ফেলপসদের গায়ে এই দাগ কীসের?
গতকাল থেকে মাইকেল ফেলপসের উদোম গায়ের কিছু ছবি ঘুরে ফিরছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন লাল ছোপ ছোপ বৃত্তাকার দাগগুলো কীসের- সে নিয়েও চলছে বিস্তর ‘গবেষণা’। টুইটারে কেউ একজন মজা করে লিখেছেন, ভুল করে বোধহয় নিজের মেডেলগুলোর ওপর শুয়ে পড়েছিলেন মার্কিন জলদানব! কেউ বলছেন ‘লাভ বাইট’, কারও ধারণা নিশ্চয়ই অক্টোপাসের খপ্পরে পড়েছিলেন কোথাও সাঁতার কাটার সময়! ফেলপসের একার শরীরেই এই দাগ দেখা গেলে এমন ‘গবেষণা’ আরও রং চড়িয়ে করা যেত। তবে অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্টে যারা নিয়মিতই টিভি পর্দায় চোখ রাখছেন, তাঁরা হয়তো দেখে থাকবেন অনেক প্রতিযোগীর শরীরেই দেখা যাচ্ছে এমন কালশিটে। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, ‘কাপিং’ নামের এক বিশেষ ‘থেরাপি’র চিহ্ন এসব দাগ।
শরীরের ব্যাথা-বেদনা উপশম করার জন্য বিখ্যাত থেরাপি ‘আকুপাংচার’-এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? ‘কাপিং’ এই আকুপাংচারেরই এক বিশেষ সংস্করণ। অত্যধিক পরিশ্রমের ধকল আর শারীরিক ব্যথা নাশের জন্য হাজার বছরের পুরনো এই দাওয়াই সম্প্রতি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রীড়াবিদদের মাঝে। এ পদ্ধতিতে ছোট কাপ আকৃতির পাত্রের ভিতরের অংশ বিশেষ এক ধরণের উদ্বায়ী তরলে উষ্ণ করে সে কাপ উপুর করে রেখে দেয়া হয় শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বকের ওপর। কাচের গরম কাপ চেপে বসে যাওয়ার পর ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ওই অংশটুকুর চামড়া অনেকটা স্ফীত হয়ে ঢুকে পড়ে কাপের ভিতরের ফাঁকা জায়গায়। এই অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ রেখে দেয়ার পর কাপগুলো উঠিয়ে নেয়া হয়। তবে ওই অংশে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে সৃষ্ট লালচে দাগ থেকে যায় তিন থেকে চারদিন। বলা হয়, এর ফলে ত্বক শরীর থেকে কিছুটা ‘আলগা’ হয়ে গিয়ে চামড়ার নীচে রক্ত চলাচল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করা ক্রীড়াবিদরা বলছেন, যে কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হয় আর এর ফলে শারীরিক যে ব্যথা-বেদনা তৈরি হয়, সেসবের সর্বোত্তম দাওয়াই হতে পারে কাপিং। মার্কিন জিমন্যাস্ট অ্যালেক্স নাদোর যেমনটা বলছিলেন, “আর কোনো থেরাপিতে পয়সা খরচ করে এতোটা উপকার পাই নি।” এই জিমন্যাস্টের দাবী, গত এক বছরে তাঁর একদম ঝরঝরে থাকার গোপন রহস্যই নাকি ‘কাপিং’!
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রমীলা সাঁতারু নাটালে কফলিন, বেলারুশের সাঁতারু পাভেল সানকোভিচসহ এবারের অলিম্পিকের অনেক প্রতিযোগীই ‘কাপিং’ থেরাপির ছবি প্রকাশ করেছেন অনলাইনে।