"নতুন" বুফন পেয়ে গেছে ইতালি!
*
ছেলেটির মা প্রতিদিন খেলার মাঠে জন্মসনদ নিয়ে হাজির হতেন। ছেলের বাড়ন্ত শরীর মহা ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিল তাঁকে। সমবয়সীদের চেয়ে অনেকটাই লম্বা থাকায় স্থানীয় লিগের প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা প্রতিনিয়তই তাঁর বয়স নিয়ে সন্দেহ করত। এত বাধার পরেও মা মারিবেলার হাত ধরে মাঠে এসে খেলা চালিয়ে যেত ১১ বছর বয়সী জিয়ানলুইজি ডোনারোমা। একটাই স্বপ্ন, ইতালির হয়ে মাঠে নামা।
*
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬। ইতালি-ফ্রান্স প্রীতি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলার এক মিনিট পার হয়েছে মাত্র। সহকারী রেফারি খেলোয়াড় বদলের নির্দেশনা দেয়ার পর গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন ডাগআউটের দিকে। বুফনের সাথে হাত মিলিয়ে মাঠে প্রবেশ করলেন সেই ডোনারোমা। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ইতালির জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হল সদ্য কৈশোর পেরোনো এসি মিলানের এই গোলরক্ষকের। ১৯১১ সালের পর এই প্রথম এত কম বয়সী খেলোয়াড়ের অভিষেক দেখল ইতালি।
বড় ভাই আন্তোনিয়োকে খেলতে দেখেই স্বপ্নের বীজ বপন হয়েছিল। জন্মস্থান নেপলসে ছোটকাল থেকেই ফুটবলের হাতেখড়ি। এসি মিলানের একাডেমী স্কাউট যেবার আন্তোনিয়োর সাথে চুক্তি করতে আসল, সেদিনের পর থেকে ফুটবলকেই নিজের জীবনের ধ্রুবতারা করার সিদ্ধান্ত নিলেন ছোট্ট ডোনারোমা। চাচা আরনেস্তোর সাথে গোলকিপিংয়ের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলেন, আশেপাশের স্থানীয় ক্লাবগুলোর নজরেও চলে আসলেন দ্রুতই।
*
গতবছর সিরি আ র ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলকিপার হিসাবে এসি মিলানের হয়ে অভিষিক্ত হয়ে করেন নতুন রেকর্ড। সাড়ে ৬ ফুট উচ্চতার এই তরুণের খেলায় মুগ্ধ মিলানের দর্শক। দারুণ কিছু সেভ করে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আগমন বার্তাও দিয়েছেন এরই মাঝে।
জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া ম্যাচেই হয়ত জীবনের সেরা প্রশংসা বাক্যটি শুনে ফেলেছেন। কিংবদন্তি গোলকিপার বুফন নিজের উত্তরসূরি হিসেবে উচ্চারণ করেছেন ডোনারোমার নাম। ৪০ এর ঘরে পা রাখা এই বুফন ২০ বছর আগে যখন অভিষিক্ত হন, তখন ডোনারোমার জন্মই হয়নি!
নিজের অভিষেকের ৪৮৪ দিন পর জন্ম নেয়া এই তরুণের মাঝে নিজে ছায়া দেখতে পাচ্ছেন বুফন, “এই ছেলেটি ইতালির ভবিষ্যৎ। আমার উত্তরসূরি যদি কেউ হতে পারে তাহলে ডোনারোমাই হবে।” মুগ্ধ কোচ জিয়াম্পিয়েরো ভেঞ্চুরাও, “সে দারুণ প্রতিভাবান। ভবিষ্যতে সে দলকে অনেক বেশি কিছু দিতে পারবে বলে আশা করছি।”
ছোটবেলার হিরো বুফনের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে অনেকটা আবেগাপ্লুত ডোনারোমা, “বুফন আমাকে বলেছিল মাঠে নেমে নিজের মন ভরে খেলতে, কোন ধরনের চাপ না নিতে। এটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, আমি কোচকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই সুযোগটি করে দেয়ার জন্য।”
শুরুটা তো স্বপ্নের মতই হল। তবে নিজের ক্যারিয়ারে প্রতি মুহূর্তে বুফনের সাথে তুলনার মুখোমুখি হতে হবে ডোনারোমাকে। এত প্রাপ্তি, এত ভালোবাসা; বুফনের ক্যারিয়ারের উচ্চতাকে স্পর্শ করতে চাইলে এই কিশোরকে পাড়ি দিতে হবে অনেকটা রাস্তা।