ফিল্ডিং যখন শিল্প
এখনকার যুগের ক্রিকেটারদের অনুশীলনের একটা বড় সময় কাটে ফিটনেস এবং ‘ফিল্ডিং স্কিল’ নিয়ে কাজ করে । ফিল্ডিংয়ে মুন্সিয়ানাটা তাই প্রত্যাশিতই । একশ বছর বা পঞ্চাশ বছর আগের চিত্রটা কিন্তু ছিল একেবারেই আলাদা । খেলোয়াড়েরা ‘ফিল্ডিং সেশন’ করতেন বটে, তবে নিতান্তই নামকাওয়াস্তে । ‘মিসফিল্ডিং’ বা রানআউটের সুযোগ নষ্ট করাটাকে বড় কোন ভুল হিসেবেও গণ্য করা হত না ।
ক্রিকেট বিশ্বে ফিল্ডিংটাকে একটা শিল্প হিসেবে অধিষ্টিত করতে যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি, স্যার ভিভ রিচার্ডস তাঁদের একজন । তাঁর সময়কালে অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ‘ডেডলি আর্মস’ নামে খ্যাত তাঁর হাতের কল্যাণে ।
এগুলোর মধ্য থেকে আলাদা করে বলা যায় ১৯৭৫-এ অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালটার কথা । সেই ম্যাচটায় ২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া দলের পাঁচ-পাঁচজন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছিলেন রান-আউট হয়ে । তাঁদের মাঝে তিনজন ছিলেন ‘ডেডলি আর্মস’-এর শিকার ।
অসিদের দলীয় রান তখন ৮১/১ । উইকেটে চমৎকারভাবে থিতু দুই ব্যাটসম্যান ওপেনার অ্যালান টার্নার ও অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল । পুরো ম্যাচে প্রথমবারের মত ‘লাইমলাইট’-এ আসেন ভিভ । তাঁর সরাসরি থ্রোতে রান-আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন টার্নার । দুই চ্যাপেল ভাইয়ের একজন গ্রেগকে ভিভিয়ান ফেরান বড় কোন ঝুঁকি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার আগেই, এবারও ‘ডিরেক্ট হিট’ ।
তবে ম্যাচের সবচেয়ে বড় ‘টার্নিং পয়েন্ট’ টা আসে অসিদের রান যখন ৩ উইকেটে ১৬২ । ডগ ওয়াল্টার্সকে সাথে নিয়ে জয়ের পথে বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছিলেন ইয়ান চ্যাপেল । তাঁর ব্যক্তিগত রান ছিল তখন ৬২ । ক্লাইভ লয়েডের একটা বল মিড-উইকেটের দিকে ঠেলে দিয়েই দৌড় শুরু করেন চ্যাপেল । কিন্তু যখন দেখলেন বলের দিকে তেড়ে আসছেন ভিভ, একটু সংশয়ে পড়ে গেলেন । এদিকে ভিভ করে বসলেন মিসফিল্ড । আর তা দেখে আবারও দৌড় শুরু করলেন দুই ব্যাটসম্যান ।
চিতার ক্ষিপ্রতায় পেছনে ফিরে কিছুটা পথ ছুটে গিয়ে বলটাকে কুড়িয়ে নিয়ে সমান দক্ষতায় লয়েডের দিকে ছুড়ে দিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ । দুরন্তগতিতে ছোড়া মাপা সেই ‘থ্রো’ থেকে বলটা নিয়ে অধিনায়ক লয়েড যখন স্ট্যাম্প ভাঙলেন, প্রতিপক্ষের অধিনায়ক তখনও লাইন থেকে বেশ খানিকটা দূরে ।