যেভাবে এসেছে আইসল্যান্ডের 'তালি'
অষ্ট্রিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ, ইনজুরি টাইমের গোলে ম্যাচ জিতে নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ল আইসল্যান্ড, প্রথমবারের মতো পৌঁছে গেলো ইউরোর শেষ ষোলোয়। ওদিকে আরন গানারসনরা দলবেঁধে দর্শকসারির দিকে মুখ করে শুরু করলেন ‘নতুন’ এক উদযাপন। ছন্দে ছন্দে তালির সাথে ‘হুহ!’ গর্জনে মুখর হল স্টাডে ডি ফ্রান্সের গ্যালারি। ‘ভাইকিং’ নামে খ্যাতি পেয়ে যাওয়া এ উদযাপন এরপর দেখা গেছে ইউরোর অনেক ম্যাচেই। দেশে ফিরে আইসল্যান্ড দলের পাওয়া অভ্যর্থনারও অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল এটি। বলা হচ্ছে, আসছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও আগাম জায়গা পাকা করে ফেলেছে এই ‘থান্ডার ক্ল্যাপ’। পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়া ‘ম্যাক্সিকান ওয়েভ’-এর মতো এই উদযাপনও হয়তো এখন থেকে নিয়মিতই দেখতে পাবেন। তবে গ্যালারির বিখ্যাত ঢেউয়ের সাথে যেভাবে ম্যাক্সিকোর নামটা জড়িয়ে গেছে, ‘ভাইকিং’-এর মালিকানা কি আইসল্যান্ডাররা দাবী করতে পারেন? অনুসন্ধান বলছে, এ উদযাপন এবারের ইউরোতেই প্রথম নয়।
আইসল্যান্ডের যে সমর্থকগোষ্ঠীর হাত ধরে ইউরোতে ‘ভাইকিং’-এর আবির্ভাব, সেই টলফ্যানের নেতৃস্থানীয় একজন ক্রিস্টিন হলার জনসনই স্বীকার করছেন, এটা তাঁদের নিজেদের আবিষ্কার নয়, “এটা আসলে স্কটল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলের সমর্থকদের কাছ থেকে নেওয়া।”
ভাইকিং নামে পরিচিতি পেলেও জনসন বলছেন এর সাদৃশ্য মূলত ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া বিখ্যাত ছবি ‘থ্রি হান্ড্রেড’-এর স্পার্টানদের সাথে। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র লিওনিডাসকে একটি দৃশ্যে তাঁর বাহিনীর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, “স্পার্টান্স, তোমাদের পেশা কী?” বর্মে ঝংকার তুলে সমস্বরে জবাব আসে, ‘হুহ!’ লিওনিডাসের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন স্কটিশ অভিনেতা জেরার্ড বাটলার।
মূলত এখান থেকেই স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন ক্লাবের সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এটি। আর শুরুর কৃতিত্বটা এখনও পর্যন্ত পাচ্ছেন স্কটল্যান্ডের মাদারওয়েল ফুটবল ক্লাবের সমর্থকরা। তবে ঠিক কখন থেকে এর প্রচলন শুরু, বলতে পারছেন না ক্লাবটির সমর্থকগোষ্ঠীর মুখপাত্র ডেভ ওয়ার্ডরোপ, “বেশ ক’ বছর হল এটা এখানে জনপ্রিয় হয়ে গেছে। তবে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না শুরুটা ঠিক কবে থেকে।”
ওয়ার্ডরোপ বলছেন তাঁরা এটা অন্য কারও অনুকরণে শুরু করেন নি, “ছবির (থ্রি হান্ড্রেড) ভূমিকা থাকতে পারে এখানে। তবে আমাদের মনে হয় না যে এটা অন্য কোনো ক্লাবের সমর্থকদের দেখাদেখি আমরা শুরু করেছিলাম।”
মাদারওয়েলের সাথে খেলা থেকে ‘থান্ডারক্ল্যাপ’ জনপ্রিয় হতে শুরু করে স্কটল্যান্ডের অন্য ক্লাবগুলোর মধ্যেও। তবে সেটা যে এবারের ইউরো দিয়েই ‘বিশ্বজনীন’ হয়ে গেলো সেটা মানতে বোধহয় কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তারপরও কৃতিত্বটা মাদারওয়েল ক্লাব সমর্থকদেরই দিচ্ছেন টলফ্যানের জনসন, “আমরা যতদিনে এটা শুরু করেছি, ততদিনে এর মালিকানা অন্য কারও হাতে চলে গেছে। মাদারওয়েলকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই, আমাদেরকে এটা ধার দেয়ার জন্য!”