আছে ছোটরাও
কড়া নাড়ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সপ্তাহ দুয়েকও আর বাকি নেই। বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশ মানে এখনও কেবল ক্রিকেটই! দুনিয়াকে লাল-সবুজের শক্তির জায়গা জানান দেয়ার সুযোগটা যে এখানেই! দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেও তাই বিশ্বকাপ জ্বরের উত্তাপটা বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর ১০০ দিন আগে থেকে প্যাভিলিয়নের ক্ষণগণনায় পাঠকদেরকে মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে বিগত সব আসরের রোমন্থনীয় স্মৃতিগুলো। ব্যাটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই মাঠে গড়ানোর প্রাক্কালে অংশগ্রহণকারী দলসমূহ নিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের বিশেষ আরেকটি ধারাবাহিক আয়োজন। প্রথম পর্বে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক দুই গ্রুপের চার ‘মিনো’ আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপর।
আফগানিস্তান
১২ অক্টোবর, ২০১৩। কাবুলে রাজপথে নেমে এসেছেন হাজারো মানুষ; মুহুর্মুহু স্লোগান আর জয়ধ্বনিতে মুখরিত বাতাস, বাদ্যের তালে তালে চলছে নেচগেয়ে উদযাপন। এমনই ছিল ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট নিয়ে দেশে ফেরা আফগানিস্তান ক্রিকেট টীমকে বরণ করে নেয়ার দৃশ্যটা।
গেলো বছর এশিয়া কাপে প্রথম অংশগ্রহণে বাংলাদেশ বধ করে সামর্থ্যের প্রমাণটা দেয়া হয়ে গেছে। একদিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপেও প্রথম সুযোগেই কবির খানের শীষ্যরা তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো কিছু করতে পারবে কিনা তা সময় বলবে, তবে মোহাম্মদ নবীরা সাধ্যের মধ্যে সবটুকু চেষ্টাই করবেন। অভিজ্ঞ নবীর নেতৃত্বাধীন দলের নওরোজ মঙ্গল, আসগর স্ট্যানিকজাই, শাপুর জদরান নামগুলো ক্রিকেট দুনিয়ায় এখন বেশ পরিচিতই। হামিদ হাসান, দৌলত জদরানরা গতির ঝড়ে লাইন-লেন্থ খুঁজে পেলে বিপদে পড়ে যেতে পারে যে কোন প্রতিপক্ষই!
এ যাত্রায়ও তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য বাংলাদেশ! টাইগার্স সাবধান!
পনেরো সদস্যের দলঃ মোহাম্মদ নবি (অধিনায়ক), নওরোজ মঙ্গল, আজগর স্ট্যানিগজাই, সলিমুল্লাহ শেনওয়ারি, আফসার জাজাই (উইকেটরক্ষক), নাজিবুল্লাহ জাদরান, নাসির জামাল, মিরওয়াইস আশরাফ, গুলবাদিন নাইব, হামিদ হাসান, শাপুর জাদরান, দৌলত জাদরান, আফতাব আলম, জাবেদ আহমেদি ও উসমান ঘানি।
স্কটল্যান্ড
স্কটল্যান্ডের কথা বললেই যেন ভেসে আসে ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই স্মৃতি। সেবার স্কটিশদের হারিয়েই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলে বাংলাদেশ। সেই আসরে তৃতীয় হয়ে প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খেলে স্কটল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে তো বটেই, সবগুলো ম্যাচে হেরেই খালি হাতে বিদায় নিয়েছে ।
বিশ্বকাপে অবশ্য স্কটল্যান্ড ধারাবাহিকভাবেই অধারাবাহিক। ৯৯ এর আসরের পর ২০০৩ বিশ্বকাপে থাকতে হয়েছিল দর্শক হয়ে। এরপর ২০০৭ সালে আবার খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু এবারও বলার মতো কিছু করতে পারেনি। ২০১১ বিশ্বকাপে আবার উৎরাতে ব্যর্থ হয়। অনুমিত চরিত্র বজায় রেখে ২০১৫ বিশ্বকাপে আবার ফিরেছে নতুন আশা নিয়ে।
এই মুহূর্তে র্যাঙ্কিংয়ে ১৪তম স্থানে থাকা দলটার নেতৃত্ব দেবেন প্রেস্টন মমসেন। সহ অধিনায়ক কাইল কোয়েটজারের দিকেও তাকিয়ে থাকবে দল। গত জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সফওে গিয়ে বিশ্বকাপের 'ড্রেস রিহার্স্যাল'ও সেরে রেখেছে। সেই সফরেও সাতটি ম্যাচের মধ্যে দুইটি জিতেছিল, বোঝাই যাচ্ছে এবার তারা কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।
পনেরো সদস্যের দলঃ প্রেস্টন মমসেন (অধিনায়ক),কাইল কোয়েটজার,রিচি ব্যারিংটন, ফ্রেডেরিক কোলম্যান,ম্যাথিউ ক্রস (উইকেটরক্ষক),জশুয়া ডেভি,অ্যাল্যাসডার ইভান্স, হ্যামিশ গ্যার্ডিনার,মাজিদ হক,মাইকেল লেস্ক,ম্যাট ম্যাচান,ক্যালাম ম্যাক্লাওড,সাফিয়ান শরিফ,রবার্ট টেইলর ও ইয়ান ওয়ার্ডল।
আয়ারল্যান্ড
২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট কেটেই পাকিস্তানকে হারিয়ে বাজিমাৎ...শেষ আটের লড়াইয়ে বাংলাদেশকেও বধ করে পোর্টারফিল্ডরা শক্তির জানানটা খুব ভালো করেই দেন। গেলোবারের বিশ্বকাপে কেভিন ও ব্রায়েনের দ্রুততম বিশ্বকাপ শতকের ম্যাচে ইংল্যান্ডও হার মানলে চমকে যোগ হয় নতুন মাত্রা। এ পর্যন্ত খেলা ৮৩টি একদিনের আন্তর্জাতিকের মধ্যে জয় ৩৭টিতে।
বর্তমান অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ব্যাটিং লাইন আপে দীর্ঘদিনের ভরসা। নীল ও ব্রায়েন, ইডি জয়েসরা নিজেদের দিনে যে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। কে’ ও ব্রায়নে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বলেও সমান দক্ষ। শেষ মুহূর্তে মিডিয়াম পেসার টিম মুরতাঘের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়াটা বড় দুঃসংবাদই। পেস আক্রমণে জন মুনি, অ্যালেক্স কুসাকরাই আপাতত ভরসা।
পনেরো সদস্যের দলঃ উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (অধিনায়ক),অ্যান্ডু বালবিরনি,পিটার কেইস, অ্যালেক্স কুস্যাক,জর্জ ডকরেল,অ্যাড জয়েস,অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন,জন মানি,টিম মুরটাক, কেভিন ও ব্রাইন,নেইল ও ব্রাইন,পল স্টারলিং,স্টুয়ার্ট থমসন,গ্যারি উইলসন ও ক্রেইগ ইয়াং।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিটাই প্রথম স্বীকৃত শিরোপা জয়। তারচেয়েও বড় প্রাপ্তিটা বোধহয় ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। এছাড়া ২০০০ হতে ২০০৬ সালের মধ্যে টানা চার বার এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ট্রফি ( এ সি সি) জয়ও ছিল আমিরাত ক্রিকেটের জন্য এক বিশাল পাওয়া।
আরম্ভ হতে যাওয়া এবারের বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণ করবে ক্রিকেট দুনিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র প্রতিনিধি দেশটি। গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হতে হবে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মত বাঘা বাঘা সব দলের বিপক্ষে।সামর্থ্য বিবেচনায় ভালো খেলাটাই হবে প্রাথমিক লক্ষ্য। সাথে একটা ভালো দিনে হয়তো ফলটাও...
পনেরো সদস্যের দলঃ মোহাম্মদ তৌকির (অধিনায়ক), খুররম খান, স্বপ্নিল পাতিল, সাকলাইন হায়দার, আমজাদ জাভেদ, সাইমান আনোয়ার, আমজাদ আলি, নাসির আজিজ, রোহান মোস্তফা, মানজুলা গুরুজ, আন্দ্রি বেরেনজার, ফাহাদ আল হাশমি, মোহাম্মদ নাভেদ, কামরান শাহজাদ ও কৃষ্ণ করাত।