• ইউরো
  • " />

     

    কিক অফের আগেঃ ফ্রান্সের অগ্নিপরীক্ষা

    কিক অফের আগেঃ ফ্রান্সের অগ্নিপরীক্ষা    

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেকদিন কেটে গেছে হয়ত; কিন্তু আজকের ইউরোর সেমিফাইনাল ম্যাচের সূত্রে আমাদের জানা হয়ে গেল যে, ১৯৪০ সালে জার্মান বাহিনী যেভাবে দ্রুতই ফ্রান্স দখল করে নিয়েছিল, ফ্রেঞ্চরা সে অপমান এখনো ভুলতে পারে নি। ইন্টারনেটে চলছে দুই দেশের মানুষের রেষারেষি। একদিকে ফ্রেঞ্চরা জানান দিচ্ছে যে ফ্রান্সের মাটিতে আরেকবার জার্মানির কাছে ফ্রান্স মাথা নত করবে না, আর অপরদিকে জার্মানরা তাদের স্বভাবসুলভ ঔদ্ধত্বের সাথে ঘোষণা করে যাচ্ছে যে ফাইনালে পর্তুগালকে পেয়ে তারা খুশী!

     

    ঈদের দিন বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মার্সেইর স্তাদে ভেলোড্রোমে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে জার্মানি ও ফ্রান্স। এই টুর্নামেন্টে ফ্রান্স এখনো অপরাজিত, প্রতিপক্ষের জালে সবচেয়ে বেশি গোলও তারা জড়িয়েছে - সেই সাথে আছে নিজ দেশে নিজের ঘরের মানুষদের সামনে খেলার এক বিশাল সুবিধে। কিন্তু তবুও ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম বলছেন, এটাই ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

     

    দেশমের কথা ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না কোনোমতেই। ইতিহাস বলে, কোনো টুর্নামেন্টে আয়োজক দেশকে নক আউট করার জন্য জার্মানির রেকর্ড অবিসংবাদিত। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর থেকে জার্মানি পরপর ৯ বার আয়োজক দেশকে হারিয়েছে। এমনকি যখন ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল পশ্চিম জার্মানি, তখনো পূর্ব জার্মানি তাদেরকে হারিয়ে দেখিয়েছে! আর গত বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিলের কি দশা হয়েছিল, সেটা সবার মনে থাকারই কথা।

     

    আর শুধুই ইতিহাস নয়, জোয়াকিম লো’র এই একাদশের টানা ৬টা বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে এবং এরা কেবল পরিসংখ্যান নয়, জার্মান আত্মবিশ্বাস এবং তাঁদের দক্ষতা দিয়েই খেলা নিজেদের কীভাবে করে নিতে হয়, সেটা ভাল করেই জানে। হামেলস, খেদিরা, গোমেজের অনুপস্থিতি একটু ভোগাবে হয়তো, কিন্তু ড্র্যাক্সলার, লিরয় সানে, গ্যোৎযার মত অ্যাটাকাররা যেকোন রক্ষণকে ছিঁড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখেন। 

     

    ফ্রান্স এখন পর্যন্ত সব ম্যাচই জিতে এসেছে কিন্তু অনেকগুলো জয়ে গ্রিজমান, জিরু এবং দিমিত্রি পায়েতের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য তাদেরকে বৈতরণি পার করে দিয়েছে। আর সত্যি বলতে কি জার্মানির যেরকম কোয়ার্টারে এক ইতালি অগ্নি পরীক্ষা হয়েছে, ফ্রান্সের তেমন কোনো বড় দলের মোকাবেলা করতেই হয় নি এখন পর্যন্ত। হামেলস এবং খেদিরা অনুপস্থিত - এটা ফ্রান্সের জন্য একটা বড় স্বস্তির কারণ হতে পারে।

     

    ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় শক্তি অ্যাটাকিং থার্ডে তাদের বৈচিত্র এবং ট্যালেন্টের সমাহার। আক্রমণে যাওয়ার জন্য ফ্রান্সের মাতুইদি, পগবা, পায়েত, গ্রিজমান, জিরু - প্রত্যেকেই নিজের পজিশনের বাইরে গিয়ে খেলার যোগ্যতা রাখেন এবং এই ইউরোতেই সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়েছেন। ফ্রান্সের তিনজন ফরোয়ার্ড - জিরু, পায়েত আর গ্রিজমান আছেন ইউরোর গোলশিকারীদের তালিকার শীর্ষে। যদিও দেশমের শিষ্যরা নয়ার, বোয়েটাং, শোয়ানস্টাইগার খচিত রক্ষণ এখনো ভেঙ্গে দেখায় নি, কিন্তু এরকম শক্ত ব্যুহ ভেদ করার খহমতা তাদের আছে তা বলাই বাহুল্য।

     

    সম্ভাব্য একাদশঃ

    জার্মানি আজকে পাচ্ছে না তাদের তিন কর্ণধারকে, ম্যাটস হামেলস সাসপেনশনের খাঁড়ায় পড়ে এ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁর জায়গা পূরণ করবেন বেনেডিক্ট হাওয়েডেস। আর ওদিকে ইনজুরির কারণে স্যামি খেদিরা এবং মারিও গোমেজও সেমিফাইনালের ম্যাচটি দেখবেন দর্শক হয়েই। গত বিশ্বকাপের দুজন নায়ক বাস্তিয়ান শোয়ানস্টাইগার এবং মারিও গোটশে এইদুইজনের জায়গা নেবেন। তবে লো'র কাছে সুযোগ আছে ক্রুসের সাথে লিভারপুল তারকা এমরে চান এবং মুলারের পাশে শালকের তরুণ ফরোয়ার্ড লিরয় সানে'কে খেলাবার। 

     

    জার্মানির সম্ভাব্য একাদশঃ 

    নয়ার, কিমিচ, বোয়েটাং, হাওয়েডেস, হেক্টর, শোয়ানস্টাইগার, ক্রুস, ওজিল, ড্র্যাক্সলার, গোটশে, মুলার

     

    ওদিকে ফ্রান্সের জন্য সুখবর, কারণ কারো মাথাতেই সাসপেনশনের খাঁড়া নেই এবং সবাই সুস্থ ও ম্যাচ ফিটই আছেন। কাজেই ধারণা করা হচ্ছে দেশম কোয়ার্টার ফাইনালের একাদশই খেলাবেন। তবে সাসপেনশন থেকে ফিরে আসা আদিল রামি ম্যাচ শুরু করতে পারেন। সেই সাথে যদি দেশম মনে করেন যে, ৪-২-৩-১ এর বদলে আরেকটু রক্ষণাত্মক ৪-৩-৩ এ খেলা উচিত তাহলে লেস্টার সিটির এনগোলো কান্টে জায়গা করে নেবেন একাদশে।

     

    ফ্রান্সের সম্ভাব্য একাদশঃ 

    লরিস, সানিয়া, উমতিতি, কসিয়েলনি, এভরা, মাতিউদি, সিসোকো, পগবা, পায়েত, গ্রিজমান, জিরু