হাল্কের ঝলক দেখার অপেক্ষায় রিও অলিম্পিক
২০১২ সাল। লন্ডন অলিম্পিকের ডিসকাস থ্রোর ফাইনাল রাউণ্ড। দুই কেজি ওজনের চাকতিটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিশালাকার এক অ্যাথলেট। একটা ছোট বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে দু'বার চক্কর খেয়ে সেই বস্তুটি ৬৯.৪৩ মিটার ছুঁড়লেন। আগের পাঁচ রাউন্ড পোল্যান্ডের পিওতর মায়াকোভস্কির পেছনে দ্বিতীয় স্থানে থাকতে হয়েছে৷ কিন্তু শেষ রাউন্ডে মায়াকোভস্কি আর ধরতে পারলেন না রবার্ট হার্টিংকে।
সোনা নিশ্চিত হতেই রবার্ট খ্যাপাটে এক দৌড় দিলেন গ্যালারির দিকে। পেছনে ছুটছেন ফটোগ্রাফাররা। থামলেন গ্যালারির কাছে গিয়ে। রুপালি পর্দার ‘ইনক্রেডিবল হালক’-এর মতো গর্জন করে দুই হাতে এক টানে ছিঁড়ে ফেললেন গায়ের ভেস্ট। সেই ছেঁড়া পোশাক নিয়েও চলল তুমুল গর্জন। কেউ একজন জার্মান পতাকা ছুঁড়ে দিতেই সেটি জড়ালেন উদোম গায়ে। পাশে তাকিয়ে দেখলেন খানিক দূরে মেয়েদের ১০০ মিটার হার্ডলসের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে ট্র্যাক। হঠাৎ সেদিকে ভোঁ-দৌড়। তুখোড় স্প্রিন্টে সব হার্ডল পার হয়েও ছুটতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত থামলেন মশাল স্তম্ভের নিচে গিয়ে। বিশ্ব পেল নতুন এক সুপার অ্যাথলেটকে। সাংবাদিকরা নাম দিলেন ‘দ্যা ইনক্রেডিবল হার্টিং’।
নিজের আগমন জানান দিয়েছিলেন ২০০৯ সালেই। ২০০৯, ২০১১ এবং ২০১৩ সালে পরপর তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। এবারের রিও-তে লন্ডনের সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে এবারের অলিম্পিকে ডোপের কালো ছায়াকে অশনী সংকেত হিসেবে দেখছেন রবার্ট।
রাশিয়ান অ্যাথলেটদের ডোপিং কেলেঙ্কারির পরেও তাঁদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়াটা ভালোভাবে দেখছেন না হাল্ক। সেজন্য স্বদেশী ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস বাখকেই দাঁড় করাচ্ছেন কাঠগড়ায়,“আমার জানামতে ডোপিংয়ের দায় তাঁর (বাখ), অ্যান্টি ডোপিং এর নয়! আমি তাঁকে নিয়ে লজ্জিত। আগেও তাঁর ব্যাপারে আমার হতাশার কথা জানিয়েছি, কিন্তু এইবারের ঘটনা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।”
ডোপের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সোচ্চার রবার্ট। ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্ব অ্যাথলেটদের তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন শুধুমাত্র তালিকায় ডোপপাপী আমেরিকান দৌড়বিদ জাস্টিন গ্যাটলিনের মনোনয়নের জন্য।
কিন্ত্রু এবার কি রিওতে আলো ছড়াতে পারবেন রবার্ট? অবশ্য নিজেকে আগামী অলিম্পিকের জন্য ফেভারিট মানতে নারাজ তিনি। মায়াকোভস্কি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসাবে আসছেন এবারের অলিম্পিকেও। তাঁর উপস্থিতিতে নিজেকে ফেভারিটের তালিকার প্রথমে রাখাকে বোকামি হিসেবেই ভাবছেন রবার্ট। গত বছরও পুরোটাই কেটেছে ইনজুরিতে। বরং ২০১২ সালেই নিজের সেরা অবস্থানে ছিলেন বলে স্বীকার করে নেন। ওই সোনা-প্রাপ্তিই তাকে পূর্ণ একজন অ্যাথলেটে রুপান্তরিত করেছে বলে বিশ্বাস করেন।
ত্রিশের কোঠায় পা রাখা এই তারকা ভালমতই উপলব্ধি করতে পারছেন, এটাই হয়তো তাঁর শেষ অলিম্পিক, “সোনা জয়টা একপাশে সরিয়ে রাখলেও জীবন নিজ গতিতে এগিয়ে যাবে। অবশ্যই আমি সোনা জিততে চাই, কিন্তু এটা কতটা ক্ষণস্থায়ী সেটা আমার জানা আছে।”
রবার্ট কি পারবেন শেষবারের মতো হাল্কের ঝলক দেখাতে? দেখার অপেক্ষায় আছে রিওর ট্র্যাক।