কিক অফের আগে: এবার কি ইতালির প্রতিশোধ?
আজ ইউরোতে শেষ ষোলোর দু দুটো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলেও সমগ্র ফুটবলবিশ্ব এখনো হতবিহ্বল হয়ে আছে টানা চতুর্থ ফাইনাল হেরে লিওনেল মেসির হঠাৎ অবসরে। ফুটবল অনুরাগীদের এই কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা আরো বিস্তৃত হতে পারে আজকের স্পেন বনাম ইতালি ম্যাচের পরে। বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই, আগামী বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা কম। সেজন্যই আজ স্প্যানিশদের বিপক্ষে জিততে না পারলে এটিই হয়ে যেতে পারে ইতালীয় কিংবদন্তী জিয়ানলুইজি বুফনের শেষ ম্যাচ আজ্জুরিদের হয়ে। মেসির মত বিস্ময়কর সিদ্ধান্তও নিতে পারেন বর্ষীয়ান গোলকিপার। অপর ম্যাচে এবারের ইউরোর ‘লেস্টার সিটি’ আইসল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
কিয়েভ, ২০১২। ফাইনালের অন্তিম মূহুর্তে ৪-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরেও ক্যাসিয়াসের রেফারির কাছে শেষ বাঁশি বাজানোর বিনীত অনুরোধ আজো ইতালি সমর্থকদের মনে নাড়া দেয়। আকস্মিকভাবে ফাইনালে উঠে ’০৮ এর কোয়ার্টার ফাইনালের মত আবারো স্পেনের কাছে হার মানতে হয় আজ্জুরিদের। দুই বছর দায়িত্বে থাকার পর অবশেষে কোচ আন্তোনিও কন্তের সামনে এসেছে নিজের প্রথম নকআউট ম্যাচ, প্রতিপক্ষ দীর্ঘ ২২ বছর ধরে যাদের কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টে হারাতে পারে নি ইতালি, সেই স্প্যানিশরাই।
আজকের ম্যাচে নিঃসন্দেহে স্পেন ফেবারিট হলেও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তাদের নড়বড়ে ডিফেন্স ইতালির জন্য সুসংবাদই বটে। নিজেদের ইতিহাসে ৩৪ দেখায় সমান সমান ১০ জয় দু'দলের, ড্র ১৪টি। আজকের ম্যাচটি দিয়ে ইউরোর ইতিহাসে সর্বাধিক খেলা 'ফিক্সচার' হতে যাচ্ছে স্পেন বনাম ইতালি।
স্প্যানিশ শিবিরে কোনো ইনজুরি না থাকায় টুর্নামেন্টে টানা চতুর্থবারের মত অপরিবর্তিত একাদশ দেখা যেতে পারে ভিসেন্তে দেল বস্কের কাছ থেকে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বাজে কিপিংয়ের পরও ডি গেয়ার ওপর আস্থায় কোনো টান পড়ে নি, এমনটা জানিয়ে আজো স্প্যানিশ গোলে তাকে দেখা যাবে- সে আভাস দিয়েছেন সতীর্থ সেস্ক ফ্যাব্রেগাস। তবে, ইতালীয় শিবিরে আছে কিছু দুঃসংবাদ, এবারের ইউরোতে ইতালির হয়ে সর্বাধিক সুযোগ তৈরি করা মিডফিল্ডার আন্তনিও কান্দ্রেভা এবং বার্নাদেশির অনুপস্থিতি।
এর ফলে ফরমেশন ও খেলার ধরণে আসতে পারে পরিবর্তন। পরিচিত ৩-৫-২ ছেড়ে ৩-৪-৩ ফরমেশনে দল সাজাতে পারেন কন্তে। সেক্ষেত্রে আক্রমণভাগে বেলজিয়ামের বিপক্ষে গোল করা ইমানুয়েল জিয়াক্কিরিনিকে দেখা যেতে পারে শুরু থেকেই এডার এবং পেলের সাথে। মিডফিল্ডে পারোলো, ডি রসি আর কান্দ্রেভার ডেপুটি হিসেবে দেখা যেতে পারে রোমা ফুলব্যাক আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জিকে। আর ফুলব্যাকে যথারীতি দারমিয়ান ও ডি শিলিওর জায়গা পাকাই বলা চলে। আজ ইতালির খেলোয়াড়দের একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। কারণ, আজ হলুড কার্ড দেখলে সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনাল মিস করতে পারেন দশ দশজন খেলোয়াড়। অপরদিকে, স্পেনের এমন অবস্থায় আছেন কেবল কাপ্তান রামোস।
ইতালি কি পারবে এই ‘ভাঙ্গাচোরা’ দল নিয়ে, যাদেরকে নিজ সমর্থকেরাই হিসেবে রাখেন নি, চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে? নাকি অনভিজ্ঞ ও তরুণ স্পেন ইতালির ২২ বছরের অপেক্ষাটা আরো দীর্ঘায়িত করবে? উত্তর সব জানা যাবে স্তাদ দে ফ্রান্সে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার ম্যাচটি শেষে।
আর অন্যদিকে ইউরোর মূলপর্বে আসার পর থেকে একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টি করতে থাকা আইসল্যান্ড আজ নিজেদের ইতিহাসের প্রথম নক আউট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, কোনো টুর্নামেন্টের নক আউটে যারা বিগত এক দশকে জেতেনি একটি ম্যাচও। শেষ নয় ম্যাচে আইসল্যান্ড অপরাজিত থাকলেও ইংল্যান্ডের সাথে তাদের লড়াইটি কাগজে কলমে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, আদতে ঠিক ততটাই কঠিন হতে যাচ্ছে - এমনটাই মনে করছে ইংলিশ শিবির।
আপাতদৃষ্টে 'ফেবারিট' ইংল্যান্ডের প্রমাণ করার আছে অনেককিছুই। তাই তাঁরাই চাপে থাকবে এমনটাই বলেছেন আইসল্যান্ড কোচ লারস লাগেরব্যাক। আগের ম্যাচে বিশ্রাম পাওয়া সব ইংলিশ তারকারা আজ শুরু থেকেই খেলবেন এমন আভাসই দিয়েছেন কোচ রয় হজসন। অপরদিকে স্পেনের পর ইউরোতে দ্বিতীয় দল হিসেবে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই অপরিবর্তিত দল নামানো আইসল্যান্ড আজও হাঁটতে পারে একই পথে। এই ম্যাচের জয়ী দলের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ফ্রান্স।
বারবার ব্যর্থতার মুখ দেখা ইংলিশরা কি পারবে ’৬৬ এর পর আবার কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রমাণ করতে? নাকি ছুটে চলবে আইসল্যান্ডিক রূপকথার ঘোড়া? উত্তরগুলো সময়ই জানিয়ে দেবে।