নেইনি ঠিকমত। এভাবে ফুটবল হয় না। এভাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা খেলে না’। অবশ্য তার এমন মন্তব্যে চটেছেন তারই সতীর্থ ও জার্মান আক্রমণের অন্যতম প্রধান অস্ত্র মেসুত ওজিল, ‘এটা তার মতামত। শুনে মনে হচ্ছে সে ঠিকই আক্রমণাত্মক ফুটবলটা খেলতে পারে’। অপরদিকে, সাবের জার্মান কাপ্তান মাইকেল বালাকের ‘এই জার্মান দলে নেতৃত্বের অভাব’ এমন মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সামি খেদিরা, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্বসেরা দল হওয়ায় এক ম্যাচ খারাপ গেলেই আপনাকে কথা শুনতে হবে। বালাকের এমন মন্তব্য আসলেই হাস্যকর’।
সব মিলিয়ে বলা যায়, জার্মান ক্যাম্প খুব একটা শান্তিতে নেই পোল্যান্ডের সাথে ম্যাচ ড্র করার পর থেকে। আজ তাই গ্রুপের শেষ ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা চাইবে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে। গোটজেকে ‘ফলস নাইনে’ খেলানোর বাজিটা বিফলেই গিয়েছে বলা যায়। আজ তাই মাঠে শুরু থেকেই দেখা যেতে পারে মারিও গোমেজ বা আন্দ্রে শুর্লেকে। গোলমুখে এরকম এলোমেলো খেললে আইরিশরাও কাঁপিয়ে দিতে পারে জার্মানদের, ইউক্রেনকে হারিয়ে আজ ড্র করলেই সেরা তৃতীয় দলের চারটির একটি হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখবে তারা।
এখন পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা কি পারবে নিন্দুকের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে? নাকি আরো একটি আইরিশ বিপ্লব দেখতে যাচ্ছি আমরা?
পোল্যান্ডের সামনে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানিঃ
বাছাইপর্বে জার্মানীকে হারিয়েই নিজেদেরকে পাদপ্রদীপের নিচে নিয়ে এসেছিল পোল্যান্ড। এরপর মূলপর্বে আইরিশদের হারানোর পর জার্মানীর সাথে প্রায় জিতেই গিয়েছিল লেওয়ান্ডস্কিরা। কিন্তু স্ট্রাইকারদের মিসের মহড়ায় তাই জার্মানীর সাথে সমান পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পোল্যান্ড আজ জার্মানদের চেয়ে বড় ব্যবধানে জিতলেই হয়ে যাবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। অপরদিকে, ইউক্রেনের জন্য ম্যাচটি নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতা। দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যে ইউরো থেকে বিদায় নিয়েছে তারা। তাই আজকের ম্যাচটি পোল্যান্ডের সামনে জার্মানীকে টপকানোর এক সোনালী সুযোগ। লেওয়ান্ডস্কি, মিলিকরা কি পারবেন প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতে?
চেকদের লক্ষ্য সেরা তৃতীয়ঃ
প্রথম ম্যাচে স্পেনকে প্রায় রুখেই দিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্র। কিন্তু ৮৭ মিনিটে গোল খেয়ে ড্রয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় রসিস্কিদের। পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সাথে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ২-২ এ ড্র করা চেকরা আজ জিততে পারলে সেরা তৃতীয় দলগুলোর একটি হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার টিকেট পেয়ে যাবে। কিন্তু তাদের জন্য দুঃসংবাদ হল ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়া থমাস রসিস্কির অনুপস্থিতি। আর দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়া তুরস্কের জন্য শেষ ম্যাচটা ইউক্রেনের মতই নিয়ম রক্ষার। ’৯৬ এর রানার আপরা কি পারবে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে? নাকি তুরষ্ক নিজ সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাবে?
ইনিয়েস্তাকে বিশ্রাম দিতে রাকিটিচের ‘আকুতি’:
এখন পর্যন্ত ইউরোতে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ানোর একজন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। স্পেনের নিউক্লিয়াসকে তাই "ভয়" পাচ্ছেন ক্লাব সতীর্থ ইভান রাকিটিচ। তাই রসিকতা করে বলেছেন, ‘স্পেনের কোচের কাছে আ্মার একটাই অনুরোধ, দয়া করে ইনিয়েস্তাকে বিশ্রাম দিন’। আরো বলেছেন, ‘আশা করি, বুস্কেটস এবং ইনিয়েস্তা ভুলে আমাকে অ্যাসিস্ট করবে’। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রোয়েশিয়ারও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত।
দু’দলের দেখা হয়েছিল শেষ ইউরোতেও। সেবার ন্যূনতম ব্যবধানে ক্রোয়েটদের হারিয়েছিলো দেল বস্ক শিষ্যরা। স্পেনের দলে ইনজুরি ঝামেলা না থাকলেও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যমাঠে ইনজুরির জন্য থাকছেন না লুকা মদ্রিচ। তার জায়গায় থাকবেন তারই রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ মাতেও কোভাচিচ।
দলের মূল অস্ত্রকে ছাড়া রাকিটিচ, কোভাচিচ, পেরিসিচরা কি পারবেন ইউরোতে প্রায় অপরাজেয় হয়ে ওঠা স্পেনকে দমিয়ে রাখতে? নাকি তারুণ্যের বিপ্লব ঘটা এই স্পেন দলটি আবারো নিজেদের জাত চেনাবে? ফুটবল অনুরাগীদের মনে ঘুরপাক খেতে থাকা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে সি গ্রুপের সেরা দুই দলের লড়াইয়ের শেষেই।