একজন যুবরাজ ও একটি অসিবধ
তিনি নিজেও জানতেন না ভেতরে ইতিমধ্যেই বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ‘ক্যান্সার’। আর সেটাকে সঙ্গী করেই একটু একটু করে এগুচ্ছিলেন বিশ্বকাপের ‘টুর্নামেন্ট সেরা’ হওয়ার দিকে। ২০১১ আসরে যখন পদার্পণ করলেন, ফর্মটা ভালো ছিল না একেবারেই। তবে কিছু কিছু খেলোয়াড় আছেন, বড় আসর তথা বড় চ্যালেঞ্জ যাঁদের ভেতর থেকে বের করে আনে সেরাটা। ক্যান্সারকে জয় করে ক্রিকেটে ফেরার অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকা যুবরাজ সিং তাঁদেরই একজন।
দু’বছর ধরেই ‘সেঞ্চুরি’ নামক বস্তুটা ধরা দিচ্ছিল না তাঁর কাছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ম্যাচটায় কাটালেন সে খরা। গ্রুপ পর্বে ঐ ম্যাচসহ তিনটি লড়াইয়ে তাঁর ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্স ভারতকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা অপেক্ষা করছিল সেখানেই। বাঁচা-মরার সে যুদ্ধে প্রতিপক্ষ যে গত তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের শতকের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২৬০ রান জড়ো করল অসিরা। কিপটে বোলিংয়ের সাথে ২ উইকেট নিয়ে ভারতীয়দের সেরা বোলার ‘ইয়ুভি’। ২৬১ রানের লক্ষ্যটা ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপের জন্য খুব বড় কিছু হওয়ার কথা নয়। তবে মঞ্চটা যেহেতু বিশ্বকাপের ‘নক-আউট রাউন্ড’, আর প্রতিপক্ষ ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’, অনেক ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’ চলে আসাটাই স্বাভাবিক। চলে আসেও, যখন ৩৮তম ওভারে ১৮৭ রানের মাথায় ৫ম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ভারতীয় কাপ্তান মহেন্দ্র সিং ধোনি।
তরুণ সুরেশ রায়না যোগ দিলেন উইকেটে থাকা যুবরাজের সঙ্গে। রায়নার মধ্যে একটু তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা গেলেও অপরপ্রান্তে ‘ইয়ুভি’ কিন্তু ছিলেন দৃঢ় ও সাবধানী। নিয়মিত ‘সিঙ্গেল’ আদায় করে নিয়ে সচল রাখছিলেন রানের চাকা। কিন্তু যখন সময় এলো মেরে খেলার, ছাড় দিলেন না ব্রেট লি, শন টেইটদের ইয়র্কারগুলোকেও। দলীয় সর্বোচ্চ ৫৭ রান করার পথে ম্যাচ জেতানো শেষ শটটাও এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকেই। ম্যাচশেষে যুবরাজের সেই উক্তিটি দাগ কেটে গিয়েছিল অনেকের মনেই, “একজন ক্রিকেটার হিসেবে এই মুহূর্তটির জন্যই বেঁচে ছিলাম আমি।”