"ওঁরা ১১ জন"
ইউরোর প্রতিটি ম্যাচেই নিয়মিত সংবাদ ও ম্যাচ প্রতিবেদন সরবরাহ করে গেছে প্যাভিলিয়ন। ইউরো শেষে তাই অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণের পর প্যাভিলিয়ন ফুটবল লিখিয়েরা বেছে নিয়েছেন তাঁদের সেরা একাদশ।
রুই প্যাট্রিসিও
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সেরা গোলরক্ষক হবেন, সেটা বোধ হয় পর্তুগাল গোলরক্ষক নিজেও ভাবেননি। টুর্নামেন্ট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরেছেন, তবে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন ফাইনালে। অন্তত তিন বার পর্তুগালকে নিশ্চিত গোল থেকে বাঁচিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচেও টাইব্রেকারে ছিলেন নায়ক। স্পোর্টিং লিসবনের এই গোলরক্ষক পেছনে ফেলে দিয়েছেন লরিস, বুফন, নয়্যারদের।
লিওনার্দো বনুচ্চি
কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেওয়া দলের কেউ সেরা একাদশে থাকার যোগ্য কি না, সেই প্রশ্ন ওঠাই যায়। তবে বনুচ্চির ক্ষেত্রে সেই সংশয় থাকার কথা নয়। ইতালির বিবিসি ত্রয়ীর প্রাণভোমরা হয়ে ছিলেন পুরো টুর্নামেন্টে। টাইব্রেকারে বিদায় নেওয়ার আগে তিনটি ক্লিন শিট রেখেছিলেন দলের হয়ে, ৩১ বার বল ক্লিয়ার করেছেন, ১৬ বার বল ছিনিয়ে নিয়েছেন। জার্মানির সঙ্গে ম্যাচে পেনাল্টি থেকে ইতালির সমতাসূচক গোলটিও করেছিলেন। বেলজিয়ামের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে করেছিলেন দারুণ এক অ্যাসিস্ট।
পেপে
খুব সম্ভবত পর্তুগালের হয়ে নিজের সেরা সময়টা কাটাচ্ছেন। সেমিফাইনালে বসে থাকতে হলেও ফাইনালে গিয়ে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছেন। পুরো ম্যাচে গ্রিজমানদের বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন, ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই ডিফেন্ডার। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে বেশ কয়েক বার রক্ষণে তাঁর দোসর বদলালেও পেপে ছিলেন প্রাচীরের মতো। নকআউট পর্বে যে পর্তুগাল মাত্র এক গোল খেয়েছে, তাঁর বড় কৃতিত্ব এই রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডারের। টুর্নামেন্টে তাঁর চেয়ে বেশি বল ছিনিয়ে নিয়েছেন শুধু ওয়েলসের চেস্টার।
জোনাস হেক্টর
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাঁকে মনে করা হচ্ছিল জার্মানির “একিলিস হিল”। কিন্তু শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সব সংশয় দূর করেছেন। বাঁ প্রান্ত দিয়ে যেমন বার বার ওপরে উঠেছেন, তেমনি রক্ষণও সামলেছেন ঠিকমতো। কোলনের এই লেফটব্যাককে কিনতে এখন বার্সা আগ্রহী, এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।
বাকারি সানিয়া
সেই অর্থে চোখে পড়ার মতো খেলতে পারেননি, তবে রাইট ব্যাকদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন ফ্রান্সের এই ডিফেন্ডার। পুরো টুর্নামেন্টে ছিলেন ধারাবাহিক। পুরো টুর্নামেন্টে ৩৮ বার বল ক্লিয়ার করেছেন, সাত বার বল ছিনিয়ে নিয়েছেন, সাতটি ট্যাকল করেছেন। পর্তুগালের সঙ্গে ফাইনালের আগে একটি ফাউলও করেননি!
টনি ক্রুস
জার্মানির নিষ্প্রভ আক্রমণকে ক্রমাগত জ্বালানি সরবরাহ করেও ক্রুস থেকে গেছেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। পুরো টুর্নামেন্টে ৫৮১টি পাস দিয়েছেন, এর মধ্যে ৯২ শতাংশ পাসই ছিল নিখুঁত। ক্রুসের চেয়ে বেশি পাস কেউ শেষ করেনি। জার্মানির প্রথম গোলটাই তাঁর সেট পিস থেকে, পরে আরও গোল করিয়েছেন।
অ্যারন রামসে
আর্সেনাল মিডফিল্ডার ওয়েলসের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, সেটা বোঝা গেছে পর্তুগালের সঙ্গে সেমিফাইনালে। রামসেবিহীন ওয়েলসের মধ্যমাঠ সেদিন একেবারেই বিবর্ণ ছিল। খুব সম্ভবত পুরো টুর্নামেন্টে ওয়েলসের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন, গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছেন চারটি। চারটি অ্যাসিস্ট আছে আর শুধু হ্যাজার্ডের।
দিমিত্রি পায়েট
যেভাবে শুরু করেছিলেন, গোল্ডেন বলটা তাঁর কাছে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। প্রথম ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জয় দেওয়া, পরের ম্যাচে আবার শেষ মুহূর্তের গোল। আইসল্যান্ডের সঙ্গে পরে আরেকটি গোলও করেছেন। গ্রুপ পর্বের ধারাবাহিকতা অবশ্য নকআউট পর্বে রাখতে পারেননি, ফাইনালে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন। তারপরও পায়েটই ছিলেন ফ্রান্সের বেশিরভাগ আক্রমণের মধ্যমণি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
টুর্নামেন্টের শুরুটা ছিল একেবারেই ভুলে যাওয়ার মতো। কিন্তু প্রয়োজনের সময় ঠিকই জ্বলে উঠেছেন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত জোড়া গোল করেছেন, পর্তুগাল তাতে ড্র করতে পেরেছে হাঙ্গেরির সঙ্গে। দ্বিতীয় রাউন্ডে কারেসমার গোলটা রোনালদোরই বানিয়ে দেওয়া। সেমিফাইনালে ওয়েলসের সঙ্গে গোল করার পাশাপাশি একটি করিয়েছেনও। কে জানে, ফাইনালে আলো ছড়ালে গোল্ডেন বলও পেয়ে যেতে পারতেন।
গ্যারেথ বেল
প্রথম তিন ম্যাচ শেষে খুব সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরাদের একজন ছিলেন। গ্রুপ পর্বে প্রতিটি ম্যাচেই গোল পেয়েছেন, সেট পিস থেকেই এসেছে দুইটি। তাঁর চেয়ে গোলে বেশি শট নিয়েছেন শুধু রোনালদো ও গ্রিজমান, বেশি ড্রিবলও কেউ করতে পারেননি। সেমিফাইনালেও দূর থেকে বেশ কয়েকটি চেষ্টা করেছিলেন, তাতে অবশ্য কাজ হয়নি।
আঁতোয়ান গ্রিজমান
জার্ড মুলার, মিশেল প্লাতিনি, মার্কো ফন বাস্তেনের পর চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোর একই আসরে গোল্ডেন বল ও বুট জিতলেন। ১৯৮৪ সালে প্লাতিনির পর কেউ প্রথম ছয় গোল করলেন। প্রথম ম্যাচের হতাশা ঝেড়ে ফেলে প্রতি ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন, ফাইনালে অবশ্য বিবর্ণ ছিলেন। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েও তাই রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
কোচঃ আন্তোনিও কন্তে
ইতালির কোচ এবার যেন দেখিয়ে দিয়েছেন, কৌশল ঠিক থাকলেও খর্বশক্তির বাহিনী নিয়েও যুদ্ধ জয় করা যায়। ৩-৫-২ ফর্মেশনের ইতালি শুরু থেকেই চমকে দিয়েছে সবাইকে, কন্তেও সীমিত শক্তির দল নিয়ে হারিয়ে দিয়েছেন স্পেন, বেলজিয়ামের মতো শক্তিদের। ইতালি শেষ আট থেকে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিলেও কন্তেই তাই সংশয়াতীতভাবে টুর্নামেন্ট সেরা কোচ।