ছক্কায় যাদের টেস্ট শুরু!
যখন ক্রিজে নেমেছেন, পাল্লেকেলে টেস্টে কাল শ্রীলঙ্কা ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে। অভিষেক টেস্টে এমনিতেই স্নায়ুচাপ বেশি থাকে। তাঁর ওপর দলের এমন সংকটে উইকেটে নামতে হলো- ধনঞ্জয় ডি সিলভা নিশ্চয় ঠিক এরকম চাননি! স্টিভ ওকিফের মুখোমুখি প্রথম চার বলে কোনো রান নিলেন না। পরের ওভারে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকার পর আবার সেই ওকিফের সামনে ধনঞ্জয়। এবারে প্রথম বলটাই এসে খেললেন ডাউন দ্য উইকেটে, ছক্কা! টেস্ট অভিষেকের প্রথম রানই নিলেন ছয় মেরে। ধনঞ্জয় অবশ্য তখনো জানতেন না, শ্রীলঙ্কায় এই কীর্তি এর আগে আর কারও নেই। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আরও বেশ কয়েকজনের আগে, এর মধ্যে বাংলাদেশেরই আছেন তিন জন।
সেই তিন জনের মধ্যেও কত বৈপরীত্য। কীর্তিটা প্রথম করেছিলেন শফিউল, সেই ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে। ভারতের ২৪৩ রানের জবাবে বাংলাদেশও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছিল। শফিউল যখন নেমেছিলেন, ২২৮ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। অমিত মিশ্রর মুখোমুখি প্রথম পাঁচ বলে কোনো রান হলো না। পরের ওভারে আবারও মিশ্র, এবারও প্রথম বলে রান এলো না। পরের বলটা শফিউল লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটাও হলো ছয় দিয়ে।
পাঁচ বছর পর আল আমিনের গল্পটাও প্রায় কাছাকাছি। এবার মিরপুরে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, প্রথম ইনিংসেই একের পর এক উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ কোণঠাসা। আল আমিন যখন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমেছেন, বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে করেছে ২২২ রান। সেটা অবশ্য আল আমিনের অভিষেক টেস্ট ছিল না। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম টেস্টে কোনো রান করতে পারেননি বাংলাদেশ পেসার। পরের টেস্টে সেই রান এলো রাজসিকভাবে, মুখোমুখি তৃতীয় বলটাই হেরাথের বলে উড়িয়ে মারলেন।
জহুরুলের গল্পটা অনেকটাই অভিনব। টেস্ট ক্রিকেটেই এরকম কীর্তি খুব সম্ভবত কারোরই নেই। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ২০ রানই এসেছে চার আর ছয় থেকে, একবার ভাবুন তো? ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওই কীর্তিই করেছিলেন জহুরুল। প্রথম ইনিংসে কোনো রান না করেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমেছিলেন। রানের খাতাই খুলেছিলেন গ্রায়েম সোয়ানকে ছয় মেরে। কী অদ্ভুত, ওই ওভারেই আউট হয়ে পারতেন, কিন্তু সোয়ান নিজেই ক্যাচ ধরতে পারেননি। এর পর ট্রেডওয়েলের বলে চার আর ছয়ের পর আবার সোয়ানের বলে চার। শেষ পর্যন্ত ৭৬ বলে ৪৩রান করে আউট হয়েছিলেন জহুরুল। শিকারী ওই সোয়ানই।
তবে টেস্ট ক্রিকেটে আসলেই কয়জন ছয় মেরে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন, সেটা বের করা মুশকিল। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যাচ্ছে, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এই কীর্তিটা প্রথম রেকর্ডবুকে লিখিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের এরল হোমস। ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব- এমসিসি। ব্রিজটাউনে চারদিনের একটা ম্যাচে প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন হোমস। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ছয় রান করেছিলেন, সেটা ছয় মেরে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ওটাই ছিল হোমসের অভিষেক।
টেস্ট ক্রিকেটে সেটি প্রথমবার করার কীর্তিটা খুব সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার এরিক ফ্রিম্যানের। ১৯৬৮ সালে ব্রিসবেনে ভারতের সঙ্গে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ফ্রিম্যানের। আট নম্বরে নেমে ইনিংসের শুরুই করেছিলেন ছয় মেরে। শেষ পর্যন্ত ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটেও খুব বেশিদিন আলো ছড়াতে পারেননি, ১১ টেস্টেই থেমে গিয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার।
এর পর ১৯৮৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লাইল বেস্টও টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ছয় মেরে। জিম্বাবুয়ের কিথ দাবেংওয়া সেটি করেছিলেন ২০০৫ সালে। তার পর তো বাংলাদেশের ত্রয়ী শফিউল, জহুরুল ও আল আমিন।
তবে এর মধ্যে মার্ক ক্রেইগের কীর্তিটা আবার অন্যরকম। প্রথম রানই শুধু ছয় মেরে নেননি, নিউজিল্যান্ডের এই অফ স্পিনার দুই বছর আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে মুখোমুখি প্রথম বলেই মেরেছিলেন ছয়। এই কীর্তি টেস্ট ইতিহাসে আর কেউ করেছে বলে রেকর্ডবুক জানাতে পারছে না।
তবে রেকর্ডবুক জানাচ্ছে, এই আটজনের মধ্যেই কিছুটা মিল আছে। ছয় মেরে শুরু করলেও টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কেউই নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিতে পারেননি। বাংলাদেশের শফিউল ও জহুরুল তো এর মধ্যেই অনেকটা বিস্মৃতিতে চলে গেছেন, আল আমিনই শুধু এখনো আশায় আছেন। মার্ক ক্রেইগের টেস্ট ক্যারিয়ার কতটা দীর্ঘায়িত হবে, সেটা সময় বলে দেবে। তবে পূর্বসূরিরা কিন্তু ক্রেইগকে আশা দেখাচ্ছেন না!