কিক অফের আগে: আবার রোনালদোর দিন?
আজ পর্দা উঠছে ইউরোর নকআউট পর্বের। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হবে, নাহলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া লাগবে- দৃশ্যপটটা যখন এমন, তখন পোল্যান্ড, ওয়েলস, পর্তুগাল তাকিয়ে থাকবে তাদের তিন মূল ভরসা লেওয়ানডস্কি, বেল এবং রোনালদোর দিকে। প্রতিভা নিয়ে প্রশ্নাতীত এই তিন বিশ্বতারকার চকিত জাদুই হয়ে যেতে পারে তাদের দেশের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট।
ভরসা যখন রোনালদো
তুলনামূলকভাবে সহজ গ্রুপ পাওয়ায় পর্তুগালকে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন ও রোনালদোর এই ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পক্ষে বাজি ধরেছিলেন অনেকেই। কিন্তু প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সাথে একেবারেই নিজের ছায়া হয়ে থাকা রোনালদো দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রিয়ার সাথে প্রাণপণ চেষ্টা করেও পেলেন না গোল। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসলো ম্যাচের শেষভাগের পেনাল্টি মিস। মাঠের ভেতরে ‘অক্ষমতা’ আর মাঠের বাইরের বিতর্ক- সহজ গ্রুপে পড়ার পরেও যখন গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়া চোখ রাঙ্গাচ্ছিল, তখনই দেখা মিললো সেই রোনালদোর। তিন তিন বার পিছিয়ে পড়ার পরেও তার দুই গোল এবং এক অ্যাসিস্টের দরুণ কোনোমতে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় পর্তুগাল। ক্রোয়েশিয়া বধের জন্য আজো যে অগণিত সমর্থক ও সমগ্র পর্তুগাল তারই দিকে তাকিয়ে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
ইউরোর মূলপর্বে একবারই দেখা হয়েছিল পর্তুগাল ও ক্রোয়েশিয়ার, ১৯৯৬ সালে। সেই ম্যাচে ক্রোয়েশীয়দের ৩-০ তে উড়িয়ে দিয়েছিল ফিগোর পর্তুগাল। সর্বমোট তিনবারের দেখায় প্রতিটিতেই জিতেছে পর্তুগাল। ক্রোয়েশিয়া জেতা তো দূরে থাক, পর্তুগীজ ডিফেন্সই ভেদ করতে পারেনি একবারো।
দেশের প্রয়োজনের সময় দেশকে একাধিকবার একা টেনে নেয়া পর্তুগীজ কাপ্তান ও বরপুত্র কি পারবেন আবারো নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবে? নাকি মদ্রিচ, রাকিটিচ, পেরিসিচরা ‘০৮এর পর আবারো চলে যাবেন কোয়ার্টার ফাইনালে? উত্তরটা জানা যাবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় অনুষ্ঠিতব্য স্তাদ বোলার্ত-দেলেলিসের ম্যাচটির শেষ বাঁশি বাজার পর।
ব্যবধান শুধু বেলঃ
অসাধারণ এক বাছাইপর্ব কাটিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ইউরো খেলতে আসা ওয়েলস গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড, স্লোভাকিয়াকে টপকে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হয়ে চমকে দিয়েছে সবাইকে। দলের মূল দুই তারকা বেল ও রামসির নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছাড়াও আরো একটি জিনিস ফুটবলবিশ্বের মন কেড়েছে। সেটি হল ওয়েলস দলের একাত্মতা। একক জাদুর চেয়ে দলগত ফলাফলই উইলিয়ামস বাহিনীর মূল লক্ষ্য। অনেকে এই একাত্মতাকে লেস্টির সিটির একাত্মতার সাথে তুলনাও দিয়েছেন। দলের মূলমন্ত্র ‘টুগেদার স্ট্রংগার’-এ শতভাগ অনুপ্রাণিত ক্রিস কোলম্যান শিষ্যদের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার পথের কাঁটা উত্তর আয়ারল্যান্ড।
একে তো নিজেদের ইউরো ইতিহাসের প্রথম নকআউট ম্যাচ, তার উপর ফেবারিট হওয়ার তকমার বাড়তি চাপটা রাশ, গিগসের উত্তরসূরিরা কিভাবে নেয়, তা-ই দেখার বিষয়। নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে দু’ দলই পাচ্ছে পূর্ণশক্তির একাদশ।
এবারের আসরের অন্যতম সেরা চমক ওয়েলস কি পারবে ইতিহাস রচনা করতে? বেল কি পারবেন আবারো নিজ দেশের ত্রাণকর্তা হতে? উত্তরগুলো সময়ই জানিয়ে দেবে।
বিস্ফোরণের অপেক্ষায় লেভানডফস্কি নামক ভলকানোঃ
ইউরো শুরুর আগে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সবার শুরুর দিকেই ছিলেন। কী অবিশ্বাস্য, এখন পর্যন্ত একটা গোলও করতে পারেননি রবার্ট লেভানডফস্কি। আক্রমণ যেখানে পোল্যান্ডের শক্তি হওয়ার কথা, সেখানে তাদের রক্ষণই আছে দারুণ ফর্মে। গ্রুপ পর্বে একবারও বল ঢোকেনি পোল্যান্ডের জালে। কিন্তু লেভানডফস্কি সব পাওনা গোল আজ নিশ্চয় কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে দিতে চাইবেন।
সুইজারল্যান্ডের ভরসাও সেই রক্ষণ। গ্রুপ পর্বে মাত্র দুই গোল করেই উঠে গেছে চূড়ান্ত পর্বে। অথচ তাদের জালে বল ঢুকেছে মাত্র একবার। দুই দলের ফর্ম যা বলছে, তাতে আজ গোলশূন্য ড্রয়ের পর ম্যাচ অতিরিক্ত সময় এমনকি টাইব্রেকারে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।