• রিও ২০১৬
  • " />

     

    টেবিল টেনিস যখন 'মেড ইন চায়না'

    টেবিল টেনিস যখন 'মেড ইন চায়না'    

    ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক। টেবিল টেনিসে ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই একক ইভেন্ট দুটোর স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ- মোট ৬ টি পদকের সবক’টি যায় চীনের দখলে! ১৯৮৮ সালে খেলাটি অলিম্পিকে যুক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেওয়া ৩২টি পদকের ২৮টিই পেয়েছেন চীনারা। এমন অনেক ডিসিপ্লিনে একটি দেশের একক আধিপত্য কমাতে পরের অলিম্পিক থেকে করা হল নতুন নিয়ম, একটি ইভেন্টে এক দেশের দু’জনের বেশী প্রতিযোগী অংশ নিতে পারবেন না। যে কারণে গতবার থেকে আর ব্রোঞ্জ পদকটা পাওয়া হচ্ছে না চীনের, ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হচ্ছে সোনা আর রূপা নিয়েই। আরও মজার ব্যাপার, নতুন নিয়মটা কেবল দলগতভাবেই চীনের আধিপত্য কমিয়েছে, বিভিন্ন দেশের পতাকাতলে অলিম্পিক টিটিতে চীনাদের দাপট তো কমেই নি, বরং বেড়েছে। চলতি রিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ১৭২ জন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের ৪৪ জনই চীনা বংশোদ্ভূত, যাঁদের মাত্র ৬ জন চীনের প্রতিনিধি।

     

     

    নিজ দেশে পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে চীনের টিটি খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার চলটা অবশ্য নতুন নয়। ১৯৮৩ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চীনা দলটিকে স্বর্ণ জিততে সাহায্য করেছিলেন নি জিয়ালিয়ান। কিন্তু চীনে টিটিতে ক্যারিয়ার গড়তে ওটুকু কীর্তিই যথেষ্ট ছিল না। নি তাই দেশ ছাড়লেন ১৯৯১ সালে। বর্তমানে ৫৩ বছর বয়সী এই নারী এবার তৃতীয়বারের মতো অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন লুক্সমেবার্গের হয়ে।

     

    তখন যেটা ছিল ব্যতিক্রম, সেটাই এখন হয়ে উঠছে সাধারণ। রিওতে টেবিল টেনিসে অংশ নেয়া ৫৬ দেশের ২২টিতেই আছে চীনা বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়। এর মধ্যে চীন বাদে আরও পাঁচটি দেশের সব খেলোয়াড়ই চীনা।

     

    অলিম্পিকের অনেক খেলাতেই এক দেশের খেলোয়াড়রা অন্য দেশের হয়ে অংশ নিচ্ছেন। ১৩টি  ডিসিপ্লিনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে খেলোয়াড় জন্মসূত্রে প্রতিনিধিত্বকারী দেশের নাগরিক নন। তবে টিটির অংকটা একেবারেই আলাদা, এই ডিসিপ্লিনের ৩১ শতাংশ খেলোয়াড় অভিবাসী, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে চীনা বংশোদ্ভূত।

     

    টিটিতে চীনাদের এই ক্রমবর্ধমান দাপট বাড়াচ্ছে দেশটিতে খেলাটির প্রতি আগ্রহও। প্রচুর প্রতিভাবান খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত পৌছনো দূরে থাকুক, সুযোগ পাচ্ছে না প্রাদেশিক দলগুলোতেই। ফলাফল, অন্য দেশগুলো নাগরিকত্ব দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁদের। পঁচিশ বছর আগে নি জিয়ালিয়ান যখন দেশ ছাড়েন, পরিস্থিতি খুব একটা অন্যরকম ছিল না তখনও, “অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ছিল। আমি আর সেখানে টিকে থাকার সাহস করি নি।”

     

    “জাতীয় দলে যখন সুযোগ পেলাম না, হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। বয়স কম, স্বপ্নটাও তখনও সতেজ। বাইরে থেকে প্রস্তাব আসায় তাই আর ‘না’ করি নি”, ইয়ুজেনে ওয়াং শেষ পর্যন্ত কানাডায় পাড়ি জমান ২০১২ অলিম্পিকের মাত্র কিছুদিন আগে।

     

    তবে মূলত যে উদ্দেশ্যে চীনাদের এভাবে ডেকে নেয়া, সেটা অর্জন হচ্ছে সামান্যই। সাধারণত প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁদের নেয়া হয় নিজ নিজ দেশের খেলোয়াড়দের ঘষেমেজে যোগ্য করে তুলতে। কিন্তু তাঁদের সাথে বাকিদের সামর্থ্যের ফারাক এতোটাই যে, শেষ পর্যন্ত ‘প্রশিক্ষক’রাই হয়ে যাচ্ছেন প্রতিযোগী। নি যেমনটা বলছিলেন, “শেষ পর্যন্ত আমাকে খেলোয়াড়ের ভূমিকাই নিতে হল, যখন বোঝা গেলো লুস্কেমবার্গে আমার ধারেকাছেও কেউ নেই।” এবারের টিটিতে তিনি দেশটির একমাত্র প্রতিনিধিও।

     

     

    এভাবে একটি খেলায় একটি দেশের একক আধিপত্য খেলাটির ভবিষ্যতের জন্য কি হুমকি নয়? আন্তর্জাতিক টিটি ফেডারেশনের প্রধান থমাস ওয়েইকার্ট ব্যাপারটা দেখছেন একটু অন্যভাবেই, “এটা ঠিক যে একটা দেশই বারবার জিততে থাকলে সেটা একটা খেলার জন্য আশাব্যঞ্জঙ্ক কিছু নয়। কিন্তু সেটার জন্য তো আমরা চীনাদের দোষ দিতে পারি না। বরং অন্যদেরকে তাঁদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে হবে।”

     

    সমকক্ষ করে তোলার সে প্রচেষ্টা থেকেই সংস্থাটি চাইছে চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে একটি নতুন প্রকল্প শুরু করতে যেখানে অন্য দেশের তরুণ খেলোয়াড়দের পর্যায়ক্রমে চীনে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তাতেও টিটির গা থেকে চীনা গন্ধ কতোটা যাবে বলা কঠিন, প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পের অনানুষ্ঠানিক নামই যে ‘মেড ইন চায়না’!