দুঃখ সয়েই এই এডার
একটা গোল বদলে দিতে পারে অনেক কিছুই, কখনও কখনও লিখে ফেলে ইতিহাসও। গোটা ইউরোজুড়ে কত গোলই তো হল, দিন শেষে অমূল্য বনে গেলো এডারের ওটাই। জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত মাত্র ৪টি গোল করেছেন, এর একটি দিয়েই কিনা দেশকে এনে দিলেন প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা হওয়ার স্বাদ। এমন উদযাপনের উপলক্ষ তো আর প্রতিদিন আসে না। আনন্দটুকু তাই প্রিয়জনদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়াটাই সংগত। কিন্তু প্রিয়জনের প্রসঙ্গ উঠতেই মলিন কেন এডারের মুখ? অনেকদিন চেপে রাখা অপ্রিয় সত্যটা এবার বলেই দিলেন, জানালেন খুনের অভিযোগে বেশ ক’ বছর ধরে ব্রিটেনে জেল খাটছেন তাঁর বাবা!
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউ থেকে এডারজিতো এন্টনিও মাসেডো লোপেজ মায়ের হাত ধরে পর্তুগালে পাড়ি জমান দু’ বছর বয়সে। আট বছর বয়স থেকে বেড়ে ওঠা এক বোর্ডিং কলেজে। জীবনের কালো অধ্যায়টা আসে এরও চার বছর পর, “আমার তখন ১২ বছর বয়স। সৎ মা খুন হলেন, দায় চাপলো বাবার ঘাড়ে। তিনি এখন জেলে, খুব সম্ভবত ১৬ বছরের সাজা পেয়েছিলেন।”
এডারের নতুন জীবনের শুরুটা সেখান থেকেই। বলছেন, পর্তুগীজ ক্লাব একাডেমিকায় পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বাবাকে আবার দেখতে পাবার তাড়না থেকেই, “একাডেমিকায় ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম কিছু রোজগারের আশায়, যেন ইংল্যান্ডে গিয়ে বাবাকে দেখতে পারি। প্রত্যেক ছুটিতেই তখন তাঁকে দেখতে যেতাম।”
মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে অবশ্য তাঁর শৈশব সংগ্রামের শুরুটা আরও আগে থেকেই। সেইসব দিনের কথা মনে করতেই বিষাদ নামে ইউরোজয়ী নায়কের কণ্ঠে, “দেশ ছেড়ে মায়ের সাথে পর্তুগালে এসেছিলাম বাবার সাথে থাকতে। একদিন বাবা এসে মায়ের বাসা থেকে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ক’দিন তাঁর সাথেই থাকলাম। এরপর একদিন আমাকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হল একটা কলেজে।”
সেদিনের অনেক পরে এডার বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর অভিভাবক আদতে দেশের সরকার; বাবা-মা দু’জনেই যে তাঁর দায়িত্ব নিতে অপারগ হয়েছিলেন!
গত মৌসুমে খেলেছেন ইংলিশ ক্লাব সোয়ানসি সিটিতে। বাবার সাথে গোপনে দেখাও করেছেন হয়তো। তবে কখনই সেটা প্রকাশ করেন নি। গত বছরের শেষে ক্লাবের ওয়েবসাইটে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেকড়ের জন্য হাহাকারটুকু ব্যক্ত করেছিলেন রসিকতার ছলেই, “আমি আসলে মি. ইন্টারন্যাশনাল। আমার এক বোন ওল্ভারহ্যাম্পটনে পড়াশুনা করছে, আরেক বোনও বেশ কিছুদিন ইংল্যান্ডে ছিল। ভাই থাকে পর্তুগালে, আত্মীয় আছে সবখানেই।”
আর এডার? নিজে আপাতত থিতু হচ্ছেন ফ্রান্সে। সোয়ানসি সিটি থেকে তাঁকে ধারে নিয়ে গিয়েছিল যে ক্লাব, সেই লিলে তাঁর সাথে চুক্তিটা পাকাই করে ফেলেছে।